• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মামলা না করে রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে বিবি’র ৫ সদস্য নিউইয়র্কে


প্রকাশিত: ১:৪৭ পিএম, ১৭ আগস্ট ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪২ বার

 

বিশেষ প্রতিনিধি : রিজার্ভের অর্থচুরির ঘটনায় নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এবং আন্তঃব্যাংক মুদ্রা লেনদেনকারী bangladesh_bank-dolar-www.jatirkhantha.com.bdপ্রতিষ্ঠান সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশনের (সুইফট) বিরুদ্ধে মামলা করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)।

বরং চুরি যাওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে ফেড ও সুইফটের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে গত রোববার নিউইয়র্কে গেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।

ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসাইন কিউসি, ইনফরমেশন সিস্টেমস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক দেবদুলাল রায়, অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাকের হোসেন ও বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের যুগ্ম পরিচালক আবদুর রব।

প্রতিনিধি দলটির স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিউইয়র্ক ফেড ও সুইফট প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বুধবারও তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস, দি ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সঙ্গেও বসবেন তারা।

মঙ্গলবারের বৈঠকের আগে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় নিউইয়র্ক ফেড ও সুইফটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিবর্তে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি যাওয়া অর্থ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার উদ্ধারে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা চাওয়া হবে।

বাংলাদেশে ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মুহূর্তে ফেডারেল ব্যাংক বা সুইফটের বিরুদ্ধে আইনি কোনো পদেক্ষপ নেওয়ার পরিকল্পনা আমাদের নেই; বরং আমরা তাদের সহযোগিতা চাইব। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা অবস্থান বদলের কারণ বলতে চাননি।

রয়টার্স জানিয়েছে, নিউইয়র্ক ফেড ও সুইফটের ভুলের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয় দাবি করে গত মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সূত্র ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছিল। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও গত মার্চে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন।

তবে মঙ্গলবার শুভঙ্কর সাহা বলেন, আইনগত বিষয়সহ বিকল্প কিছু নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। বিশেষ করে ফেড এবং সুইফটের সহায়তার বিষয়টি আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা অবস্থান পাল্টেছি বিষয়টি এমন নয়, মামলা বা সহযোগিতা কামনা দুটোই আমাদের চিন্তায় ছিল, এখন আমরা সহযোগিতার বিষয়টিই অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এই বিষয়ে বক্তব্যের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে অর্থমন্ত্রী মুহিতকে না পাওয়ার কথা জানিয়েছে রয়টার্স।

এদিকে গত সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে তার স্ট্যান্ডার্ড চুক্তি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে হ্যাকিংয়ের বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তা যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে।

একই সঙ্গে অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধ বাতিলের জন্য যথাযোগ্য সুযোগও দিতে হবে। এর পরই ফেড জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি ঠেকানোয় যথাযোগ্য প্রয়াস নিতে বাধ্য থাকবে।

চুক্তিনামায় আরো বলা হয়, দুই পক্ষের মধ্যে ঠিক করা অথেন্টিকেশন মেসেজের (প্রামাণ্য বার্তা) সঙ্গে অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধে অমিল পাওয়ার পরই নিউইয়র্ক ফেড অননুমোদিত অর্থ স্থানান্তরের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য থাকবে। একই সঙ্গে অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধটি যথাযথভাবে বিশ্বাসযোগ্য না হলেও এ বিষয়ে ফেড পদক্ষেপ নিতে বাধ্য।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে অবস্থান পরিবর্তনের সঙ্গে এ চুক্তিনামা প্রকাশের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন শুভঙ্কর সাহা। এ বিষয়ে রয়টার্সকে তিনি বলেন, সব বিকল্প বিবেচনার পরই আমরা সহযোগিতার পথ বেছে নিয়েছি।

নিউইয়র্কে অবস্থানরত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান রয়টার্সকে বলেছেন, ওই স্ট্যান্ডার্ড ফেডারেল চুক্তির আওতায়ই সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে মামলা করা বা না করা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে চারটি মেসেজের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ফিলিপাইনের আরসিবিসি-তে সরিয়ে নেয়া হয় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। এসব অর্থের সামান্য অংশ উদ্ধার হয়েছে।

আরেকটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলংকার একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে দুই কোটি ডলার সরিয়ে নেয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।