• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

মায়ের শিক্ষায় ছেলের সাফল্য আফিফের-বেতন ১,২৯,৫৯৪৪৪.৪৭!


প্রকাশিত: ৮:১৯ পিএম, ১৫ জুন ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৬ বার

 

মীরা নায়ার : ‘আপাতত আর কোথাও ইন্টারভিউ দিও না আফিফ। তোমাকে ভালো জায়গাই দেব…!’ afif-www.jatirkhantha.com.bdকথাগুলো অবাক করে দিয়েছিল ভারতের পশ্চিবঙ্গের আফিফ আহমেদকে। কারণ যে সংস্থা তাকে এই আশ্বাসবাণী শোনাচ্ছে, তার নাম গুগল। তবে গুগলের এই আশ্বাসবাণীতে বিস্মিত হননি আফিফ। কারণ ওই আশ্বাসের আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের এই ছাত্র গুগলের থেকে চাকরির অফারও পেয়েছেন। এবং জীবনের প্রথম চাকরি হিসেবে বেতনের অঙ্কটা অভাবনীয়।

১,১০,০০,০০০ রুপি! আর বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় এক কোটি ত্রিশ লাখ (১২৯৫৯৪৪৪.৪৭ টাকা)! বাৎ‌সরিক এই আর্থিক চুক্তিতেই যাদবপুরের চলতি বছরের ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ের সেরা চাকরিটা ছিনিয়ে নিয়েছেন কৃষ্ণনগরের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আফিফ। তার হাত ধরেই বহুদিন পর আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক প্লেসমেন্ট মানচিত্রে নিজেদের জায়গা করে নিল।

শেষ কবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ প্লেসমেন্ট সিজনে এত বড় বেতনের চাকরি পেয়েছেন, তা মনে করতে পারছেন না অনেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের প্লেসমেন্টের বাজারেও সেরা প্যাকেজ। প্রথম চাকরিতে বেতনের পরিমাণে আফিফের পরেই যে পড়ুয়া, তার প্রাপ্য হবে বার্ষিক ৩০ লাখ। আফিফের থেকে ৮০ লাখ কম!

ভারতে তার উপযুক্ত কোনো ‘পোস্ট’ খালি নেই, তাই সেপ্টেম্বরে সিঙ্গাপুরে গুগলের অফিসে কাজে যোগ দেবেন আফিফ। এ রাজ্যে শিক্ষা, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় সংখ্যালঘুদের পিছিয়ে থাকা নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়েছে বহু। এই বঙ্গ সন্তানের সাফল্য যেন সেই মরুভূমিতেই এক সফল উৎক্ষেপণ। কৃষ্ণনগর থেকে কলকাতায় প্রতিদিন যাতায়াত করতে পারবেন না বলে খানিকটা বাধ্য হয়েই হোস্টেলে অ্যাডমিশন নিয়েছিলেন আফিফ। সেটা বছর চারেক আগের কথা। চোখে তখন রঙিন স্বপ্ন।

বুকে ছোট শহর থেকে কলকাতায় আসার দুরুদুরু ভয়। কবে যে সেই লাজুক, কম কথা বলা ছেলেটাকে যাদবপুরের মাটি একাত্ম করে নিল এখন আর ভালো করে মনে করতে পারেন না৷ মন শুধু ছিল পড়াশোনার দিকে৷ তাল কাটার সুযোগ ছিল বিস্তর, কিন্তু কাটতে দেননি এই ২৪ বছরের যুবক৷ কাটতে দেননি বলেই হয়তো আজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা চাকরির শিরোপা তার মুকুটে৷

যাদবপুর সূত্রে খবর, ওই ছাত্রকে এ দেশের কোনো অফিসের জন্যই ইন্টারভিউ করেছিল গুগল৷ কিন্তু আফিফের ইন্টারভিউ পর্ব শেষ হতে হতে দেখা যায়, ভারতে কোথাও আর শূন্যপদ নেই৷ সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় চাকরি আর পাওয়া যায় না৷ কিন্তু আফিফ এত ভালো ইন্টারভিউ দিতে পেরেছিলেন যে গুগলের কর্মকর্তারা তাকে হাতছাড়া করতে চাননি৷ তাই ইন্টারভিউ দেয়ার চার মাস বাদে সিঙ্গাপুরের অফিসে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয় ওই সংস্থা৷

কোটির ক্লাবে আফিফের মাঝে যাতে আর কোথাও চাকরিতে জয়েন না করে যান, সে ব্যাপারেও গুগলের এক কর্মকর্তা খোঁজখবর রাখছিলেন৷ আফিফের কথায়, ‘আমি যখন প্রথম জানতে পারলাম যে চাকরিটা হয়েছে আর এত টাকা বেতন তখন আমি হোস্টেলের ঘরে৷ ই-মেইলটা দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না৷

ভুল হচ্ছে কি না বুঝতে রুমমেটকে ই-মেইলটা দেখাই৷ তার পর মাকে ফোন করি৷ গোটা হোস্টেল সে দিন আমার জন্য হইহই করেছিল৷ সবাই আলাদা করে শুভেচ্ছা জানিয়ে গিয়েছিল৷ ‘নিজের সাফল্যের নেপথ্যে যাদবপুরের অধ্যাপকদের সহায়তার পাশাপাশি মা -বাবার নিঃশর্ত পাশে থাকাকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন আফিফ৷ আফিফের বাবা আসরাফউদ্দিন আহমেদ কৃষ্ণনগর আদালতে ওকালতি করেন৷

মা আমরিন আহমেদ গৃহবধূ৷ বাড়িতে আর আছে ছোট একটা ভাই৷ সে এখন স্কুলে পড়াশোনা করছে৷ মা আমরিনের কথায়, ‘প্রথম যখন আফিফ কলকাতায় গিয়ে হোস্টেলে উঠল, সেই সময়টা কত ভয় পেয়েছি৷ হোস্টেল জীবনে তলিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে৷ বার বার খোঁজ নিতাম৷ কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝেছি, ও তলিয়ে যাওয়ার ছেলে নয়৷ ও কম কথা বলে, তবে নিজের লক্ষ্যে আফিফ স্থির এবং অবিচল৷ আমি জানতাম একদিন ও সফল হবেই৷ ‘

আফিফের এই সাফল্য যে শুধু যাদবপুরের মধ্যেই আটকে নয় এ কথা মানছেন বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের সাবেক সভাপতি তথা অ্যান্ড্রূ উইলের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান কল্লোল দত্ত৷ তার প্রতিক্রিয়া, ‘যাদবপুর মানে মাওবাদীদের আখড়া নয়৷ অনেকে আগেও তা প্রমাণ করেছেন৷ আফিফের এই সাফল্য শুধু যাদবপুরের নয়, বৃহত্তর সমাজের কাছেও বার্তা নিয়ে যাবে৷ প্রতিভা এবং সুযোগ থাকলে যে কোনো পরিস্থিতিতে আফিফ হয়ে ওঠা সম্ভব৷ তবে এই কৃতির কাছে এটা প্রথম সাফল্য হিসেবেই থাকুক, শেষ যেন না হয়৷’