‘মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়া উচিত’
কক্সবাজার প্রতিনিধি : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান রোহিঙ্গা নির্যাতনকে গণহত্যার শামিল বলে মনে করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি যেভাবে বর্বর নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা ও অগ্নিসংযোগ চলছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এ জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া উচিত।
সোমবার বেলা ১১টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কাজী রিয়াজুল হক এ কথা বলেন। গতকাল রোববার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং, বালুখালী এবং টেকনাফের নয়াপাড়া ও লেদা এলাকার কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখেন।
সংবাদ সম্মেলনে সে অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, মিয়ানমারের বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, ঘুমন্ত মানুষের প্রতি বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে, মেয়েদের তুলে নেওয়া হয়েছে—তা সভ্য সমাজে হয় না।
একটা ক্ষুদ্র জাতির ওপর এ রকম নির্যাতন, হত্যা-ধর্ষণ ও ঘরে ঘরে আগুন গণহত্যার শামিল। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলকে জানানো হয়েছিল। এখন আন্তর্জাতিক মহল রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন বন্ধ করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিচ্ছে। তবুও মিয়ানমার দমন-পীড়ন বন্ধ করছে না।
তিনি বলেন, এর ফলে ইতিমধ্যে তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। আরও অনেক রোহিঙ্গা সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। আগে থেকে কক্সবাজারে বসতি করেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। মোট সাত-আট লাখ রোহিঙ্গার ভারে স্থানীয় বাসিন্দারা হিমশিম খাচ্ছে। তাদেরও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, বিপুল রোহিঙ্গার এত বড় বোঝা বহন করার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। তবুও মানবিক দিক বিবেচনা করে সরকার আট লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে। এখন মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করে রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করতে হবে। জাতিসংঘ, ওআইসি, আশিয়ানসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বকে তৎপর করতে হবে।
তার ভাষায়, আশিয়ানের দুই প্রভাবশালী সদস্য দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া সক্রিয় হয়েছে। ভারত ও চীনকে কাজে লাগাতে হবে। তারা মিয়ানমারকে গণহত্যা বন্ধের ব্যাপারে বোঝাতে পারে। এত কিছুর পরও যদি কোনো কাজ না হয়, তাহলে গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা যেতে পারে।
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ২৪ আগস্ট দুপুরে ইয়াঙ্গুনে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ হলো। তার কয়েক ঘণ্টা পর রাখাইন রাজ্যের পশ্চিমাংশে একসঙ্গে ৩০টির বেশি সীমান্ত চৌকিতে হামলা পরিকল্পিত কিনা, তা নিয়ে ভাবতে হবে। কারা এই হামলা করল?
তিনি বলেন, মিয়ানমারে বিপুল সম্পদ পড়ে আছে। সেই সম্পদের দিকে অনেকের নজর পড়েছে। এ জন্য রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা রাখাইন রাজ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে রোহিঙ্গারা উগ্রপন্থী ভূমিকা নিচ্ছে। রোহিঙ্গারা নিজ রাজ্যে চলাফেরা করতে পারে না। বিয়েশাদি, চাকরি, লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুই করতে পারে না। স্বাস্থ্যসেবাও নাই। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে কফি আনার কমিশনের প্রতিবেদনে জোর দেয়া হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তিন দফা সুপারিশ তুলে ধরেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। এগুলো হলো—কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন দ্রুত বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ প্রয়োগ, রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা যারা করেছে তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করা এবং ঢুকে পড়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন। নইলে রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়বে। তখন জননিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।
এ সময় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নুরুন নাহার ওসমানী, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আনোয়ারুল নাসের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।