স্টাফ রিপোর্টার,ঢাকা:
মাদাগাস্কার পোচার্ড। বিশ্বের বিরলতম পাখি। এরা আফ্রিকায় অবস্থিত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপ মাদাগাস্কারে এখনো টিকে আছে। দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের হাঁসের মতো।
এদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন জলাভূমি। কিন্তু মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে এই পাখির বসবাসের উপযোগী সেই জলাভূমি বা আশ্রয়গুলো ধ্বংসের ফলে তাদের খাবারের চাহিদাও মেটানো যাচ্ছে না। মাদাগাস্কারে একটি ‘অভয়াশ্রম’ তৈরি করে প্রজাতিটির বংশরক্ষার চেষ্টা করছেন প্রাণী সংরক্ষণবিদেরা। খবর বিবিসির।
মাদাগাস্কার পোচার্ডের ৯৬ শতাংশ ছানাই জন্মের দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে মারা যাচ্ছে। বনজঙ্গল ধ্বংস করা, খামার তৈরি, মাছ চাষসহ মানুষের তৈরি নানা কারণই এ জন্য দায়ী। পাখিটির ওপর পরিচালিত একটি গবেষণার ভিত্তিতে ওয়াইল্ডফাউল অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ডস ট্রাস্টের (ডব্লিউডব্লিউটি) প্রাণী সংরক্ষণবিদেরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিবেদনটি বার্ড কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
ডব্লিউডব্লিউটির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে মাত্র ২৫টি বুনো মাদাগাস্কার পোচার্ড টিকে আছে। পাখিটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মাদাগাস্কারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেমানভিকা এলাকার একাধিক হ্রদসংলগ্ন একটি জলাভূমিকে ‘সংরক্ষিত’ ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে ২০০৬ সালে নতুন করে দেখা মেলে পাখিটির। তারপর ডব্লিউডব্লিউটি ও তাদের অংশীদার ডুরেল ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ট্রাস্ট ও পেরিগ্রিন ফান্ড এবং অন্য সহযোগীরা প্রজাতিটির বংশরক্ষায় প্রজনন সংরক্ষণ কর্মসূচি শুরু করে। তখন থেকেই পাখিটি নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় আসে।
মাথা নিচের দিকে দিয়ে পানিতে ঝাঁপ দেওয়ার ক্ষেত্রে জুড়ি নেই মাদাগাস্কার পোচার্ডের। আইথিয়া ইনোটাটা প্রজাতির এই পাখিরা হ্রদের তলদেশ থেকে খাবার সংগ্রহ করে। ডব্লিউডব্লিউটির প্রজাতি গবেষণা বিভাগের প্রধান জিওফ হিল্টন বলেন, ‘আমাদের কাছে ১০-১১টি স্ত্রী পাখি ছিল। সেগুলোর বেশির ভাগই ডিম দিচ্ছিল; আর সেসব ডিম থেকে বাচ্চাও ফুটানো হচ্ছিল। কিন্তু বয়স দুই থেকে তিন সপ্তাহ হতে না–হতেই পাখিগুলো মরে যেতে থাকে।’
লেকের তলদেশ থেকে সংগৃহীত খাবারের নমুনা পর্যবেক্ষণ করে গবেষকেরা নিশ্চিত হন, খাবারের অপর্যাপ্ততার কারণেই ছানাগুলো মারা যাচ্ছে। ডব্লিউডব্লিউটির জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু বামফোর্ড বলেন, মাদাগাস্কারের জলাভূমিগুলো ছিল পাখিটির সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু সেখানেও তাদের খাবারের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
জিওফ হিল্টন বলেন, তাঁরা সম্প্রতি একটি হ্রদ এলাকা শনাক্ত করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, মাদাগাস্কার পোচার্ডের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সেখানে আছে। নজরদারির মধ্যে হলেও সেখানে কয়েকটি পাখিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় এই পাখির বংশবিস্তারের জন্য কাজ করতে হবে।