মাশরাফি-নাসিরে’র জাদুতে ইংল্যান্ড খেল বাঘের খাবা
এস রহমান : মাশরাফি-নাসিরে’র জাদুতে ইংল্যান্ড কুপোকাত ।সেই নাসির দেখিয়ে দিল।সঙ্গে মাশরাফি’র সামনে থেকে অধিনায়কত্বে অবশেষে ধরা দিল জয়।এর আগের ম্যাচে নাসির থাকলে জেতা ম্যাচটা হাতছাড়া হতোনা। আজ নাসির সেটা বুঝিয়ে দিল বোলিং ফিল্ডিং এবং ব্যাটিংয়ে।
শুক্রবারের জয়টা এল রোববারে! গত ম্যাচেও অনায়াস এক জয় পেতে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। এই সহজ জয়টা তুলে নিতে না-পারার যে কষ্ট গত দুদিন ভুগেছে বাংলাদেশ, সেটি মুছে দেওয়ার মতো সার্থক এক জয়ই আজ তুলে নিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ৩৪ রানের দারুণ এক জয় এনে দিলেন মাশরাফি নিজে। ব্যাটে-বলে যোগ্য নেতার মতোই নেতৃত্ব দিলেন সামনে থেকে।
নিজেরা মাত্র ২৩৮ রান করেও ইংল্যান্ডকে অলআউট করে দিল ২০৪ রানে। বুকের মধ্যে তিন সিংহের ব্যাজ এঁকে মাঠে নামা দলটি বাঘের মুখ এঁকে মাঠে নামাদের কাছে গত ৬ ম্যাচে হারল চতুর্থবারের মতো!
তাসকিন ৩ উইকেট। মাশরাফি নিজে নিলেন ৪ উইকেট করে নিয়েছেন। এর আগে নয়ে নেমে ব্যাট হাতে ২৯ বলে ৪৪ করেছেন মাশরাফি। নাসিরকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে গড়েছেন ৬৯ রানের জুটি।
নাসির নিজে ২৭ বলে ২৭ করার পাশাপাশি বল হাতেও ছিলেন দুর্দান্ত। শুধু মঈন আলীর উইকেটটা নিয়েছেন বলে নয়; অল্প পুঁজিতেও ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলেছেন একের পর এক ডট বলে। টানা ১০ ওভারের স্পেলে ২৯ রান দিয়েছেন, সঙ্গে ওই ১ উইকেট। ইকোনমি ২.৯!
স্বল্প পুঁজি নিয়েও এমন লড়াইয়ের ভিত্তি অবশ্য গড়ে দিয়েছিলেন মাশরাফি আর সাকিব। ১০ ওভারের মধ্যেই ২৬ রানেই ৪ উইকেট হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। এর তিনটা উইকেটই মাশরাফির। প্রথম ওভার থেকে বোলিং আক্রমণে এসে ইংল্যান্ড কোণঠাসা করে ফেলা সাকিব নিয়েছেন অন্য উইকেটটি।
মাঝখানে বেয়ারস্টো-বাটলারের ৭৯ রানের জুটি ধীরে ধীরে আবারও গত ম্যাচের ভয়টা ফিরিয়ে আনছিলেন। আবারও কি ‘ইশ’ আর ‘আহা’র আক্ষেপ?শুরুর দিকে বাজে বোলিং করলেও বেয়ারস্টোকে ফিরিয়েই ফিরে আসেন তাসকিন নিজেও। পরে নিজের টানা দুই ওভারে বাটলার ও ক্রিস ওকসকেও ফিরিয়েছেন। টানা চার ওভারে তিন উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ২৬ ওভার শেষে তাদের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১২০।
৩০ ওভার শেষে সেটিই দেখাচ্ছিল ৮ উইকেটে ১৩৬। এখান থেকেই আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড।গত ম্যাচে ৩০৯ করেও স্বস্তিতে ছিল না ইংল্যান্ড। ৫২ বলে ৩৯ প্রয়োজন, হাতে ৬ উইকেট—এই অবস্থায় ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। আজকের উইকেটটা কিন্তু ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য পরীক্ষা নেওয়ার। ২৬ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশও কখনোই স্বস্তিতে থাকেনি।
সাব্বির, মুশফিক, সাকিবও ব্যর্থ হলে ১১৩ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে কেবল মুশফিক ২৩ বলে ২১ করেন। উইকেট বিবেচনায় যেটি পরে বেশ ‘বড়’ই মনে হয়েছে। আর তাই মোসাদ্দেকের ২৯ রানের ইনিংসটাও গুরুত্ব পাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের লড়াকু পুঁজি এনে দিয়েছেন ৮৮ বলে ৭৫ করা মাহমুদউল্লাহই।
ষষ্ঠ উইকেটে মোসাদ্দেকের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর ৪৮ রানের জুটিটা সাময়িক বাঁধ দিয়েছিল। তবে ৮ রানের মধ্যে দুজনই ফিরে এলে বাংলাদেশ আবারও ভীষণ বিপদে পড়ে যায়। রান মোটে ১৬৯, চলে গেছে ৭ উইকেট। সেখান থেকেই মাশরাফি ওই ইনিংসটা খেলেন। ওভারে ৮.৪৪ করে রান তোলা বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে বড় জুটিটাও এ সময় গড়ে ওঠে নাসিরের সঙ্গে। সাত-আট-নয়-এই তিন ব্যাটসম্যান মিলে এনে দিয়েছেন ১০০ রান। যেখানে এক-দুই-তিনের অবদান ২৮!
তবু সব ব্যর্থতা-শূন্যতা মুছে দিলেন মাশরাফি। ম্যাচটা যে আজ নিজের করে নেবেন বলে ঠিক করেছিলেন। নিজের দ্বিতীয় আর দলের চতুর্থ ওভারে ফেরালেন ভিন্সকে। পরের ওভারেই সাকিবের আঘাত মাশরাফির কাজটা আরও সহজ করে দিল। নিজের চতুর্থ ও পঞ্চম ওভারে মাশরাফি এবার ফেরালেন জেসন রয় ও বেন স্টোকসকে। ৫-০-১৭-৩ এটাই তখন মাশরাফির বোলিং বিশ্লেষণ। ইংল্যান্ডেরও নেই ৪ উইকেট। ৫৭ বলে ৫৭ করা বাটলার পরাজয়টা কেবলই বিলম্বিত করতে পেরেছেন।
সেই অপেক্ষা আরও বাড়াচ্ছিল নবম উইকেটে উইলি-রশিদের ৫৬ বলের জুটিটা। তখনই মাশরাফি বোলিংয়ে আনলেন মোসাদ্দেককে। আর নিজের প্রথম ওভারে আবারও উইকেট তুলে নিলেন এই তরুণ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এ নিয়ে চার ম্যাচে তিনবারই নিজের প্রথম ওভারে উইকেট পাওয়ার অভিজ্ঞতা হলো এই স্পিনারের, উইলিকে ফিরিয়ে দিয়ে। তাঁকে ঠিক সময়ে আনার কৃতিত্বও তো মাশরাফির।
যখনই যা করেছেন, মাশরাফি সব বাজিই লেগে গেছে দারুণভাবে। শেষটা টেনে দিলেন মাশরাফিই। শেষ উইকেটে ৪৫ রানের যন্ত্রণাদায়ক এক জুটিকে ফেরালেন ক্যাচ বানিয়ে। ডিপে ক্যাচটা ধরলেন কে? ওই নাসির!