মন্ত্রীদের কথা’য় খালেদা’র রাজনীতি তুঙ্গে!
বিশেষ প্রতিনিধি : একেক মন্ত্রী/ একেক কথা বলছেন খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে। এনিয়ে মতবিরোধ এখন তুঙ্গে। পাশপাশি প্রকট হচ্ছে সরকারি দলের দলাদলি। সর্বশেষ খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারেন না বললেন ওবায়দুল কাদের। খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা না করা নিয়ে সরকারের মধ্যেই তৈরি হয়েছে মতানৈক্য। আইনমন্ত্রী বলছেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি করতে না দেয়ার কোনো শর্ত দেয়া হয়নি। অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী বলছেন, আইনানুযায়ী কারো দুই বছরের সাজা হলে সে নির্বাচন করতে পারে না। সেই হিসেবে বিএনপি নেত্রীর রাজনীতি করার সুযোগ নেই বলে মত তথ্যমন্ত্রীর।
জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খাদেজা জিয়ার বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাহী আদেশে কারাগারের পরিবর্তে বাড়িতে থাকার অনুমতি মেলে। তবে বাসায় চিকিৎসা নেওয়াসহ দেশ ত্যাগ না করার দুই শর্ত সাথে জুড়ে দেওয়া হয়।
তবে এবার নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারবেন কিনা এ নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বৃহস্পতিবার এমন প্রশ্ন ছিলো আইনমন্ত্রীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন রাজনীতি করতে পারবে না এমন কোনো শর্ত দেয়া হয়নি।বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্ট্যারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন, দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এর বাইরে কোনো শর্ত নাই।তিনি আরও বলেন, সরকার চায় সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হোক। এদিকে আলাদা অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, শর্ত সাপেক্ষে বেগম খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এবং সে শর্ত অনুযায়ী তিনি রাজনীতি করতে পারেন না।দেশের আইন অনুযায়ী দুই বছরের সাজা প্রাপ্ত হলে সে নির্বাচন করতে পারেনা। ২০২০ সালের মার্চ থেকে কারাগারের পরিবর্তে গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি পারবেন না তা নিয়ে ইতোমধ্যে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন সরকারের তিন মন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সেই বিতর্কে শরিক হলেন।বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়া দণ্ডিত আসামি। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না।এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন যে বিএনপি প্রধানের রাজনীতি করায় বাধা নেই।
অপরদিকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেছেন, দণ্ডিত আসামি হিসেবে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না।রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দলের এক যৌথসভায় বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের।আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে দণ্ড দিয়েছেন আদালত। তিনি সেই দণ্ড থেকে মুক্তি পাননি। মানবিক কারণে সরকার তাকে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছে। তাহলে তার রাজনীতি করার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে? দণ্ডিত একজন কয়েদি হিসেবে খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের ৩৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের রাজনীতিতে আরও চরিত্রবান লোক দরকার। ক্ষমতার মঞ্চে চরিত্রবানরা না থাকলে চরিত্রহীনদের খপ্পরে থাকবে দেশ। ভালো মানুষ না থাকলে খারাপ মানুষ দেশ চালাবে। মেধাবী মানুষ রাজনীতিতে না এলে মেধাহীনরা এমপি-মন্ত্রী হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের রাজনীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে যারা বেশি বেশি নীতির কথা যারা বলে তারাই দুর্নীতি করে। বেশি গণতন্ত্রের কথা তারাই বলে, যাদের মুখে গণতন্ত্র, অন্তরে স্বৈরাচার। এদের চিহ্নিত করতে হবে।সন্ত্রাস কত প্রকার ও কী কী তা বিএনপির চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না মন্তব্য করে কাদের বলেন, শহীদ মিনার এখন শান্তিপূর্ণ প্রভাতফেরির চমৎকার জায়গা। এই শহীদ মিনারে বিএনপি প্রথম রক্ত ঝরিয়েছে। এখন তারাই সন্ত্রাসের কথা বলে।অর্থ ছাড়া আজকাল রাজনীতি বড়ই কঠিন দাবি করে তিনি বলেন, ‘শুধু আদর্শ দিয়ে আজকাল রাজনীতি চলে না। এ দেশে এখন একজন আদর্শবাদী নেতা শুধু আদর্শের জোরে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জিততে পারেন না। টাকা ছাড়া কর্মীও পাওয়া যায় না।