মাদ্রাসা ছাত্রদের দিয়ে পশু জবাইয়ে এবার ঝামেলা!
বিশেষ প্রতিনিধি : মাদ্রাসা ছাত্রদের দিয়ে পশু জবাইয়ে এবার ঝামেলা’র শংকা করছেন বিভিন্ন মহল। কারণ এবার পশু জবাই নিয়ে সরকারি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। যা নিয়ে আলেমদের ভিন্ন মত থাকলেও সরকার পশু জবাইয়ে ১৮ বছরের কম বয়সী মাদরাসা ছাত্রদের ব্যবহার না করার নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
পবিত্র ঈদুল আজহা’য় বিশ্বব্যাপী আল্লাহর উদ্দেশ্যে লাখ লাখ পশু জবাই করা হয়। বাংলাদেশে কোরবানির পশুর বড় অংশ মাদরাসার শিক্ষার্থী জবাই করে থাকে। তবে এ বছর পশু জাবাইকারীর বয়স নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পশু জবাইয়ে ১৮ বছরের কম বয়সী মাদরাসা ছাত্রদের ব্যবহার না করার নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
গত ১১ আগস্ট দেওয়া সেই ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে আলেম ও মাদরাসা ছাত্রদের মধ্যে। তারা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে কোরবানির পশু জবাইয়ের কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। তাদের দাবি, কোরবানি পশু জবাইয়ে বয়স নয়, সক্ষমতা এবং পশু জবাইয়ের কৌশল জানা জরুরি।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ নিয়ে গত ১১ আগস্ট অনুষ্ঠিত এক সভায় স্থানীয় সরকার সচিব আব্দুল মালেক বলেন, ‘১৮ বছরের কম বয়সী মাদরাসার ছাত্রদের কোরবানির পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সিটি করপোরেশনগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনগুলো মাঠ পর্যায় বিষয়টি নজরদারি করবে।’ এর কারণ হিসেবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের শারীরিক ও মানসিক অপরিপক্কতার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বলেন, কোনো কিশোরের মধ্যে পশু কোরবানির সক্ষমতা এবং জবাইয়ের কৌশল জানা থাকলে তাকে পশু জবাইয়ে বাধা দেয়া উচিত নয়।এই বিষয়ে আল জামিয়াতুল আহলিয়া মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর সিনিয়র মুহাদ্দিস ও হেফাজতে ইলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘কোরবানির পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে বয়স নিয়ে শরিয়াহ আইনে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
পশু জবাই করার নিয়ম ও পদ্ধতি আছে, সেটা জেনে যে কেউ জবাই করতে পারবে। ফলে জবাইয়ের নিয়ম জানা জরুরি। নিয়ম না জানলে বয়স যতই হোক পশু জবাই করতে পারবে না। মাদরাসার সব ছাত্র পশু জবাই করতে যায়ও না। যারা জবাই করতে সক্ষম তারাই পশু জবাই করে থাকে।’
সরকারি হিসেব মতে এ দেশে কওমি মাদরাসার সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৩১টি। এই মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ কওমি মাদরাসার আয়ের অন্যতম উৎস। শুধুমাত্র এই ঈদুল আজহার সময়ে কোরবানির পশুর চামড়া থেকে কমপক্ষে চার মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব হয় বলে জানিয়েছেন মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা।
ফলে মাদরাসাগুলো বিশেষ করে শহর কেন্দ্রীক ব্যাপকহারে কোরবানির পশু জবাইয়ের কাজে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে অনেক চামড়া সংগ্রহ করে থাকে।এদিকে মাদরাসার অনেকে মনে করেন, সরকার কওমি মাদ্রাসার ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগের জন্য এমনটা করেছে।
এবিষয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য ধর্মীয় নিয়ম আছে। কিভাবে কোন পদ্ধতি জবাই করা হবে সেটা মানা জরুরি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কী কারণে ও কেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলো তা পরিষ্কার করা উচিত ছিল।’
ঢাকার মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া আশরাফুল মাদারিসের শিক্ষক মোহাম্মদ শাহজালাল খান বলেন, যেহেতু ইসলাম ধর্মের নিয়মে ১৮ বছরের আগেই প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেকারণে তারা ১৮ বছরের নীচে পশু জবাই না করার অনুরোধের সাথে একমত নন। তবে তিনি এও বলেছেন যে, আমরা সাধারণত অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের জবাই কাজে ব্যবহার করি না। তারা প্রাপ্ত বয়স্কদের সহযোগী হিসাবে কাজ করে থাকে।