• মঙ্গলবার , ২৬ নভেম্বর ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে নিখোঁজ ২শতাধিক তরুণ-জেনারেল. সাখাওয়াত


প্রকাশিত: ৪:২০ পিএম, ৬ জুলাই ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৫১ বার

বিশেষ প্রতিনিধি :  বাংলাদেশ থেকে ‘নিখোঁজ’ অন্তত দেড় থেকে দুইশ’ তরুণ মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করে gulshan_terrorist_collage-www.jatirkhantha.com.bdজঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন৷ জার্মান সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

সাখাওয়াত বলেন, ‘আমরা জানি না আমাদের গ্রাম ও শহর থেকে কত সংখ্যক যুবক নিখোঁজ হয়েছে৷ তবে পুলিশের কাছে অন্তত অর্ধশত অভিযোগ আছে৷ এর বাইরেও অনেক পরিবার নানা ভয়ে পুলিশের কাছে যায়নি৷ তাদের হিসাব আমরা জানি না৷”তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এ সংখ্যাটা দেড় থেকে দু’শ৷ তাদের একটি বড় অংশই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রয়েছে৷ এটা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক৷”

বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতায় আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন যে বিশ্ব পরিস্থিতি তাতে এখানে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সংশ্লিষ্টতা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই৷ আপনি যতই এগুলো অস্বীকার করবেন, তাতে তাদের ততই সুযোগ করে দেবেন৷’

আইএস বা আল-কায়েদা আছে কি নেই তা নিয়ে চিন্তিত নন জানিয়ে এ নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, এখানে আমার সন্তানের ওপর তাদের মতাদর্শ কাজ করছে৷ তাদের কেউ কিন্তু সিরিয়া বা ইরাক থেকে আসেনি৷’

তিনি বলেন, ‘গুলশানে যে হামলা হলো, সেখানে সন্ত্রাসীরা জানত, তারা কেউ জীবিত ফিরে যাবে না৷ ফলে তাদের সঙ্গে আলোচনা বা সমঝোতার ব্যাপার নেই৷ তারা সমঝোতা করতে আসেনি৷ তারা হত্যা করতে এসেছে এবং সারা দুনিয়ায় এটার প্রচার চেয়েছে৷’মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা কেন এ পথে যাচ্ছে সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন৷

এর আগে গুলশানের হামলায় নিহত ‘জঙ্গি’ রেহান ইমতিয়াজের বাবা ইমতিয়াজ আহমেদ বাবুল যুক্তরাষ্ট্রের এক পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তার মতো সমাজের উচ্চবিত্ত বহু পরিবারের সন্তানই এখন নিখোঁজ রয়েছে৷ নিজের সন্তানের খোঁজ করতে গিয়ে তিনি এ খবর জানতে পেরেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷

এতদিন পর পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ কোনো পরিবারের সন্তান নিখোঁজ হলে সঙ্গে সঙ্গেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, অভিযোগ করা হলে পুলিশ এবং র‌্যাব তাদের খুঁজে বের করবে৷
একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বা কোনো এলাকায় জঙ্গি তৎপরতার কথা জানা থাকলে সেটিও জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন র‌্যাব-এর মহাপরিচালক৷

তিনি বলেন, ‘গুলশানে হামলায় যেসব জঙ্গি মারা গেছে তারা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ তাদের মধ্যে একজন বাসা থেকে পাসপোর্ট নিয়ে গেছে কিন্তু মোবাইল ফোন ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রেখে গেছেন৷ আমরা ঘটনাগুলো পর্যবেণ করে দেখেছি৷ নিখোঁজের পর আর তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি৷’

র‌্যাব-এর ইন্টিলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, নিখোঁজ তরুণদের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে৷ তাদের মধ্যে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রয়েছে৷ গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজ, নিব্রাস ইসলাম ও মীর সাবিহ মোবাশ্বের ও তাসিন রওনক আন্দালিব ও তাদের বাকি সঙ্গীরা ৭/৮ মাস আগে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়৷

দু’টি শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে দেখেছে, গত দেড় বছরে উচ্চবিত্ত পরিবারের শতাধিক তরুণ স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়৷ কেউ কেউ তাদের পিতা-মাতাদের এসএমএস বা টেলিফোনে বলেছে, ‘আমার আশা আর কর না৷ তোমাদের সাথে পরকালে দেখা হবে’৷ নিখোঁজ সন্তানদের জন্য ব্যাকুল পিতা-মাতা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, ‘বাবা তুমি ফিরে এসো’৷ উত্তরে সন্তান জানিয়ে দেয়, ‘আমি যেই রাস্তায় এসেছি এখান থেকে ফেরার কোনো সুযোগ নেই৷’

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে গুলশান ২ নম্বরের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় একদল অস্ত্রধারী জঙ্গি; দেশী-বিদেশঅ অন্তত ৩৩ জন সেখানে জিম্মি হন।হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে বোমায় নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে পরের দিন শনিবার ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্রবাহিনী। ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ২০ জনের লাশ পাওয়া যায় জবাই করা অবস্থায়।
নিহতদের মধ্যে নয়জন ইটালির, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক৷ বাকি তিনজন বাংলাদেশী, যাদের মধ্যে একজনের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছিল৷