মাহে রমজান-আল্লাহপ্রেমে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হওয়ার মাস
মুফতি শাহেদ রহমানি : আজ থেকে শুরু হচ্ছে মহিমান্বিত মাহে রমজান। এ মাসের প্রথম দশক রহমত বা অবারিত করুণার। দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত বা ক্ষমার। তৃতীয় দশক নাজাত বা মুক্তির। প্রথম দশকে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে রহমতের বারিধারা বর্ষণ করে ক্ষমার উপযোগী করেন। দ্বিতীয় দশকে তিনি ক্ষমা করেন এবং তৃতীয় দশকে বান্দার জন্য নাজাতের ফয়সালা করেন।
রমজান ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাস। পরস্পর ভালোবাসার পরাগ ছড়ানোর মাস। বদান্যতার বিভা ও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হওয়ার মাস। সহমর্মিতা ও সহযোগিতার আলো ছড়ানোর মাস। অমূল্য রতন তাকওয়া অর্জনের মাস এবং আল্লাহপ্রেমে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হওয়ার মাস। ক্ষমা-মার্জনা ও অনুকম্পায় সিক্ত হওয়ার মাস।
রমজানের রোজা হিজরি দ্বিতীয় সনে ফরজ হলেও রোজার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। মুসলমানদের আগেও অন্যান্য ধর্মে রোজার বিধান প্রচলিত ছিল। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা (এ রোজার মাধ্যমে) মুত্তাকি (খোদাভীরু) হতে পারো। ’ (সুরা : রাকারা, আয়াত : ১৮৩)
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, আল্লাহর বিধান হিসেবে রোজা রাখার বিধান বহুকাল আগে থেকে প্রচলিত। বর্তমানেও বহু ধর্মে রোজার প্রথা ভিন্ন আঙ্গিকে চালু আছে। এ আয়াত থেকে আরো জানা যায়, রোজার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া ও খোদাভীরুতার প্রশিক্ষণ গ্রহণ, যাতে যাবতীয় পাপাচার-অনাচার, অনৈতিক ও অমানবিক কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়।
কোরআন-হাদিসের আলোকে প্রতীয়মান হয়, পাপমুক্ত জীবনের প্রতিশ্রুতি নিয়েই মুসলমানদের জীবনে রমজান আসে। তাই পবিত্র রমজানে ফরজ-ওয়াজিব ইবাদত ও তারাবি আদায়ের পর একজন মুমিনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গুনাহ থেকে বিরত থাকা।
লক্ষণীয় যে বেঁচে থাকার তাগিদে সম্পূর্ণরূপে পানাহার বর্জন করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কেবল দিনের বেলা রোজা রাখতে বলা হয়েছে। আরামদায়ক রাতকে আরামের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মনে রাখতে হবে, শিশুদের রোজার আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। অক্ষম-বৃদ্ধদের জন্যও ‘ফিদয়া’র অবকাশ রাখা হয়েছে। মুসাফির, অসুস্থ ও সন্তান প্রসব, স্তন্যদান ও ঋতুকালে নারীদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। সাময়িক অসুবিধা দূর হওয়ার পর তাদের জন্য এ রোজা কাজা রাখার বিধান দেওয়া হয়েছে।
রমজানের রোজা সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর ফরজ। রমজান মাস নির্ধারণের ক্ষেত্রে সৌরপঞ্জিকার স্থলে চন্দ্রপঞ্জিকা গ্রহণ করা হয়েছে। এর সুবিধা হলো, সৌর হিসেবে মৌসুমের পরিবর্তন ও ঋতুর পালাবদল হয় না।
তেমনি এর দিন-রাতের আকারেও বিশেষ কোনো পরিবর্তন বা ব্যত্যয় দেখা যায় না। তাই সৌরবর্ষের হিসাবে রোজা পালন করতে গিয়ে কোনো দেশে গ্রীষ্মকালে রোজা পালন করা হলে, সেখানে সর্বদাই রমজান আসত গ্রীষ্মকালে, কোথাও শীতকালে রমজান হলে সব সময় তা শীতকালেই আসত। চান্দ্রমাস এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
এর মৌসুম বছরে বছরে বদলাতে থাকে। দিন-রাতের আয়তনও কম-বেশি হয়। এভাবে রোজার মাস দেশে দেশে বছরভেদে প্রতি ঋতুতেই আগমন করে। ফলে সবাই গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত কিংবা বড় ও ছোট আকারের দিনে রোজা রাখার সুযোগ পায়।