মায়ের পরকীয়া প্রেমিকের লাশ ১০ টুকরা করলো ছেলে
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : নিজের মায়ের সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল লাইটারেজ জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মহসিনের (৫৫)। কিন্তু সহ্য করতে পারেনি ১৯ বছরের আরিফুল ইসলাম। অনেক দিন থেকেই সুযোগ খুঁজছিল। অবশেষে পেয়ে যায়। তাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে লাশ ১০ টুকরা করে ক্ষোভ মেটালো আরিফুল।
কিন্তু আইনের হাত থেকে রক্ষা হয়নি। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক মাসের মধ্যেই রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে ইপিজেড থানা পুলিশ। লাশের সন্ধানও মিলেছে।
দুপুরে সিএমপির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য। এসময় পাশে ছিলেন ইপিজেড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নগরীর ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং এলাকার ভাড়াটিয়া ও পোশাক কর্মী বিধবা নাজমা বেগমের সাথে ঢাকার বাসিন্দা এবং এমভি সাগরকন্যা নামে একটি লাইটারেজ জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মহসিনের পরকীয় প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিনের পরিবার ঢাকায় থাকলেও লাইটাজের জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রামে আসলে নিয়মিতভাবেই তিনি পোশাককর্মী ও ফিরোজপুরের মাঠবাড়িয়ার বাসিন্দা নাজমার বাসায় আসতেন।
সিমেন্ট ক্রসিং এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ছেলে আরিফুল ইসলামকে নিয়ে থাকতেন বিধবা নাজম বেগম। ১২ বছর আগে নাজমার স্বামী মারা গেলে গত ছয় বছর ধরে ক্যাপ্টেন মহসিনের সাথে নাজমার অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই অবৈধ সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ১৫ জানুয়ারি দুপুরে ক্যাপ্টেন মহসিন তাদের নাজামাদের বাসায় যান। এসময় আরিফুলের মা নাজমা বেগম ছেলেকে কাজের কথা বলে তাকে বাইরে পাঠায়। তবে আরিফুল বাইরে থেকে এসে তার মাকে মহসিনের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় মায়ের প্রেমিক মহসিনকে খুনের পরিকল্পনা করেন আরিফুল ইসলাম।
আরিফুলের বরাত দিয়ে পুলিশ আরো জানিয়েছে, ওই দিন বিকেলে তার মার সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখার পর কারখানায় চলে যান নাজমা বেগম। এসময় আরিফুলদের ঘরে মহসিন ঘুমানো অবস্থায় থাককালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছেলে আরিফুল মায়ের প্রেমিক মহসিনকে বালিশচাপা দিয়ে তাকে হত্যা করেন। এরপর লাশ খাটের নিচে দু’দিন রাখার পর বাজার থেকে একটি করাত এনে তার মায়ের অবর্তমানে লাশ দশ টুকরা করে আলাদা আলাদা করে বাজারের ব্যাগ ভর্তি করেন।
এরপর ১৭ জানুয়ারি রাতের আঁধারে মহসিনের খণ্ডিত মরদেহের অংশগুলো বাজারের ব্যাগ ভর্তি করে চার ভাগ করা হয়। এর মধ্যে মাথা থেকে গলা পর্যন্ত দুই ভাগ করে কর্ণফুলী নদীতে এবং সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় একটি বড় নালায় ফেলে দেয়া হয়। বুক থেকে নাভি পর্যন্ত ফেলা হয় হালিশহর থানার আনন্দবাজার এলাকায় নদীর পাড়ে। হাত পা ফেলে দেয়া হয় একই এলাকায় আরেকটা বড় নালায়।
১৮ জানুয়ারি হালিশহর থানা পুলিশ আনন্দবাজার এলাকা থেকে বুক থেকে নাভি পর্যন্ত উদ্ধার করে। এ ঘটনায় হালিশহর থানায় দণ্ডবিধির ৩০২, ২০১ /৩৪ ধারায় পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ২১ জানুয়ারি মহসিনের ভাই ও স্ত্রী ঢাকা থেকে এসে ইপিজেড থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন এবং নাজমা নামে একজনের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক থাকার বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেন। ওই তদন্তের সূত্র ধরে নাজমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরবর্তীতে নাজমার ছেলে আরিফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।