মাশরাফির চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ দল!
দিনা করিম : মাশরাফির চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ দল! শহরের সিটি ইন হোটেল থেকে ড্রেসিংরুমে কোচ-ক্রিকেটার কোনো সদস্যের মুখ মিডিয়ায় ধরা পড়েনি! কোচ হাথুরুসিংহে বলে দিয়েছেন, অনুশীলন নয়, বিশ্রামেই মিলবে সিরিজ জয়ের দাওয়াই।
তাই এদিন আর কেউ ব্যাট-প্যাড নিয়ে মাঠে বেরোননি, মিডিয়ার সামনে এসে কেউ মুখ খোলেননি। আসলে জিম্বাবুয়ের কাছে আগের রাতে অমন একটা ধাক্কা খাওয়ার পর মনোবলn শক্ত রাখতেই সবকিছু থেকে দূরে সবাই। কোচ নিজেও হয়তো গুছিয়ে নিচ্ছেন নিজেকে। মাত্রাতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার কুফল দেখে তিনি এখন বাস্তবের মানুষ। তাই আজকের ম্যাচে নতুন কুঁড়ির আসর না বসিয়ে সিরিজ জয়ের কঠিন চ্যালেঞ্জ সাজাচ্ছেন কোচ হাথুরুসিংহে।
তামিমকে বলে রাখা হয়েছে, আজকের ম্যাচের জন্য তৈরি থাকতে। পেসার তাসকিন আর স্পিনার আরাফাত সানিকেও ইঙ্গিত দেওয়া আছে সিরিজ জয়ের চ্যালেঞ্জটা লুফে নেওয়ার; আগের ম্যাচের সব ভুল দূরে ঠেলে নতুন ম্যাচের জন্য তৈরি হওয়ার। তাহলে কি ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিরিজে’ আজ কমন সেটেই প্রশ্ন সাজিয়েছেন হাথুরু? আজ কি তাহলে কোনো পরীক্ষা চলবে না? ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা ঠিকই ছিল।
কিন্তু আমরা মাঠের পরিকল্পনাগুলো ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তবে আগের ম্যাচের ভুলগুলো ভুলে যেতে হবে আমাদের। কাল (আজ) নতুন একটি ম্যাচ, যেটা জিতলেই সিরিজ আমাদের হবে’, বক্তা খালেদ মাহমুদ সুজন। দলের ম্যানেজার হয়ে কেবল তিনিই গতকাল সিটি ইন হোটেলের লবিতে এসেছিলেন। আগের রাতে মাশরাফির কথাগুলোই যেন বললেন তিনি।
সিরিজ শুরুর আগে একবারই শুধু মাশরাফি বলেছিলেন র্যাংকিংয়ের কথা। সিরিজের চারটি ম্যাচ জিতলে নয়ে থাকা আফগানিস্তানকে টপকে যাওয়া যেত। যেখানে সমীকরণটা ছিল এমন_ বাংলাদেশের একটি জয়ে ৩টি রেটিং পয়েন্ট।
আর একটি হারলে খোয়া যাবে ৫টি রেটিং পয়েন্ট! তা এরই মধ্যে দুটি জয়ে ৬ পয়েন্ট মেলার পর একটি হারে মাইনাস হয়েছে ৫, সিরিজ থেকে হাতে মাত্র ১টি পয়েন্ট। আজ কোনো ধরনের অঘটনে সেটাও বাদ যেতে পারে। সে সঙ্গে সিরিজ হারলে যে মানসিক চাপ তৈরি হবে সেটাও এশিয়া কাপের আগে অস্বস্তিতে রাখবে; কিন্তু এসব অলক্ষুণে কথা এখনই মাথায় আনছেন না কোচ-অধিনায়ক।
এদিন টিম হোটেলের মিটিংয়ে সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, হারা ম্যাচটিকে একটা ‘ব্যাড ডে’ ধরে নিয়ে ভুলে যাও। ওটা ছিল দুঃস্বপ্ন! আমরা নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলে জিম্বাবুয়ে দাঁড়াতে পারবে না। টিম সূত্রের খবর, মাশরাফি তার ব্রিগেডকে চাঙ্গা রাখতেই সাহস জুগিয়ে চলেছেন। আর নবাগতদের শুকনো মুখগুলোতে হাসি ফেরানোর চেষ্টা করছেন।
তবে কোচিং স্টাফদের বিশ্লেষণ থেকে একটি ব্যাপার বেরিয়ে এসেছে, তা হলো জিম্বাবুয়েকে কিছুতেই ১৮০ রান স্পর্শ করতে দেওয়া যাবে না। প্রথমে হোক কিংবা দ্বিতীয়তে, ১৬০-এর মধ্যেই মাসাকাদজাদের ধরে রাখতে হবে। এ চ্যালেঞ্জটা মাশরাফি ও বোলিং বিভাগের ওপরই ন্যস্ত হয়েছে। মুশফিকশূন্য এই দলের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য ১৮০ রান তোলা যে বড় চ্যালেঞ্জ, সেটা আগের ম্যাচেই বুঝে নিয়েছেন কোচ।
যদিও টি২০ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন দলের রান যেন একশ’ আশি টপকাতে পারে! কিন্তু নিজেদের মধ্যে অনুশীলন ম্যাচ কি জিম্বাবুয়ের সঙ্গে এই সিরিজ, হাজারো পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও দেখা মিলছে না তার। শুরুটা ভালো হলেও মাঝে এসে হচ্ছে ছন্দপতন, চার নম্বরে শুভাগত, মোসাদ্দেক কিংবা মাহমুদুল্লাহ কারও ব্যাটই সময়মতো চওড়া হচ্ছে না। এ জায়গাটিতে দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ল্যাপটপ-বন্দি এসব পরিসংখ্যান নিয়ে যখন সিটি ইনে মাশরাফিদের তাত্তি্বক বিশ্লেষণ, তখন জিম্বাবুইয়ানরা কিন্তু দিব্যি ফুরফুরে। একটি জয় পাল্টে দিয়েছে তাদের চোখমুখের ভাষা। এদিন দলবেঁধে ওয়ালার-সিকান্দার রাজারা দুপুরের খাবার খেতে বেরোলেন। কেউ আবার সেখান থেকে ফেরার সময় কিছু শপিংও করলেন। কোচ হোয়াটমোর সময় বের করে গেলেন তার প্রয়াত ছাত্র মানজারুল ইসলাম রানার বাড়িতে। সেখানেই কথার ফাঁকে একবার বললেন, ‘আমরা এখন সিরিজ ড্র’র কথা ভাবতেই পারি …, তাতে বাংলাদেশিরা নিশ্চয় দোষ খুঁজবে না…।’