মাতোয়ারা গণভবন-পিঠাপুলির উৎসবে
বিশেষ প্রতিবেদক: রবীন্দ্রনাথ আমলকির ডালে ডালে শীতের হাওয়ার নাচনের কথা বলেছেন। যদ্দুর জানা যায়, গণভবনে আমলকি গাছ নেই, তবুও গতকাল সোমবার বিকেলে শীতের হাওয়ার নাচন লেগেছিল গণভবন চত্বরে। প্রতিবছরই এমন একটি দিনের অপেক্ষায় থাকে গণভবন।
কারণ এ দিনে সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার বিশিষ্টজন প্রকৃতিপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে গণভবনে আসেন। শীতের পিঠাপুলি খেতে খেতে আনন্দে মাতোয়ারা হন। গতকালও এমনি এক পিঠাপুলি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের আয়োজন ছিল বড়।
উৎসবের মধ্যমণি শেখ হাসিনা বিকেল ৫টা নাগাদ গণভবনের পেছনের বাগানের খোলা পরিসরে আয়োজিত পিঠা উৎসবে বোন শেখ রেহানা ও রেহানাপুত্র রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকে নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখে যখন এলেন, তখন অনেকের হাতেই পিঠা। তাকে তখন ঘিরে ধরে ছবি তোলা, সেলফি তোলার জন্য হুড়োহুড়ি।
সব কিছুই যথারীতি হাস্যমুখে মেনে নিলেন শেখ হাসিনা। সেই মুহূর্তে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী নন, দেশের যাবতীয় সমস্যা যেন গণভবনের অন্দরমহলে রেখে এসেছেন। এমনকি শিক্ষকদের সমস্যাও। পিঠা উৎসবে তাদেরও আনন্দময় উপস্থিতি ছিল। মাগরিবের নামাজের পর তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বসার কথা।
কয়েকশ’ কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক, শিল্পী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী নেতা, শিল্প-সাহিত্যমনস্ক আমলা, গণভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পিঠা উৎসবে উপস্থিত ছিলেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ছাড়া কোনো মন্ত্রী, দলীয় নেতারা ছিলেন না।
বাগানের চারপাশ ঘিরে সাজানো পুলিপিঠা, পাটিসাপটা, মিষ্টিচিতই, ভাপা পিঠা, শিককাবাব, খাসির কাবাব, মুরগির রোস্ট, পরোটা নান, ঠাণ্ডা পানীয় ও সব শেষে বিরিয়ানি। যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন, মিষ্টি থেকে শতহস্ত দূরে থাকতে অভ্যস্ত, তারাও ‘একদিনে আর কী হবে’ প্রকাশ্যে একথা উচ্চারণ করেই একের পর এক পিঠা-মিষ্টি গলাধঃকরণ করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী ঘুরে ঘুরে সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য সাজানো মঞ্চের সামনে নিজেই চাদর বিছিয়ে বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের অন্যদের নিয়ে বসে পড়েন। বলেন, আর কোনো কথা নয়, এখন শুধু গান, শুধু গান।
ঘুরে ঘুরে বেড়িয়ে কথা বলা, পিঠা-পুলি খাওয়ার পাশাপাশি আনন্দময় এক সঙ্গীতসন্ধ্যা উপভোগ- সকলের জন্যই গতকালের সন্ধ্যাটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সঙ্গীতানুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন আসাদুজ্জামান নূর ও প্রধানমন্ত্রীর পিএস-২ নমিতা হালদার। কতক্ষণ পিঠা উৎসবে মগ্ন থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। মাথার ওপর বড় সমস্যা শিক্ষক ধর্মঘট। তাই মাগরিবের নামাজের পর শিক্ষকদের নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসতে হলো তাকে। নবীনে-প্রবীণের মেলবন্ধন ঘটেছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। এতে শিশুশিল্পী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও স্বজনরা যশস্বী শিল্পীদের পাশাপাশি গান গেয়েছেন, নেচেছেন।
একটি গীতিনৃত্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদের কন্যা রাইসা আহমেদ সেরা পরিবেশিত একটি রবীন্দ্র সঙ্গীতের সঙ্গে শিশুরা গীতিনৃত্য পরিবেশন করে। পরে ডালিয়া আহমেদ কবিতা আবৃত্তি করেন। প্রিয়াংকা গোপ শোনান দেশাত্মবোধক গান। রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনান লাইসা আহমেদ লিসা, সাজেদ আকবর ও সালমা আকবর। রাখাইন সম্প্রদায় তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করে।এ ছাড়া শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক ড. জুলফিকার লেনিন একটি গান শোনান।
শৌখিন শিল্পীদের পাশাপাশি জনপ্রিয় যেসব শিল্পী সঙ্গীত পরিবেশন ও আবৃত্তি করেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন- খায়রুল আনাম শাকিল, শামা রহমান, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও তিমির নন্দী। এ ছাড়া মুনমুন আহমদের পরিচালনায় একটি নৃত্যনাট্যও পরিবেশন করা হয়। শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা দেশাত্মবোধক ও লোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র সাংবাদিক শফিকুর রহমান, হাসান শাহরিয়ার, মনজুরুল আহসান বুলবুল, ফরিদ আহমেদ, নাদিম কাদির, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, একাত্তর টেলিভিশনের মোজাম্মেল বাবু, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, মোজাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, নাঈমুল ইসলাম খান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক, এনায়েতুল্লাহ খান, আবেদ খান, জ. ই. মামুন, মুন্নী সাহা, রাহুল রাহা, প্রণব সাহা, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার, প্রফেসর ইমেরিটাস এ কে আজাদ চৌধুরী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. হারুনর রশীদ, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান, অভিনেতা আলী যাকের, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করীম, কবি মহাদেব সাহা, ড. ইনামুল হক, অভিনেতা ফারুক, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গীত দম্পতি রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানা, জাদুকর জুয়েল আইচ, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, নিমা আনাম, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও মীর সাবি্বর এবং আইসিটি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র জনপ্রশাসন সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, তথ্য সচিব মুর্তজা আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, ড. খলীকুজ্জমান আহমদ, ড. গোলাম রহমান, কৃষি সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, মাহবুবুল আলম এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব নজরুল ইসলাম, আশরাফুল আলম খোকন, মনিরুন নেছা নিনু, সহকারী একান্ত সচিব অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, সহকারী প্রেস সচিব আসিফ কবীর, নূর এলাহী মিনা আমন্ত্রিতদের দেখভাল করেন।