মুক্তিযোদ্ধাদের ৮৪ কোটি টাকা লুটপাট
স্টাফ রিপোর্টার : মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিযুক্তরা সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ৮৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা নিয়ে এবার দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাধারন মুক্তিযোদ্ধারা।বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) স্মারকলিপি দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল এফ এফ ফাউন্ডেশন’। একই দাবিতে কমিশনের সামনে সংগঠনটি মানববন্ধনও করেছে।
রোববার (২২ এপ্রিল) সকালে মানববন্ধন শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল কমিশনে এই স্মারকলিপি দেন। দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মুহাম্মদ মুনীর চৌধুরী স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে ২০০৬-০৭ সাল এবং ২০০৭-০৮ থেকে ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গচ্ছিত টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
এরপর সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ২০১৪ ও ২০১৬ সালে হাইকোর্টে পৃথক দু’টি রিট দায়ের করা হয়। পরে ২০১৭ সালের ৩১ মে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশনা দিয়ে আদেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির’ সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাতদিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে খোদ দুদকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা করার কথা উল্লেখ করা হয় স্মারকলিপিতে।
মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে জালাল উদ্দিন (বিচ্ছু জালাল), আব্দুল মতিন সেন্টু ও রুহুল আমিন মজুমদার এবং মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের নেতা বদরুন নাহার ভূইয়া কমিশনে এ স্মারকলিপি জমা দেন। এরআগে ন্যাশনাল এফ এফ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এস এম জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে ২০০৬-০৭ সালে দায়িত্বপ্রাপ্ত আব্দুল আহাদ চৌধুরী, রেদোয়ান আহমেদ, কবির হোসেন, শাহ আলম চৌধুরী গংদের এবং ২০০৭-০৮ সাল থেকে ২০১৪-১৫ সালে সংসদের চেয়ারম্যান হেলাল মোরশেদ খান ও মহাসচিব এমদাদ হোসেন মতিন গংদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকের কাছে দাবি জানানো হয়। তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিযুক্তরা সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ৮৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আইনজীবী সদরুল হক সুধা জানিয়েছেন।
মানববন্ধনে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দুর্নীতি করেছে। এই দুর্নীতির মূল উপাদান ছিলো গত সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আরোহণের দিন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সারা দেশে আতশবাজি ফাটিয়ে তাদের অবস্থান জানান দিয়েছিল। এরপর সরকারের কাছ থেকে ১১ থেকে ১২ কোটি টাকা তারা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। যেখানে একটি গাড়ি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চলছে পারে সেখানে তারা পাঁচ/সাতটি গাড়ির টাকা নিয়েছেন। এর আগেও কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে। তারা বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন’।
মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন (বিচ্ছু জালাল) বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি স্বপ্নের বাংলাদেশে জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক এবং দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে। আমরা সত্যকে সামনে তুলে ধরতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম। হাইকোর্ট দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন সেই মামলা গ্রহণ করার জন্য। অত্যন্ত পরিতাপের ও দুঃখের বিষয় দুদকের চেয়ারম্যান এখনও মামলা গ্রহণ করেননি’।