`মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা ক্ষুদ্র হলেও অর্থ ও অস্ত্রে অনেক শক্তি অর্জন করেছে’
বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা : বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র রুখতে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করছেন সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকরা। শনিবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে সম্মিলিত নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় কনভেনশনে বক্তারা এ মন্তব্য করেন।
বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা ক্ষুদ্র হলে অর্থ ও অস্ত্রে অনেক শক্তি অর্জন করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তারা নৃশংসতা দেখিয়েছে, এখন তারা ও তাদের দোসররা পেট্রোলবোমা মেরে একই ধরনের নৃশংসতা চালাচ্ছে। এই সমাজ বিনাশী জঙ্গি অপশক্তিকে দমন না করা পর্যন্ত শান্তি আসবে না। পরাজিতদের কৌশল ঐক্য বিনষ্ট করে জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে রাখা। নাগরিকদের দায়িত্ব পুনরায় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় গণতন্ত্রের বিকাশে সংশ্লিষ্ট সকল রাজনৈতিক শক্তিকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।
সরকার, জনগণ, রাজনীতিবিদ, শ্রমজীবী, পেশাজীবীদের প্রতি জাতীয় সংহতির আহ্বান জানিয়ে নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক কাজী খলিকুজ্জমান বলেন, টানা ৮৩ দিন হরতাল-অবরোধের নামে চলমান সহিংসতায় দেশের অর্থনীতি ও শিক্ষা ধ্বসেংর পথে। পরিবহন ব্যবস্থা সংকটাপন্ন, ব্যবসা বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে। উৎপাদন আমদানি রপ্তানি তথা জাতীয় আয়ের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দেশকে গড়ে তোলার পরিবর্তে ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়ায় ইন্ধন জোগানো হচ্ছে। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সচেতন নাগরিক সমাজ নিরব ভূমিকা পালন করতে পারে না।
জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের অর্থের উৎস বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রকে নাগরিকের জানমাল সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনীতির আবরণে কোনো সংগঠন জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকলে বা জঙ্গিবাদের ম“ দিলে এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। সন্ত্রাস-সহিংসতার ম“দাতাদের চিহ্নিত করে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।
সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, নাগরিক আক্রান্ত হয়েছে, এজন্য নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। ষড়যন্ত্রের সুতিকাগার মুক্তিযুদ্ধেই ছিলো। এজন্য ষড়যন্ত্র থেকে আমরা আজও মুক্তি পাইনি।
একাত্তরের আগুন আর আজকের আগুনের মধ্যে তফ্যাৎ নেই। সেদিন বস্তিতে আগুন জ্বলেছে আজ ঘরে ঘরে আগুন জ্বলছে। সেদিন রাজাকার ছিল এখন তাদের শীষ্য নব্য রাজাকার হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যেমন মুক্তি যোদ্ধা, তেমনি রাজাকারের শীষ্যরাও নব্য রাজাকার। আমাদের সবাইকে গ্রামে-গঞ্জে একত্র থাকতে হবে। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। এদের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সমন্ন করে নব্য রাজাকারদের নেতৃত্বহীন করতে হবে।
ইন্সটিটিউট অব কনফ্লিট, ল’স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্ট্রাডিজ (আইসিএলডিএস) এর নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অবঃ) আব্দুর রশীদ বলেছেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে। ৫টি পেট্রোল বোমা মেরে তা ছিনিয়ে নিয়ে যাবে তা হতে দেওয়া যায় না। স্বাধীনতার সময়ই বর্বরতা দেখেছি, এখনও দেখছি। মানুষ হত্যা করে রাজনীতি হয় না। জনগণকে বাদ দিয়ে পেট্রল বোমা নির্ভর কোনো রাজনীতি টিকে থাকতে পারে না।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পেট্রোল বোমা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না। এগুলো যারা করছে তারা সন্তাসী ও জঙ্গী। এদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সামনে সিটি নির্বাচন এসব কর্মকাণ্ড থেকে ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারকেও নির্বাচনী ইসতেহার অনুয়ায়ী জনগণের স্বার্থরক্ষার জন্য আরও বেশি মনযোগী হতে হবে।