মিনার চৌধুরী ৭ দিনের রিমান্ডে
বিকেল সোয়া চারটার দিকে মিনারকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। এ সময় তাঁর পক্ষে অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে ১৫ জন আইনজীবী জামিনের আবেদন জানান। আদালত জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন এবং পুলিশকে অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন।
এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার ফেনীর সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফকে পাঁচ দিনের এবং ফেনী পৌরসভার বিরিঞ্চি এলাকার যুবলীগের কর্মী মো. সজীবকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন আদালত।
গতকাল মিনার চৌধুরীকে ঢাকার সেনানিবাস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। খবর পেয়ে রাতেই ফেনী পুলিশের একটি দল তাঁকে ঢাকা থেকে ফেনী নিয়ে আসে।
আবিদ স্থানীয় সাংসদ নিজাম হাজারীর মামাতো ভাই৷ তাঁর মা লায়লা জেসমিন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক৷ স্থানীয় লোকজন জানান, আবিদকে এর আগে ফেনীতে ছাত্রদল-যুবদলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেলেও চলাফেরা করতেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের সঙ্গে৷
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে আবিদ বলেছেন, ২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় থেকে জাহিদ চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একরামকে হত্যার আগের রাতে (১৯ মে) সাড়ে আটটা থেকে নয়টায় শহরের মিজান রোডের সালাম কমিউনিটি সেন্টারে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে তিনি (আবিদ), জাহিদ চৌধুরী, রুটি সোহেল, বক্কর, শিফাত, শিপন, অনীক, শানান উপস্থিত ছিলেন। শেষ মুহূর্তে কাউন্সিলর শিবলু উপস্থিত হন। বৈঠকে একরাম চেয়ারম্যানকে অপমান-অপদস্থ করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর রাত সাড়ে ১১টায় শহরের মিজান ময়দানে তাঁকেসহ রুটি সোহেল ও বক্করকে ডেকে পাঠান জাহিদ চৌধুরী৷ তখন একরামকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানান জাহিদ৷ রাতেই এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তাঁদের কাছে তিনটি পিস্তল পাঠান জাহিদ চৌধুরী৷
আবিদ জানান, হামলায় ৬০ থেকে ৭০ জন অংশ নেয়৷ এদের বেশির ভাগই জানত, একরামকে অপদস্থ করা হবে৷ ঘটনার দিন ২০ মে সকাল থেকে একরামের গতিবিধি লক্ষ করা হচ্ছিল। হামলার সময় জাহিদ ছিলেন ঘটনাস্থলের অদূরে মিয়ার দোকানে। আবিদ নিজে আফজলের রহমান সড়কের মাথায় ছিলেন। সেখানে শিপন ও শিফাতও ছিলেন। এ রকম চার-পাঁচটি স্থানে তাঁরা ভাগ হয়ে অবস্থান নেন। একরামের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর একটি ইজিবাইক দিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। তা পাশ কাটতে গিয়ে একরামের গাড়ি সড়ক বিভাজকের ওপর উঠে আটকে যায়। তখন এলোপাতাড়ি হামলা করে গাড়ি ভাঙচুর শুরু হয়। আবিদসহ কয়েকজন গিয়ে গুলি করেন। পরে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়৷
আবিদ জানান, ঘটনার পর পালানোর সময় তিনি জাহিদ চৌধুরী, কাউন্সিলর শিবলু ও হুমায়ুনকে দেখেছেন শিবলুর বাড়ির সামনে দাঁড়ানো৷
একরামকে হত্যার পর আত্মরক্ষার জন্য আবিদ কী করেছেন—আদালতের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি নিজাম হাজারীকে ফোন করেন৷ কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। জাহাঙ্গীর আদেলকেও ফোন করেন, তিনিও ফোন ধরেননি।
অভিযোগ অস্বীকার নিজাম হাজারীর: তদন্তে জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেন, জাহিদের সঙ্গে আবিদ, রুটি সোহেলসহ সরাসরি খুনে অংশ নেওয়া কয়েকজনের মুঠোফোনে যোগাযোগের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। একই সঙ্গে জাহিদ এবং পৌর কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল্লাহ হিল বাকী শিবলুর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আদেলের মুঠোফোনে যোগাযোগের তথ্য মিলেছে। আর, সাংসদ নিজামের সঙ্গে ঘটনার আগের রাতে আদেলের একাধিকবার কথা হয়েছে। এসব নেতার মুঠোফোনের কলের তালিকা পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান৷ অবশ্য আদেল এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিষয়গুলো পরিষ্কার হচ্ছে না। আদেলকে পুিলশ খুঁজছে৷
ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম হাজারী ফেনী শহরের বাসাতেই রয়েছেন। গতকাল তিনি শহরের ট্রাংক রোডের লাভ মার্কেটে তাঁর কার্যালয়ে বসেছিলেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন৷ এ সময় তিনি একরাম হত্যায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। নিজাম হাজারী বলেন, এ ঘটনায় যে-ই জড়িত থাকুক না কেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য তাঁর দলের পক্ষ থেকে পুলিশকে বলা হয়েছে। তদন্তে যদি তাঁর বিরুদ্ধেও তথ্য-প্রমাণ মেলে, তাহলে তাঁকেও যেন গ্রেপ্তার করা হয়।
জাহাঙ্গীর আদেলের সঙ্গে ফোনালাপ প্রসঙ্গে সাংসদ নিজাম হাজারী বলেন, শুধু জাহাঙ্গীর আদেল নয়, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গেই প্রতিদিন তাঁর অসংখ্যবার ফোনালাপ হয়। তবে এর সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই।
আরও দুজন গ্রেপ্তার এবং দুটি পিস্তল উদ্ধার: পুলিশ জানায়, রিমান্ডে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ চৌধুরীর দেওয়া তথ্য মোতাবেক শহরের সালাম কমিউনিটি সেন্টারের পেছনে তাঁর অফিসে সোমবার রাতে অভিযান চালায় পুলিশ৷ সেখান থেকে চারটি গুলিভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়৷
এ ছাড়া, একরাম হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফেনীতে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র৵াব৷ তাঁরা হলেন সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ ও ফেনী পৌরসভার বিরিঞ্চি এলাকার যুবলীগের কর্মী মো. সজীব (২৫)৷
র৵াব জানায়, এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া তরুণ জাহিদুল ইসলাম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, হামলা শেষে তিনি ওই পিস্তলটি সজীবের কাছ রেখে যান৷ এরপর সজীবের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়৷ এ ছাড়া, গ্রেপ্তার হওয়া রউফ একসময় জয়নাল হাজারীর অনুগত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ছিল, বর্তমানে নিজাম হাজারীর অনুগত৷