মুক্তির রজনী শবেবরাত-এই রাত আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার পাপমোচনের
এস এম খলিল বাবু. রংপুর: শবেবরাত-মুক্তির রজনী। রবাতের আগমন মানে রমজান সমাগত। এই রাত ক্ষমা পাওয়ার। পাপমোচনের। আল্লাহর কাছে নিজেকে সপে দেওয়ার। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. বলেন, নবিজি সা. বলেন, আল্লাহ তায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং আল্লাহর সঙ্গে শরিককারী ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।সহিহ ইবনে হিব্বান : ১৩/৪৮১ক্ষমা ও মুক্তির এই রাতে আমাদের আমল কী হবে? হজরত মহানবি সা. কী আমল করতেন এই রাতে?
হজরত আলা ইবনুল হারিস রহ. সূত্রে হজরত আয়েশা রা. বলেন, একবার নবিজি সা. রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়তো মত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুল নাড়া দিলাম। নবিজির বৃদ্ধাঙ্গুল নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা রা. অথবা বলেছেন, হে হুমাইরা, তোমার কী এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না। নবিজি জানতে চাইলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত?
আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। নবিজি সা. তখন বললেন, এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত (শাবানের ১৪ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। (শুআবুল ইমান, বাইহাকি ৩/৩৮২-৩৬৮)
ইমাম বাইহাকি রহ. এই হাদিসটি বর্ণনার পর লিখেছেন, এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরিয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। রাতে নামাজরে সঙ্গে সঙ্গে পরদিন নফল রোজা রাখারও তাগিদ আছে হাদিসে।
ইবনে মাজাহ শরিফে আছে, হজরত আলি ইবনে আবু তালেব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবিজি বলেছেন, ১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আকাশে আসেন এবং বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোনো রিজিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব। এভাবে ফজর পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৩৮৪)
আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার জন্য এ রাতে নফল নামাজ, তওবা-ইসতিগফার, কোরানুল কারিমের তেলাওয়াত, জিকির, দুরুদ শরিফ পাঠ ইত্যাদি পড়া যেতে পারে। নফল নামাজের নির্ধারিত কোনো পরিমাণ নেই। যত বেশি পড়া যায় পড়তে পারবে। এ রাতে নামাজে সুরা মিলানোর ব্যাপারে নির্ধারিত কোনো নিয়ম নেই। অন্য নফল নামাজের মতো যেকোনো সুরা পড়তে পারবে।