মহা প্লাবনের মত অবস্থায় ডুবছে ঢাকা!
স্টাফ রিপোর্টার : শ্রাবনের মহা বৃষ্ঠিতে আজ যেন ঢাকা ডুবছে। মগবাজার থেকে মতিঝিল কোথায় কোথাও হাঁটু পানি কোথাওবা রিকসার পাদানি পর্যন্ত ডুবছে।ভুক্তভোগীরা জাতিরকন্ঠ প্রতিনিধিদের বলছেন এ যেন মহাপ্লাবনের মত অবস্থা! রাজধানীর কোথাও পানি ছাড়া নেই। কোথাও ইঞ্জিনে পানি ঢুকে গাড়ি অচল, কোথাও সিএনজি অটো অচল এবং কোথাও রিকসা উল্টো বিচ্ছি অবস্থায় আজ অফিসগামীদের নাজেহাল অবস্থা।
আজ বুধবার ভোর ৬টা থেকে এমন টানা বৃষ্ঠি চলছে দুপুর ২টা অবধি। কখনো টিপটিপ, কখনো মাঝারি ধারার বর্ষণ, আবার কখনো মুষল ধারার বৃষ্টিতে গেলো দু’দিন ধরে ভিজছে রাজধানী। তবে আজকের অবস্থা একেবারে নাকাল হওয়ার মত! কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ঢাকার জনজীবন।
এর মধ্যে মঙ্গলবার রাত থেকে অবিরাম ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে মহাদুর্ভোগে এখন নগরবাসী। অফিসগামী চাকরিজীবীদের যানজট আর জলজটের সঙ্গে এক ধরনের যুদ্ধ করেই চলতে হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আজ ঘুরে দেখা গেছে বৃষ্টিতে মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ হয়ে একেবারে ফার্মগেট পর্যন্ত ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে সবচেয়ে বেশী ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর হাতিরঝিল সংলগ্ন মধুবাগ, খেজুরগাছ গলি, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, বেইলীরোড, কাকরাইল, বিজয় নগর, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, শাপলা চত্বর, শুক্রাবাদ, রাজাবাজার, পান্থপথ ও কলাবাগানে। বাসা থেকে বের হলেই পা রাখতে হচ্ছে রাস্তায় হাঁটু পানিতে।
দুর্গন্ধ ও ময়লা আবর্জনাযুক্ত এই হাঁটু পানি মারিয়ে কোনো মতে মেইন রোডে গিয়ে পড়লেও সেখানে পোহাতে হচ্ছে আরও ভোগান্তি। শান্তিনগরে পথের পাশে প্রতিদিন সকালেই মাছ ও তরিতরকারির বাজার বসে। কিন্তু পানির কারণে বুধবার সকালে দোকানিদের সেই বাজার গুটিয়ে রাখতে হয়েছে।
মৎস্যভবনের কাছে নিউভিশন বাসের যাত্রী বেসরকারি অফিসের চাকরিজীবী রফিক রহমান বলেন, এখানে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে বসে আছি। কিন্তু বাস নড়ার কোনো নামই নাই। বেসরকারি অফিসে চাকরি করি। সময় মতো না গেলে বেতন কাটে। যানজট তো আর অফিস বুঝবে না।
এসময় অনেককেই মুষল বৃষ্টির মধ্যে সঠিক সময়ে অফিসে যাওয়ার জন্য বাস থেকে নেমে পড়তে দেখা যায়। এমনি একজন আবুল হোসেন মিঞা। তিনি বাস থেকে নেমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশ ধরে হাঁটছিলেন। এসময় তিনি বলেন। অফিসে সঠিক সময়ে যাওয়ার জন্যই বাস থেকে নেমে পড়েছি। কিন্তু যে বৃষ্টি হচ্ছে তা ছাতায় মানবে বলে মনে হয় না।
এদিকে শাহবাগ মোড়ে এসে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশকে ঘিরে জটলা। যাত্রীদের অনেকেই তার কাছে জানতে চান এই রাস্তাটি কেন আধাঘণ্টা ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। অবশ্য ট্রাফিক পুলিশ এর কোনো উত্তর না দিয়েই কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এদিকে এই বৃষ্টিতে রিকশাচালকদেরও অনেককে পা গুটিয়ে রিকশার মধ্যে জড়সড় হয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। তবে রাজধানীতে ওয়াসার উন্নয়নকাজ চলার কারণে পাড়া-মহল্লার মানুষকে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। এই এলাকাগুলোতে রাস্তা কাটা থাকার কারণে বৃষ্টির পানি জমে রাস্তায় কাদা জমে গেছে। দেখা গেছে, ক্রিসেন্ট রোড, কাঁঠালবাগান, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, সেন্ট্রাল রোডের রাস্তাগুলোতে ওয়াসার উন্নয়নকাজ চলছে। এই এলাকার কাটা রাস্তায় বৃষ্টিতে কাদা-পানি যেন একাকার হয়ে গেছে।
আবহাওয়াবিদ মো. আফতাব জাতিরকন্ঠ কে জানান, বুধবার ঢাকায় ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।তিনি আরও জানান, আজ বিকেল থেকে বৃষ্টির মাত্রা কমতে পারে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে বৃষ্টি কমে যেতে পারে।তিনি জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। গত ১৮ জুলাই থেকে সাগরে এই সংকেত ছিল।সএদিকে সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রামসহ কিছু এলাকায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।