মুশফিকের স্বপ্ন ২০১৬-পাঁচ টেস্ট জয়
মুশফিকুর রহিম : ২০১৫ একটা রঙিন বছর। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ঘরের মাঠের জিম্বাবুয়ে সিরিজ—রঙিন পোশাকে প্রতিটি উপলক্ষেই উপচে পড়া আনন্দে ভেসেছে দেশ। টি-টোয়েন্টির আধিপত্যের নতুন বছরে সেই ধারা ধরে রাখার প্রতিজ্ঞা আছে। আছে নতুন একটা চাওয়াও। বিশ্ব ক্রিকেটে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে টেস্ট জাতি হিসেবে।
আত্মবিশ্বাসের সলতেটাকে উসকে দিতে প্রয়োজনীয় রসদ পাওয়া যাচ্ছে গত বছর থেকেই। পাঁচ টেস্ট খেলে মাত্র একটিতে হার, বাকি চারটিতেই ড্র। বলতে পারেন এই চার ড্রয়ের তিনটিই তো ছিল বৃষ্টির অবদানধন্য! খেলে ড্র শুধু পাকিস্তানের বিপক্ষে বছরের প্রথম টেস্টে। কিন্তু খুলনার ওই টেস্টটিই কি সম্ভাবনার আকাশে নতুন দিগন্তরেখা আঁকে না? দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম-ইমরুলের ৩১২ রানের রেকর্ড ওপেনিং জুটির সঙ্গে তামিমের ডাবল সেঞ্চুরি আর ইমরুলের দেড় শ, ওই টেস্টেই তাইজুলের ৬ উইকেট বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের টেস্ট-সামর্থ্যটাও তো জানান দিয়েছে নতুন করে?
‘ক্রিকেট জাতি হিসেবে দারুণ একটা বছর পার করলাম আমরা। ইনশা আল্লাহ এই ধারাবাহিকতা নতুন বছরেও ধরে রাখতে চাই।’ অবশ্য টেস্ট অধিনায়ক বলে শুধু টেস্ট-ভাবনাতেই আচ্ছন্ন নন তিনি। বছরের প্রথম টেস্ট বাংলাদেশ খেলবে আগস্টে। তার আগে আছে এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও একটা টি-টোয়েন্টি সিরিজ হতে পারে। এই চ্যালেঞ্জগুলো ধাপে ধাপে উতরাতে চান মুশফিক, ‘২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট দুই ধরনের চ্যালেঞ্জেরই মুখোমুখি হব আমরা। এর কোনোটাই অগুরুত্বপূর্ণ নয়। ভালো দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে টপকাতে হবে সব চ্যালেঞ্জই।’
বর্তমান ‘ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা’ (এফটিপি) অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ২০১৬ সালেও বাংলাদেশ দলের অন্তত পাঁচটি টেস্ট খেলা চূড়ান্ত। তবে ২০১৫-এর সঙ্গে পার্থক্য—গত বছর সব টেস্টই বাংলাদেশ খেলেছে ঘরের মাঠে। এবার পাঁচ টেস্টের তিনটিই দেশের বাইরে, দুটি দেশে। মুশফিকুর রহিম তবু আশাবাদী। ওয়ানডেতে ক্রিকেট-বিশ্বের সমীহ আদায়ের পর আজ থেকে শুরু ২০১৬ সালকে তিনি দেখছেন টেস্ট জাতি হিসেবে বিশ্ব ক্রিকেটের স্বীকৃতি আদায়ের বছর হিসেবে, ‘এ বছর দেশের বাইরের খেলাগুলোই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার অপেক্ষায় আছি। নতুন বছরে আমাদের লক্ষ্য, টেস্টে আরও ভালো করা। টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে ব্যাটে-বলে সবার কাছে গত বছরের ভালো পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা আশা করছি।’
সব ঠিক থাকলে বছরের প্রথম টেস্টটা বাংলাদেশ খেলবে ভারতে গিয়ে ভারতের সঙ্গে। ২০০০ সালে টেস্ট অভিষেকের পর ভারতের মাটিতে এটাই বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট হবে। সেদিক দিয়ে ‘ঐতিহাসিক টেস্টই’ বলা যায় এটিকে। অক্টোবরে ইংল্যান্ড আসবে বাংলাদেশ সফরে। তিন ওয়ানডে এবং দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সঙ্গে ওই সিরিজেও আছে দুটি টেস্ট। বছরের শেষ সিরিজের টেস্ট দুটি খেলতে খেলতে সম্ভবত ২০১৭ সাল এসে পড়বে। ডিসেম্বর-জানুয়ারির নিউজিল্যান্ড সফরে দুটি টেস্টই গিয়ে পড়তে পারে জানুয়ারি মাসে। তার আগে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হবে জানুয়ারিতে।
অস্ট্রেলিয়ার কাছে গত বছরের দুটি টেস্ট পাওনা, কিন্তু সেগুলো এ বছরও পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এফটিপির বাইরে নতুন আর কোনো টেস্টও যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে যে কয়টি টেস্টই হোক না কেন, সেগুলোতে মাথা উঁচু করেই খেলতে চান মুশফিক, ‘গত বছরটা আমাদের জন্য ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটে উত্থানের বছর। নতুন বছরে যে কয়টি টেস্টই খেলব, চেষ্টা থাকবে টেস্ট জাতি হিসেবে নিজেদের ভালোভাবে প্রমাণ করার।’
আর ব্যক্তিগত লক্ষ্য? এই প্রশ্নে নিশ্চুপই থাকতে চাইলেন মুশফিক, ‘ব্যক্তিগত লক্ষ্য তো নিশ্চয়ই থাকবে। তবে সেটা আপাতত ব্যক্তিগত পর্যায়েই থাকুক।’২০১৪ ছিল হতাশার বছর। ২০১৫ সেই হতাশা ভুলিয়ে দেখিয়েছে সোনালি দিনের স্বপ্ন। ২০১৬ কতটা পূরণ করবে সেই স্বপ্ন?