মওদুদের রাজনীতির অংক -হাসিনা প্রীতি খালেদা বাঁশ
শফিক আজিজি, ঢাকা: দুই নেত্রীর নির্বাচন, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, বিএনপির পরাজয়সহ ওয়ান ইলেভেন নিয়ে অংক কষেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ। তাঁর অংক কষার বই এর নাম ‘‘বাংলাদেশ;২০০৭-২০০৮-ইমারজেন্সি এন্ড দ্যা আফটারম্যাথ’’ ।মওদুদের এই রাজনীতির অংক বইয়ের ভাবধারায় প্রকাশ পেয়েছে-আওয়ামী জনপ্রিয়তার নেপথ্য নানা কারণ এবং বিএনপির জনপ্রিয়তা ধ্বসের নেপথ্যে তারেক কোকো প্রীতি।
‘খালেদা জিয়ার কাছে ওই সময় তাঁর নিজের দুই সন্তান তারেক ও কোকোর ভাগ্যই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো আলোচনায় যেতে রাজি ছিলেন না খালেদা জিয়া।
নানা রকম চাপেও অনড় ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সে সময়ে দেশের মানুষের নেত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন কিংবা একজন রাজনীতিবিদের চেয়েও একজন মা হিসেবে দুই সন্তানের মুক্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।’ বিএনপির নেতা ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ তাঁর নতুন বই বাংলাদেশ: ইমারজেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ: ২০০৭-২০০৮-এ এসব কথা লিখেছেন।
আজ শনিবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। বইটির প্রকাশক ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)। এ বইয়ে মওদুদ আহমদ এক-এগারোর সেনা-সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলের নানা ঘটনা বিশ্লেষণ করেছেন।
ওই সময়ে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় তিনি বইটি লিখেছেন। ইংরেজিতে লেখা এ বইয়ে সে সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে সেনা কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি দমন কমিশনের অবস্থা, বিচার বিভাগ, অর্থনীতি, রাজনৈতিক সমঝোতা, সেনাপ্রধান মইন উ আহমদের ভূমিকা ও ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে নানা বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি। এটি মওদুদ আহমদের লেখা ত্রয়োদশ বই।
বইটি প্রসঙ্গে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘কারও প্রতি বিদ্বেষ থেকে বইটি লিখিনি। আমরা যেন ইতিহাস ভুলে না যাই, সে দায়িত্ববোধ থেকে বইটি লিখেছি।’
বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাশাসকদের সমঝোতার বিষয়ে মওদুদের আহমদের পর্যবেক্ষণ হলো, ‘প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি তাঁর মাথা উঁচু করে রেখেছিলেন। তিনি দেশ ছাড়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেশেই চিকিৎসা নিতে চেয়েছিলেন। কোনো ধরনের শর্তসাপেক্ষে মুক্তি (প্যারোল) নিতে চাননি। আলোচনা চলার সময়ও নিজের রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার রেখেছিলেন।
এ ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ছাড়া পান তারেক। এর আগে ছোট ছেলে কোকোকে বিদেশে পাঠানো হয়। তারেককে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে খালেদা ও মধ্যস্থতাকারীদের আলোচনা অব্যাহত ছিল। শেষ পর্যন্ত সরকার তারেককেও বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়। কিন্তু তাদের মধ্যে কী কী শর্তে সমঝোতা হয়েছিল, সেটা বলা কঠিন। কারণ হাসিনার মতো খালেদা কখনোই এসব আলোচনার বিষয় প্রকাশ করেননি। তবে ধারণা করা হয়, খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্তটি হয়তো মেনে নিয়েছিলেন।’
দুই নেত্রীর সঙ্গে সমঝোতা
ওই সময়ে দুই নেত্রীর সঙ্গে সমঝোতা সেনাশাসকদের জন্য জরুরি ছিল বলে মনে করেন মওদুদ। তাঁর মতে, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা, সংস্কারের নামে প্রধান দুটি দলকে ভেঙে দুর্বল করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে পৃষ্ঠপোষকদের কাছে জেনারেল মইন উ আহমেদের প্রয়োজনীয়তাই প্রশ্নের মুখে পড়ে। মইন ও তাঁর সহযোগীদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তাঁর একটাই বিকল্প ছিল, সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে দেশ শাসন করা। এ বিকল্পটিও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে খুব প্রীতিকর বা সহজ ছিল না। এ সময় নির্ভুল ও প্রজ্ঞার সঙ্গে একটি সিদ্ধান্ত প্রয়োজন ছিল।
এ প্রেক্ষাপটে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেনা কতৃর্পক্ষ বিএনপির পরিবর্তে আওয়ামী লীগকে বেছে নেয় বলে মওদুদ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, সবশেষ সরকারে বিএনপি থাকার কারণে সব অন্যায় এবং ভুলের দায় তাদের ওপর ছিল । নিজেদের শাসনামলের যে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তারা গড়েছে, সেটার কারণে তাদের নৈতিক অবস্থাও জোরালো ছিল না।
খালেদা জিয়াসহ দলের শত শত জ্যেষ্ঠ নেতা কারাগারে থাকার কারণে দলও হয়ে পড়েছিল অকার্যকর। মইন উ আহমেদও চাননি বিএনপি ক্ষমতায় আসুক। কারণ খালেদা জিয়ার বিশ্বাস ভঙ্গ করার কারণে বিএনপি তার ওপর প্রতিশোধ নিতে পারে।
এ অবস্থায় মইন ও তাঁর মিত্ররা আওয়ামী লীগের মধ্যেই প্রকৃত মিত্রকে খুঁজে পান। কারণ তাঁরা কখনোই বিএনপিকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চাইবেন না। দুই নেত্রীর মধ্যকার ঘৃণার রাজনীতির কারণে হাসিনা চাইবেন প্রয়োজনে সামরিক আইন দিয়ে হলেও মইন শাসন চালিয়ে যান। বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর কারণে ১৯৮২ সালেও আওয়ামী লীগ এরশাদকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছিল।
বইয়ের বর্ণনা অনুযায়ী, ১১ জানুয়ারির জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিজেদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের প্রত্যাশা নিয়ে ওই সরকারকে সমর্থনও দিয়েছিলেন। মার্চে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় গেলে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সব কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেবেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি মইনের মাথায় তাঁকে দেশে ফিরতে না দেওয়ার পরিকল্পনা কাজ করছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসিনাকে দেশে ফিরতে দিয়ে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। একই ব্যবস্থা নেওয়া হয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে উচ্চপর্যায়ের বিচার নাটকের মাধ্যমে মইনের নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলে। সেটাও ব্যর্থ হয়। বিএনপির ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় ২০০৮ সালের মে মাসে সেনাশাসকরা হাসিনার সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসার সিদ্ধান্ত নেন।
শেরেবাংলা নগরের সাব জেলে এক মধ্যরাতের সমঝোতায় রাজি হন শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন তাঁকে মইনের নিরাপদ প্রস্থানসহ অন্য শর্তগুলো মেনে নিতে সহায়তা করে। এ সমঝোতার ধারাবাহিকতায় ১১ জুন ২০০৮ প্যারোলে মুক্তি পান হাসিনা।
বিএনপির পরাজয়—————————
মওদুদ আহমেদের মতে, ওই সময়ে সব বিপৎজনক পরিস্থিতি ও সমস্যার কারণে নির্বাচনে না যাওয়াই খালেদা জিয়ার জন্য যৌক্তিক ছিল। কিন্তু কিছু বিষয় খালেদা জিয়াকে প্রভাবিত করেছে। যেসব বিষয় খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে তার মধ্যে রয়েছে:
১. বিএনপির নির্বাচন বর্জন আবারও বিশৃঙ্খলা তৈরি করে দেশকে আবারও ২০০৭-এর আগের পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে পারে। ফলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সেনাশাসকেরা আবার প্রশাসনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারেন, যার জন্য ভবিষ্যতে তাঁকেই দায়ী করা হতে পারে।
২. এ অবস্থা তৈরি হলে তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা আবার নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার হতে পারেন। তারেক ও কোকোকে কোনো ছাড় না-ও দেওয়া হতে পারে।
৩. জামায়াত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে তাঁর ওপর অব্যাহত চাপ দিচ্ছিল। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপির অনুপস্থিতি নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারে জামায়াত। এর মধ্য দিয়ে চারদলীয় জোট শুধু অকার্যকরই হবে না, বিএনপি ইসলামপন্থী রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে না-ও জেতে অন্তত ১০০ আসন পেয়ে শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা নেবে।
নির্বাচনের ফলকে নীরব বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করেন লেখক। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিজয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে শেখ হাসিনার অবস্থান, জঙ্গিবাদের বিপক্ষে অবস্থান, ডিজিটাল বাংলাদেশের পক্ষে পরিবর্তনের আহ্বান দেড় কোটি তরুণ ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বলে তাঁর মনে হয়। পাশাপাশি ৪০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকায় চাল দেওয়া, বিনা মূল্যে সার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, প্রতিটি পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে টেনেছে।
এসব ইতিবাচক ভোটের পাশাপাশি বিএনপির নেতিবাচক ভোটও হাসিনার বিজয়কে এগিয়ে নিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। আগের বিএনপি সরকারের অপশাসন; বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ; যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গে মিত্রতা; বিএনপি সরকারের কিছু মন্ত্রীর সম্পৃক্ততায় জঙ্গিবাদের উত্থান; প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে হওয়া ভবনের ক্ষমতা, প্রভাব ও দুর্নীতি; ২০০৬ সালে তত্ত্বাধায়ক সরকার গঠনের বিতর্কটি সমাধানে ব্যর্থতার কারণে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে দায়িত্ব দেওয়ার কারণে বিএনপির কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে বলে বিশ্লেষণে তুলে ধরেন মওদুদ।
তবে ‘নীরব বিপ্লব’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মওদুদ আহমদ আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখানে বুঝিয়েছি নির্বাচন নিয়ে সুচতুর কারচুপির কথা, যা আমরা কেউই বুঝতে পারিনি। আওয়ামী লীগকে জেতাতে আগে থেকে ব্যালট বাক্স ভরে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছিলেন সেনা কর্মকর্তারা।’
জরুরি অবস্থা জারি করার পর—————————-
মওদুদ আহমদের পর্যবেক্ষণ, জরুরি অবস্থা জারি করার পর একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে হাঁটার পরিবর্তে আগের সামরিক শাসকদের মতো এ সরকারও রাজনীতিবিদদের বিপক্ষে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচার শুরু করে।
অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশ শাসন করতে একটি খুবই পরিকল্পিত রাজনৈতিক এজেন্ডা নেয় তারা। সেনাপ্রধান নিজেই রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণায় নেতৃত্ব দেন। তিনি অভিযোগ করেন, গত ৩৬ বছরে রাজনীতিবিদরা কিছুই করেননি, নিজেদের জন্য টাকা বানানো ছাড়া।
কিছুদিনের মধ্যেই এ অভিযান ব্যবসায়ী, পেশাজীবী এবং আমলাদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়ায়।
সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই এসব তরুণ কর্মকর্তা এঁদেরকে কারারুদ্ধ করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের বাইরে গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যরা কোনো মানদণ্ড ও নীতিমালা ছাড়াই দুর্নীতিবাজদের তালিকা তৈরি করে অভিযান চালান।
অন্যান্য সামরিক সরকারের মতো রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদরাই ছিলেন তাঁদের প্রধান লক্ষ্য। ওই সময় বেসামরিক প্রশাসনের বাইরে জবাদিহিহীন একটি প্রশাসন চলেছে। সেনাপ্রধান নিজে নেতৃত্বে রয়েছেন বলে দেখানোর চেষ্টা করলেও তাঁর কর্তৃত্ব নিয়েও সন্দেহ ছিল।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালিত হয়েছে মেজর এবং কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের দ্বারা। তাঁরা ছিলেন জয়েন্ট ফোর্স বা টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে। সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল, এসব অভিযানের বিষয়ে ফখরুদ্দীন আহমদের তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না।
বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার নামে তাঁরা থানা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনৈতিক কর্মী, ব্যবসায়ী, দোকান মালিক অথবা অপরাধীদের গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত তাঁরাই নিতেন, পুলিশ নয়। একইভাবে সরকারি জমিতে অবৈধ দখল উচ্ছেদের নামে শহর ও গ্রামের বাজার উচ্ছেদ করে ১০ লাখেরও বেশি ছোট ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়।
সংস্কার-সংস্কারবাদী———————————–
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পূর্ণভাবে তাদের এখতিয়ারের বাইরে আরেকটি বিষয়ে হাত দিয়েছিল বলে মনে করেন মওদুদ। বইয়ে তিনি লিখেছেন, হঠাৎ করেই কয়েকজন উপদেষ্টা বলে উঠলেন, রাজনৈতিক সংস্কার জরুরি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সে সময় প্রাসঙ্গিক প্রয়োজন ছিল নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ও পুনর্গঠনের । সেটা করাও হয়েছিল। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী নেওয়া শপথ ভঙ্গ করে রাজনৈতিক সংস্কারের নামে ‘মাইনাস টু’ নামে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের এখতিয়ার ছিল না।
সেনা কর্তৃপক্ষের সবুজসংকেত পেয়ে এ উদ্যোগে মূলধারার কিছু রাজনীতিবিদ সম্পৃক্ত হলেন। এর পেছনে দুটি কারণ ছিল। প্রথমত, দুর্নীতির অভিযোগে সরকারি সংস্থাগুলোর রোষানল ও নির্যাতন থেকে বাঁচা। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতার স্বাদ নেওয়া। এর ফলে শাসকগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় নানা দল ও উপদল গড়ে ওঠে। তারা সেনা কতৃর্পক্ষকে রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে কার্যকরভাবে যুক্ত করতে ‘জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’, ‘সর্বদলীয় জাতীয় সরকার’, ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের’ মতো ধারণা তুলে ধরেন।
জরুরি অবস্থার কারণে সব ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ থাকলেও শাসকগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় এসব দল ও গোষ্ঠী তাদের তৎপরতা অব্যাহত রাখে।
এসব দলত্যাগী নেতা ও জেনারেলরা জানতেন, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া থাকলে তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সফল হবে না। দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করতে তাই তাঁরা এ দুই নেত্রীকে মূলধারার রাজনীতি থেকে সরাতে চান।
মাইনাস টু ফর্মুলাটি এসেছে মুলত কিছু উচ্চাভিলাসী সেনা কর্মকর্তার কাছ থেকে, যাঁরা দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আরও বেশি ভূমিকা রাখতে চান। শুরুতে তাঁরা চেয়েছিলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রয়োজনে সেনাপ্রধানের সরাসরি ভূমিকা। দুই নেত্রীর পরস্পরবিরোধী অবস্থান তখনও মানুষের মনে ভালোভাবে থাকার কারণে শুরুতে তাঁরা কিছুটা জনসমর্থন পেয়েছিলেন। তাঁরা চাইলেন জোর করে দুই নেত্রীকে নির্বাসনে পাঠাতে। এতে ব্যর্থ হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় সেনাপ্রধানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখার পরিকল্পনাটিও বাতিল করতে হয়।