• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

মাদ্রাসা মুঈনুল ইসলামে সাদ পন্থীদের হামলায় বিক্ষুদ্ধ আলেমরা


প্রকাশিত: ১১:০৩ পিএম, ১২ আগস্ট ২০ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৯৩ বার

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পড়ছেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমূদ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর ভাটারায় আল-মাদ্রাসাতু মুঈনুল ইসলামে সাদ পন্থীদের হামলায় বিক্ষুদ্ধ আলেমরা হামলাকারীদের বিচার ও বৈধ কর্তৃপক্ষের কাছে মাদ্রাসার দায়িত্ব হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজধানীর ভাটারার ছোলইমাদ এলাকায় অবস্থিত ‘আল-মাদ্রাসাতু মুঈনুল ইসলাম’ কওমি মাদ্রাসায় সাদপন্থীদের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতের অভিযোগ এবং বৈধ কর্তৃপক্ষের হাতে মাদরাসার দায়িত্ব হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা শাহরিয়ার মাহমূদ। আজ (১২ আগস্ট) বুধবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা শাহরিয়ার মাহমূদ, বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব মুফতী নুরুল আমিন, বেফাকের সহসভাপতি মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, আল মাদ্রসাতু মুঈনুল ইসলামের মুহতামিম মাওলানা আতাউল্লাহ, মাদ্রাসার শিক্ষাসচিব মুফতী সেলিমুল্লাহ এবং মাদ্রাসার আহত শিক্ষক ও ছাত্রবৃন্দ।

লিখিত বক্তব্যে মাওলানা শাহরিয়ার মাহমূদ বলেন, ১৯৯৫ সালে চারজন প্রতিষ্ঠাতার উদ্যোগে আল-মাদরাসাতু মুঈনুল ইসলাম এর সর্বপ্রথম অস্থায়ী যাত্রা শুরু হয় ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাস সংলগ্ন বাঁশতলা থেকে। ১৯৯৭ সালে স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিত্ব জনাব জসিম উদ্দীন ঢালী কর্তৃক দানকৃত ভাটারার ছোলইমাদস্থ টেক-ঢালিবাড়িস্থ মাদ্রাসার বর্তমান অবস্থানে মসজিদ ও মাদ্রাসাটি স্থায়ীভাবে অস্তিত্বে আসে। মসজিদ-মাদ্রাসার কার্যক্রমের জন্য উক্ত দানকৃত ভূমির দলিলে সুস্পষ্ট শর্ত রাখা হয় যে, মাদ্রাসাটি দিল্লী ও কাকরাইল মসজিদের মুরুব্বী ওলামাদের পরামর্শে পরিচালিত হবে।

কিন্তু মাওলানা সা’দ নবী (আঃ) ও সাহাবা (রাঃ) বিদ্বেষী ভ্রান্ত আক্বীদার ইস্যুকে কেন্দ্র করে দিল্লীর মার্কাজ বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত এবং মূল মার্কাজ, যেখানে সা’দ সাহেব অবস্থান করতেন সেখানে অনেকদিন ধরে তবলীগের সকল কার্যক্রম বন্ধ আছে। তিনি বলেন, মাদ্রাসা মঈনুল ইসলামের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল মুফতী আতাউর রহমান ২০১৮ সালে দুর্ভাগ্যক্রমে মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্রদের ইচ্ছার বিপরীতে সা’দ গ্রুপের ভ্রান্ত আক্বীদার পক্ষে অবস্থান নেন। যার ফলে অল্পদিনের মধ্যে মাদ্রাসার ৬০০ ছাত্রের মধ্যে প্রায় ৫০০ ছাত্র মাদ্রাসা ছেড়ে অন্য মাদ্রাসায় চলে যায়।

মাওলানা শাহরিয়ার বলেন, আল্লাহর হুকুমে চলতি সনের গত ১১ মে মুফতী আতাউর রহমান ইন্তেকাল করেন। আস্তে আস্তে সকল ছাত্রগণ মাদ্রাসায় ফিরে আসতে শুরু করেন। জমিদাতাদের অন্যতম জনাব আফতাব উদ্দিন ঢালীর সভাপতিত্বে গত ২৭ মে, ২০২০ এক সাধারণ সভায় মাদ্রাসার শূরা কমিটি পুনর্গঠিত হয়। উক্ত শূরা কমিটিতে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতাদের জীবিত বাদবাকী ৩ জনই অন্তর্ভুক্ত হন। অপরদিকে কওমী মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকের মুরুব্বীগণও উক্ত শূরা কমিটির অন্তর্ভুক্ত হন। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, মাদ্রাসাটি যখন আবার তার আগের ভাবমূর্তি রক্ষার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো, তখনই সা’দপন্থীদের আক্রমণের শিকার হয়।

সা’দপন্থীদের দাবী, যেহেতু মুফতী আতাউর রহমান ইন্তেকালের আগে ২ বছর সা’দ মতবাদ এবং আদর্শে চলেছেন, সুতরাং তার ইন্তেকালের পরে সা’দ অনুসারীরা মাদ্রাসা চালাবে। অথচ এটা একটা একান্তই আবেগী কথা। মাদ্রাসা চলবে মাদ্রাসার নীতিমালা অনুসারে, জমি দাতাদের জমি দানের মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। সাদ পন্থীরা ১লা ডিসেম্বরের টঙ্গী ট্রাজেডীর কারনে আদৌ আইনের আওতায় না আসায় পুন পুন আলেম ওলামাদের রক্তের নেশায় বিভোর হয়ে পড়েছেন।

টঙ্গীর মর্মান্তিক ঘটনার পর দেশ বিদেশের বহু জায়গায় আলেমদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, মাদ্রাসা মুঈনুল ইসলামে গত ৭ জুন মিরপুরের সন্ত্রাসী মিজানের নেতৃত্বে প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে। দুর্ভাগ্য আমাদের, দুর্ভাগ্য আলেম তথা হক্কানী দ্বীনি সমাজের। রহস্যজনক কারণে জিডি করার পরও স্থানীয় ভাটারা থানার ওসি সাহেব হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেননি।

গত ১ আগস্ট কুরবানীর ঈদের দিন সন্ধ্যা হতে মাদ্রাসা মুঈনুল ইসলামের মসজিদে বিভিন্ন এলাকা থেকে সাদপন্থীরা প্রায় শতাধিক সন্ত্রাসীকে জড়ো করে। পরিস্থিতি ও তাদের আশু মসজিদ-মাদ্রাসা দখলের পাঁয়তারা আঁচ করে রাত প্রায় সাড়ে ১১টায় মুফতী সেলিম সাহেব ভাটারা থানার ওসি সাহেবকে আশঙ্কার কথা ফোনে জানালে তিনি কোন পদক্ষেপ না নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে বলেন।

মাওলানা শাহরিয়ার বলেন, পর দিন ২আগস্ট ভোর ৬টায় দেখা করার মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে সাদপন্থীরা দারায়ানকে দিয়ে কলাপসিবল গেটের তালা খুলে মাদ্রাসা-মসজিদের দ্বিতীয় তলায় অবস্থানরত শিক্ষক ছাত্রদের উপর অতর্কিতে লোহার রড ও ধারালো ছুরি নিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। অতর্কিত আক্রমণে ঘুমন্ত শিক্ষক-ছাত্রগণ বিচলিত হয়ে পড়েন। এ সময় ৬/৭ জনের মাথায় ছুরি ও লোহার রডের আঘাতে রক্তাক্ত কাটা জখম হয় এবং মোট ২৭ জন আহত হয়। তাদেরকে মারতে মারতে রক্তাক্ত অবস্থায় মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়। এলাকাবাসী খবর পেয়ে ছুটে এলে তারা মাদ্রাসা গেটে তালা দিয়ে অবস্থান নেয়।

এ পর্যায়ে মাওলানা শাহরিয়ার মাহমূদ অভিযোগ করে বলেন, পরবর্তীতে খবর পেয়ে পুলিশ আসলেও সন্ত্রাসী হামলাকারী সাদপন্থীদেরকে গ্রেফতার না করে অজ্ঞাত কারণে তাদেরকে নিয়ে ওসি সাহেব কয়েক ঘন্টা মাদ্রাসার অভ্যন্তরে অবস্থান করেন। উক্ত ঘটনাকালে হামলাকারীরা মাদ্রাসার প্রয়োজনীয় দলীল, কাগজপত্র ও মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকা চুরি করে, আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করে এবং নিয়ে যায়। অবশেষে পুলিশ পাহারা বসিয়ে হামলাকারীদেরকে বের করে নির্বিঘ্নে চলে যেতে দেয়। থানায় ২ বার চেষ্টা করেও একইভাবে রহস্যজনক কারণে ওসি মামলা নেননি।

বার বার আইন লংঘনকারীদের গ্রেফতার না করা এবং আইনের আওতায় না আনার কারণে প্রশাসন তথা সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট ৪টি দাবির উল্লেখ করে বলা হয়- (১) ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাদরাসার মসজিদকে আজান ও নামাজের জন্য খুলে দিতে হবে। (২) অনতিবিলম্বে সাদপন্থী হামলাকারীদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনতে হবে। (৩) মাদ্রাসা মুঈনুল ইসলামের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলেমগণসহ বেফাক ও কাকরাইলের ওলামা-শুরাগণের অনুমোদিত কমিটির হাতে মাদ্রাসার দায়িত্ব হস্তান্তর করা। এবং (৪) অনতিবিলম্বে ওসি ভাটারাকে প্রত্যাহার করা হোক।