মন্ত্রীসহ কতিপয় বিষফোড়ায় বেকায়দায় আওয়ামী লীগ
এস রহমান : মন্ত্রীসহ কতিপয় বিষফোড়ায় বার বার বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে।কথার মারপ্যাচে এবং মুখের কথায় সরকারকে বেদায়দায় ফেলছে কয়েক মন্ত্রী। এদের কারণে সরকারের নানা অভূতপূর্ব সাফল্য ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার।
নেতাকর্মীরা জাতিরকন্ঠকে বলেছেন,দলীয় নেতা ও মন্ত্রীদের বিতর্কীত বক্তব্যে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছে আওয়ামী লীগ। ধারাবাহিক এসব ঘটনায় ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে দলটি হচ্ছে সমালোচিত। এমনটাই মনে করছেন দলের নেতারা। বলছেন, গুটি কয়েক নেতার দায় নিতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে।
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হকের শপথ ভঙ্গ দেশের রাজনীতিতে এখন আলোচিত বিষয়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করলেও প্রকাশ্যে নীরবতাই পালন করছেন নেতাকর্মীরা। শপথ ভঙ্গের পরও দুই মন্ত্রী কোন কর্তৃত্ববলে পদে বহাল রয়েছেন বিষয়টি জানতে চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী ইতোমধ্যেই দুই মন্ত্রীর কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এবং গত সোমবার হাইকোর্টে রিট করেছেন। এখন শুনানি চলছে।
বিএনপির পক্ষ থেকেও শপথ ভঙ্গের কারণে দুই মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। শপথ ভঙ্গ করায় দুই মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে কি না? এ বিষয়ের আইনি ব্যাখ্যায় দেশের আইনজীবীদের ভিন্নমত রয়েছে। তবে অধিকাংশ আইনবিদ মনে করেন বিষয়টি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর।
এদিকে কাউন্সিলে রাজনীতিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠাসহ রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের বিষয়গুলো সামনে তুলে ধরার কথা বলা হয়েছে, ঠিক এ সময়ে শপথ ভঙ্গ করা দুই মন্ত্রীকে ধারণ করা দলের নৈতিকতায় আঘাত হানে কি না? এ নিয়ে দলের ভেতরেই আলোচনা চলছে।
ওদিকে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধেও আদালতের রায় হয়ে আছে। আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, এগুলো দলের জন্য অস্বস্তিজনক, বলা যায় আওয়ামী লীগের মতো একটি দলকে ক্ষতিকর কিছু ক্ষত নিয়ে চলতে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, লাখ লাখ নেতাকর্মী দল করে তাদের সবাই মন্ত্রী হয় না। যারা মন্ত্রী হন তাদের হিসেব করে কথা বলা উচিত, সেভাবে আচরণ করা উচিত। মন্ত্রীদের কারণে দলের দুর্নাম হলে, দল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায় কেন লাখ লাখ নেতাকর্মী নেবে।
তাদের মতে, দুই মন্ত্রীর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত। তবে আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন। উদাহরণ দিয়ে ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘৯৬ মেয়াদে সে সময়ের প্রভাবশালী নেতা মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পাসপোর্ট বিষয়ক ঝামেলায় পদত্যাগ করতে হয়েছিল। দল ঝুঁকি নেয়নি। এছাড়া লতিফ সিদ্দিকীর মতো জাঁদরেল নেতাকেও মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছে। তিনি মনে করেন, হয়তো প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি ভেবেচিন্তে দেখছেন।
আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ নেতা বলেন, এখন বিষয়টি দাঁড়িয়েছে নৈতিকতার। এখানে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করার মতো কোনো আইন নেই, সংবিধানেও সুস্পষ্ট কিছু নেই। তাদের মন্ত্রী থাকা না থাকা নির্ভর করে দুই মন্ত্রীর ওপর এবং প্রধানমন্ত্রীর ওপর। ইচ্ছা করলে দুই মন্ত্রী সরে দাঁড়াতে পারেন আবার প্রধানমন্ত্রী তাদের পদত্যাগ করতে বলতে পারেন।
ওই নেতাও মনে করেন, নৈতিকতা মেনে নিয়ে তাদের চলে যাওয়াই ভালো। দলের আরেক সিনিয়র নেতা আলাপকালে বলেন, কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গম কেলেঙ্কারিসহ কিছু অভিযোগ থাকলেও এবারের বিষয়টি ভিন্ন। এবার তিনি কথা বলেছেন যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে। এখানে তার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই। দলকে এ বিষয়টিও বিবেচনা করতে হচ্ছে।
এছাড়া এখন দল তাদের পদত্যাগে বাধ্য করলে বিরোধীরা এটাকে নিয়ে ইস্যু তৈরির চেষ্টা করবে, তিলকে তাল বানিয়ে প্রচার শুরু করবে। আবার অন্যরাও তাদের পেয়ে বসতে পারে-এটাও বিবেচনা করতে হচ্ছে। এই নেতা বলেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে পদ্মাসেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক তাদের চুক্তি বাতিল করার পর সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক চুক্তি বাতিল করে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনাও হচ্ছিল। বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ ছাড়াই সরকার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে এই মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাকে তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে পদত্যাগই করতে হয়।
সাবেক রেলমন্ত্রীর অর্থকেলেঙ্কারির ঘটনায় সরকার ও দলকে মারাত্মক সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়েছে। সেই সমালোচনা কাটিয়ে উঠলেও তোপের মুখে পদত্যাগও করতে হয়েছে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে। এক এমপির সাজা নিয়ে বিব্রত পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে আওয়ামী লীগ। ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী তার কারাদন্ডে পুরো সাজা খেটে মুক্তি পাননি। অস্ত্র মামলায় তাঁর মোট ১০ বছরের সাজা হয়েছিল।
এর মধ্যে তিনি ৬২৫ দিন সাজা রেয়াত পান। এটা বাদ দেওয়ার পরও তাঁর ২ বছর ৬ মাস ১৬ দিন সাজা খাটা বাকি রয়েছে। এ খবর সংবাদপত্রে প্রকাশের পর সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের শুনানি এখন চলছে।