• সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪

মুস্তাফিজের কাটার ধনীদের হায়রোগ্লিফিক্স-ইতিহাসের নয়া অধ্যায়ে ভারতকে প্যাদানি


প্রকাশিত: ১২:৪৩ এএম, ২২ জুন ১৫ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৬৭ বার

স্পোর্টস রিপোর্টার.ঢাকা:  অ্যালান উইলকিনস যখন ধারাভাষ্যে ক্যারিয়ার শুরু করেন, তারও ১১ বছর পর জন্ম মুস্তাফিজুর রহমানের। খ্যাতিmustafij--www.jatirkhantha.com.bdমান এই ভাষ্যকার আজ যেন মুগ্ধ। বিস্মিত। বিস্ময় ধরে রাখতে না পেরে বলেই ফেললেন, ‘এই ছেলে তো দেখি কৌশলের প্যান্ডোরার বাক্স নিয়ে হাজির!’
গতি তাঁর অস্ত্র নয়। মূল অস্ত্র কাটার, স্লোয়ার আর সুইং। বিশেষ করে কাটার। এই কাটার আর স্লোয়ারে আরও ধীরে ধীরে কচুকাটা হলো ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে রেকর্ড বইয়ের পাতায় ১৯ বছর বয়সী বাঁ হাতি পেসার ইতিহাসে লিখিয়ে ফেললেন নাম। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি এত দিন ছিল কেবল জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান ভিটোরির। মুস্তাফিজ অবশ্য তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ৬ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়লেন। আগের দুটো কীর্তি মাশরাফি বিন মুর্তজা ও রুবেল হোসেনের। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচেই ১১ উইকেট পাওয়া প্রথম ক্রিকেটার আমাদের এই মুস্তাফিজই।
অভিষেক বাদও দিলে টানা দুই ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি এর আগে ছিল মাত্র নয়জন বোলারের। ওয়াকার ইউনুস এই কীর্তি করে দেখিয়েছেন তিনবার, এর মধ্যে কেবল ওয়াকার টানা তিন ইনিংসে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ক্যারিয়ারের শুরুতেই রেকর্ড বইয়ের পাতায় ওয়াকার-আকিব জাভেদ-সাকলায়েন মুশতাকদের পাশে লেখালেন নাম। সামনে উজ্জ্বল পথের হাতছানি।
মুস্তাফিজের কাটার ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য হায়রোগ্লিফিক্সের ধাঁধা হয়ে উঠেছে। প্রথম ওয়ানডের পর না হয় অজুহাত দিতে পারত ভারত, ‘ও যে একাদশে থাকবে, এটাই তো আমরা জানতাম না।’ তাও ঠিক। কিন্তু প্রথম ম্যাচের পর শুক্র আর শনি-এই ৪৮ ঘণ্টায় ভারত সবচেয়ে বেশি কাটাছেঁড়া করেছে তাঁর বোলিং নিয়েই। নানা অ্যাঙ্গেলের ভিডিও ফুটেজ দেখে দেখে বের করা চেষ্টা করা হয়েছে ধাঁধার উত্তর।
একেবারে দ্বিতীয় বলে রোহিত শর্মাকে শূন্য রানে ফেরালেন, ওয়ানডের দুটো ডাবল সেঞ্চুরির মালিককে দিয়েই অভিষেকে উইকেটে খাতা খুলেছিলেন। কিন্তু ৫ ওভারের প্রথম স্পেলে ৩২ রান দিয়ে উইকেট ওই একটাই। তবে কি ভারত সত্যিই ধরে ফেলেছে মুস্তাফিজ ধাঁধা? বিরাট কোহলি তো ওই কাটারেই একবার ছক্কাও হাঁকালেন।

অভিজ্ঞ অধিনায়ক মাশরাফি এবার তিরটাকে তূণে ভরিয়ে রাখলেন। আবার বের করলেন ব্যাটিং পাওয়ার প্লের প্রথম ওভারে। ফলাফল? পাওয়ার প্লের ৩ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট!
রায়না-ধোনির জুটিটা জমে উঠেছিল দারুণ। তুলে ফেলেছিল ৫৩ রান। এবারই আসল পাশার দান। পাওয়ার প্লের ৫ ওভারে ভারত ঝড় তোলা মানেই সেই দানে হেরে যাওয়া বাংলাদেশের। তৃতীয় বলেই রায়নাকে তুলে নিলেন। সেই কাটারে। প্রথম ম্যাচে রায়না প্লেড অন হয়েছিলেন। এবার ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে। পরের বলেই জাদেজার বিপক্ষে উঠল এলবিডব্লুর জোরালো আবেদন। জাদেজা বেঁচে গেলেন সেই যাত্রায়। পাওয়ার প্লের প্রথম ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ভারত তুলল ২ রান। পাওয়ার প্লেতে নিজের দ্বিতীয় ওভারে ২ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। তবে বেশ ভোগালেন জাদেজা আর ধোনিকে। অস্ত্র সেই কাটার!
আসল জাদু দেখালেন পাওয়ার প্লেতে নিজের তৃতীয় ওভারে। গত ম্যাচে ধোনির ধাক্কায় একেবারে সাজঘরে ফিরেছিলেন। ধোনিকেও খানিক পরে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন সাকিব। ‘লড়াই’টা তাই হয়নি। এবার দারুণ সুযোগ। একদিকে ধোনি। প্রথম ম্যাচে দলের হাল ধরতে কেন ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে ওপরে নিয়ে এলেন না-এই সমালোচনার জবাব দিতে ভারতীয় অধিনায়ক নেমেছেন চারে, ৫২ ম্যাচ পর। তুলে ফেলেছেন ৪৭-ও। তৃতীয় বলে স্ট্রাইকে ধোনি। সেই কাটার, সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া গতির বিভ্রান্তি। ৪০০-র বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১৪ হাজারেরও বেশি রান তোলার অভিজ্ঞতায় ধনী সেই ধোনি বুঝতেই পারলেন না। আগেই চালিয়ে দিলেন ব্যাট। সৌম্য সরকারের হাতে তালুবন্দী হওয়ার আগে ধোনি কেবল অসহায় তাকিয়ে দেখলেন।
উইকেট উদযাপনে তেমন বাড়াবাড়ি করেন না। সেখানেও আশ্চর্য সরলতা। কিন্তু ধোনির উইকেট পাওয়ার পর মুস্তাফিজকে কি একটু বেশিই উল্লসিত দেখা গেল?
কেন উল্লাসের বাড়াবাড়ি করেন না, সেটা পরের বলেই বুঝিয়ে দিলেন। বেশি ঝাঁপাঝাঁপি করে শক্তিক্ষয় করে লাভ কী? পরের বলেই তো ফিরে যেতে হবে বোলিং মার্কে। ফিরলেন। এবং ফিরে আবারও উইকেট! নিজের সর্বশেষ চার ইনিংসে তৃতীয় শূন্য মারার কৃতিত্ব নিয়ে ফিরলেন অক্ষর প্যাটেল। এবারেরটা স্বর্ণ-হংস। মুস্তাফিজ আবারও হ্যাটট্রিকের সামনে, প্রথম ম্যাচের মতোই।
না, এবারও হ্যাটট্রিকটা হলো না। কিন্তু তাঁর অসাধারণ বোলিং আর ওপাশ থেকে মাশরাফির যোগ্য সাহচর্যে পাওয়ার প্লের বাজিটায় হেরে ভারত ৩ উইকেট হারিয়ে তুলল মাত্র ১৭ রান। ৫ ওভারে ৩১ রানে ১ উইকেট থেকে মুস্তাফিজের বোলিং ফিগার দাঁড়াল ৮-০-৩৮-৪। পাওয়ার প্লেতে ৬ রানে ৩ উইকেট! কাজটা তখনো শেষ হয়নি। নিজের পরের ওভারে আবার অফকাটারে ফেরালেন অশ্বিনকে। প্রথম ম্যাচে ফিরতি স্পেলে ৫ বলের মধ্যে ৩ উইকেট নিয়েছেন। এবার ১০ বলের মধ্যে ৩ উইকেট। নিজের দশম আর শেষ ওভারেও যথেষ্ট ভোগালেন। দুবার ব্যাটসম্যানের ব্যাটে বাতাস লাগিয়ে বেরিয়ে গেল বল। পঞ্চম বলটা করতেই বৃষ্টি।
প্রথম ম্যাচে চারটি বল করা হয়নি শেষ বলটিতে রবীন্দ্র জাদেজাকে করলেন বোল্ড। ঠাঁই করে নিলেন ইতিহাসের অমর এক অধ্যায়ে।
তা তিনি পান আর না-ই পান, বাংলাদেশের মানুষদের মনে ভালোবাসা আর ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মনে আতঙ্কের একটা চিরস্থায়ী জায়গা যে মুস্তাফিজ করে নিয়েছেন, সেটা বলে না দিলেও চলছে!