মাফিয়া ডন আরিফ গ্রেপ্তার
শফিক রহমান : রাজধানীর অন্যতম মাফিয়া ডন আরিফ হাসান কে অবশেষে শনিবার রাতে গুলশান থেকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দারা। এই সেই মাফিয়া ডন আরিফ যিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সন্দেহজনকভাবে ছয়বার তার পাসপোর্ট পরিবর্তন করেছিলেন। কানাডায় পাচার করেছেন ৫০০ কোটি টাকা। ঢাকার মহাখালী ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে হাসান টেলিকমের নামে ৩৩৫ কোটি টাকা মেরে পাচার করে দিয়েছেন। অথচ টাকার অভাবে ন্যাশনাল ব্যাংক গ্রাহকরা হাহাকার করছে।
আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই আরিফ এ পর্যন্ত ১২৮ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৯৮৮ টাকার সম্পদের সঠিক উৎস দেখাতে পারেননি। এই বিপুল টাকা কোত্থোকে এলো তার কোনো হিসাব নেই। আয়ের সঙ্গে মিল নেই এই টাকার। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা জানান, হাসান আরফি দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে ঢাকার মহাখালী ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে হাসান টেলিকমের নামে ৩৩৫ কোটি টাকা মেরেপোচার করে দিয়েছেন।
সুর্নির্দিষ্ট এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যালেন দেশ টিভির এমডি আরিফ হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাতে নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) তালেবুর রহমান দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে এসব এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আজ রবিবার তাকে সিএমএম আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানা গেছে।
ডিসি বলেন, দেশ টিভির এমডি আরিফ হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।আরিফ হাসানকে বিমানবন্দর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আরিফ হাসান অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) কার্যনির্বাহী কমিটির মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
অনুসন্ধানে মিলেছে, সিঙ্গাপুর-কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে শত শত কোটি টাকা পাচার ও ঋণ জালিয়াতি করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান। দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে অপরাধের তথ্য এলেও অজ্ঞাত কারণে এখনো নীরব সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। তাই আইনিভাবে শাস্তির আওতায় আনা যায়নি তাকে।
মিডিয়া মাফিয়া দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসানের টাকা পাচার, ঋণ জালিয়াতি আর অবৈধ আয়ের বিষয়টি তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক শফি উল্লাহ সম্প্রতি আরিফ হাসানের অবৈধ আয়, ঋণ জালিয়াতি ও অর্থপাচারের অনুসন্ধান করেছেন। অনুসন্ধানে বলা হয়, অভিযুক্ত আরিফ হাসান সংবাদ মাধ্যমের পরিচালকের আড়ালে অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করে সিঙ্গাপুর ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছেন।এর মধ্যে শুধু কানাডায়ই ৫০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাচার করা টাকায় কানাডায় গড়ে তুলেছেন বাড়ি। বাড়ি নম্বর ৮২, হলিউড অ্যাভিনিউ। এটি কানাডার এমটুএনথ্রিকেওয়ান নর্থইউয়র্ক, অনটারিওতে অবস্থিত।
আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানায়, অর্থপাচার তদন্তকালে দুর্নীতি দমন কমিশন ম্যানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ১৪ এর ২ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ সংশোধিত ২০১৯ এর ১৮ বিধি অনুযায়ী অভিযুক্ত আরিফ হাসানের ১৫ ব্যাংক হিসেব অবরুদ্ধ করার আবেদন করেন। যেসব ব্যাংক হিসেবে কোটি কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক হিসাবগুলো অবরুদ্ধ না করে খুলে দিতে সর্ব্বোচ্চ আদালতের আবেদন করলে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি অভিযুক্ত আরিফের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চায় সুপ্রিমকোর্ট।
দুদকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত আরিফ হাসান ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সন্দেহজনকভাবে ছয়বার তার পাসপোর্ট পরিবর্তন করেছেন।ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত তিনি ১২৮ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৯৮৮ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন যা তার আয়ের সঙ্গে মিল নেই। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা জানান, যে দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে ঢাকার মহাখালী ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে হাসান টেলিকমের নামে ৩৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করা হয়।
অবৈধ আয়ের মাধ্যমে কানাডা সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার এবং ঋণজালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ থাকলেও বিশেষ ধান্ধাবাজির কারণে এতোদিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বাইরে ছিল আরিফ হাসান। বর্তমানে গ্রেফতার হওয়ায় দ্রুত সব অপরাধের অনুসন্ধান শেষ করে অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু দেশটিভিসহ সব সম্পদ বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি মাফিয়া ডন আরিফ হাসানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নিরীহ সাধারন জনগন।