মার্কিন এবিসি নিউজে মাহফুজ আনামকে নিয়ে রাজনৈতিক উস্কানি!
বিশেষ প্রতিবেদক : ১-১১ এর সময় প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের ভুল স্বীকারোক্তি ও সেটা নিয়ে বিতর্কের ঝড় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ।
সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে তারা জানায়, বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী একটি পত্রিকার সম্পাদক আট বছর আগে করা একটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ায় সেটা নিয়ে ঝড় উঠেছে সারাদেশে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করা একটি প্রতিবেদনকে ঘিরেই এই বিতর্কের জন্ম। মাহফুজ আনাম জানান, সেসময় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর চাপে পড়ে ওই সংবাদ প্রকাশ করেন তিনি।
তার এই স্বীকারোক্তির কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাবের বিষয়টি স্পষ্ট হয় বলে এবিসি নিউজের ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়। এবিসি নিউজ জানায়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর দুবার ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, বাংলাদেশে সেনাবাহিনী সবসময়েই প্রভাবশালী। তারা সবসময়ই বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাষ্ট্রের এমন একটি অংশ কখনোই রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত নয়।
যদিও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ, তবুও এখানে সেনাবাহিনী অনেক ক্ষমতা বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। ব্রিজ তৈরি, হাইওয়ে তৈরি, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজই সেনাবাহিনী করে থাকে বলে জানায় তারা। এছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও বাংলাদেশের সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে কেউ সেনাবাহিনীকে কটাক্ষ করতে এমনটা কল্পনাও করা যায় না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
একই সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে মন্তব্য করে প্রতিবেদনে জানানো নয়, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুজনের জীবনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব রয়েছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং ১৯৮১ সালে জিয়া হত্যাতেও সেনাবাহিনীর ভূমিকা উঠে আসে প্রতিবেদনে।
এবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া এখন প্রতিন্দ্বন্দ্বী হলেও ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী সরকার পতনে দুজনেই একসঙ্গে আন্দোলন করেছিলেন। এছাড়া ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে কারাবরণ করতে হয় দুজনকেই।
২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে দুজন নেত্রীকেই ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় সেনাবাহিনী। মাহফুজ আনাম ও অন্যান্য সম্পাদকের বরাত দিয়ে এমনটাই জানায় এবিসি। এছাড়া সেই সময় বিনা যাচাইয়ে সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি যে মাহফুজ আনাম তার পেশাগত জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হিসেব আখ্যায়িত করেছেন সেই বিষয়টিও উঠে আসে এবিসির প্রতিবেদনে।
তার এই স্বীকারোক্তির কারণে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা পত্রিকা বন্ধের দাবি জানান। দেশজুড়ে মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা জমা হতে শুরু করে। তবে অন্যান্য সম্পাদকরা জানান, সেসময় শুধু মাহফুজ আনামই এমন চাপের স্বীকার হন নি।
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, সেসময় সম্পাদকদের সেনাবাহিনীর কথা শোনা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলোনা। সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ কোনো লিখিত বক্তব্যের সাড়াও দিতোনা।
ডেইলি স্টারের সাবেক প্রধান প্রতিবেদন জায়েদুল আহসান পিন্টু বলেন, সেসময় তাদের একজন সাংবাদিককে সেনাবাহিনী তুলে নিয়ে যায় এবং নির্যাতন করে। পরে মাহফুজ আনামের সহযোগিতায় তাকে সুইডেন চলে যেতে হয়। এরপর শেখ হাসিনার গ্রেফতারের পর ডিজিএফআই কর্তৃক সরবরাহকৃত সংবাদ প্রকাশ করেন। এছাড়া চ্যানেল আই এর ওয়েবসাইটেও ১৪ টি নিবন্ধও প্রকাশিক হয় বলে জানায় পিন্টু।
পিন্টু বলেন, এখনও সবকিছু প্রকাশের সময় আসেনি। আমাদের সমাজ এখনো মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়। এটা স্পষ্ট যে আমাদের সমাজ সত্য সহ্য করতে পারেনা। মাহফুজ আনামের স্বীকারোক্তির পর এমনটাই স্পষ্ট।
তবে ১-১১ এর সময় শুধুমাত্র নিউ এজ পত্রিকা সামরিক চাপে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর বলেন, তাকে এ নিয়ে বেশ কয়েকবারই সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসতে হয়েছে। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইতি ঘটে ২০০৮ সালে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার জয়লাভ করে। এরপর থেকে এখনো ক্ষমতায় রয়েছেন শেখ হাসিনা।
তবে এবিসি নিউজের দাবি, বাংলাদেশে এখনো সেনাবাহিনী এতটাই ক্ষমতাবান যে চাইলেই তারা শেখ হাসিনাকে পদচ্যুত করতে পারে এবং খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় বসাতে পারে।
আব্দুর রশিদ বলেন, সেনাবাহিনীর অপার ক্ষমতা বিষয়টিও নজরে আনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, অনেক দেশেই সামরিক ক্ষেত্রে সংস্কার হয় এবং চলতে থাকে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে এটা খুবই প্রয়োজন।