স্পোর্টস রিপোর্টার.ঢাকা:
হলো না- বা বলা চলে পারলো না শাকিব বাহিনী। প্রয়োজনের সময় আবারও ক্লিক করতে নাপ পেরে ভয়-ডরে একরকম ধপাস হয়ে পড়লো টাইগাররা। টাইগারদের এ অবস্থায় হতাশায় নিমজ্জিত সারাদেশ।ভয়-ডরকে পিছনে ফেলে টাইগারদের জিততে হবে এটা যতক্ষন না পর্যন্ত টাইগারদের প্রত্যয় হবে ততক্ষণ পর্যন্ত হারতে হবে।
পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে দারুণ সফল দুটি সিরিজের পর আকাশেই উড়ছিল বাংলাদেশ। আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী দিনেই মাটিতে পা মাশরাফি-বাহিনীর। পাকিস্তানকে টানা চার ম্যাচ (তিন ওয়ানডে ও এক টি-টোয়েন্টি) আর ভারতকে দুটো ম্যাচে উড়িয়ে দেওয়ার পর আজকের টি-টোয়েন্টির ফল যে হতাশায় ডুবিয়ে দেওয়ার মতোই। সবচেয়ে হতাশার হচ্ছে, এই ম্যাচের স্কোরলাইন। প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকার ১৪৮ রানের জবাবে বাংলাদেশের সংগ্রহটা এক শও পেরোল না!
অথচ, এই ম্যাচের শুরুটা কী দুর্দান্তই না করেছিল বাংলাদেশ। স্পিন দিয়ে প্রোটিয়াদের কাবু করার পরিকল্পনা বাজিমাত করল শুরুতেই। আরাফাত সানি আর নাসির হোসেন নতুন বল ভাগাভাগি করে বাংলাদেশকে এনে দিলেন স্বপ্নের সূচনা। প্রথম ওভারেই সাজঘরের পথে এবি ডি ভিলিয়ার্স। একটু পরেই কুইন্টন ডি কক। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এই রোজার দুপুরে উপস্থিত দর্শকেরা তো বটেই, নড়ে-চড়ে বসেছিলেন সারা দেশের সব ক্রিকেটপ্রেমীরাই। পাকিস্তান, ভারতের পর টাইগার-বাহিনী কী তবে ক্ষতবিক্ষত করতে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেট-শক্তিকে!
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের প্রায় পুরোটা জুড়েই থাকল বোলারদের নৈপুণ্য। আরাফাত সানি, নাসির হোসেন আর সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণির সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন হালের সেনসেশন মুস্তাফিজুর রহমান। বোলারদের লাইন-লেংথ ঠিক রেখে করা বোলিং আর আউটফিল্ডে ফিল্ডারদের দাপটে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা কিন্তু ছিলেন যথেষ্ট চাপে। তবে চাপের মধ্যেও নিজেদের পেশাদারির উদাহরণটা রাখলেন অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসি। পরিস্থিতি অনুযায়ী অধিনায়ককে সঙ্গ দিলেন জেপি ডুমিনি আর রাইলি রুশো। ডুমিনি ১৮ রান করলেও শুরুর চাপটা সামলানোর জন্য ডু প্লেসির সঙ্গে একটা জুটি (৪৬ রানের) দাঁড় করিয়ে দিয়ে যান। ডুমিনিকে ফেরান আরাফাত সানি, নাসিরের ক্যাচে। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যে ডেভিড মিলারকে সাকিব এলবির ফাঁদে ফেলে দিলে খেলার নিয়ন্ত্রণ বেশ ভালোভাবেই চলে আসে বাংলাদেশের হাতে।
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের ইনিংসের শেষটা করে পেশাদারিকে সঙ্গী করেই। ফ্যাফ ডু প্লেসির সঙ্গে রাইলি রুশো গড়ে তোলার ৫৮ রানের জুটি। প্লেসি অপরাজিত থাকেন ৭৯ রানে, রুশো ৩১ রানে।
বাংলাদেশের পক্ষে দুটি উইকেট তুলে নেন আরাফাত সানি। একটি করে উইকেট গেছে সাকিব ও নাসিরের ঝুলিতে।
১৪৯ রান করলেই জয়—এমন সমীকরণকে সামনে রেখে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের যে শুরুটার দরকার ছিল, সেটা করতে দারুণভাবেই ব্যর্থ হন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। গোড়া থেকে কেন যেন তাড়াহুড়ো শুরু করেন তারা। ফল যা হওয়ার তাই। ভালো একটা শুরুর আগেই সাজঘরের পথে হাঁটেন তামিম ইকবাল। কাইল অ্যাবটের বলে উইকেটের পেছনে ডি ককের হাতে ধরা পড়েন তিনি। সৌম্য হাত খুলে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে শর্ট বল দিয়ে ফাঁদে ফেলেন কাগিসো রাবাদা। তাঁর লাফিয়ে ওঠা বলে চালিয়ে খেলতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ডুমিনির হাতে ধরা পড়েন তিনি।
শুরুতেই দুই উইকেট পড়ে যাওয়ার চাপটা সাকিব-মুশফিক সামলাবেন—এমন প্রত্যাশা ছিল। তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান ৩৭ রান তুলে আশাও জাগিয়েছিলেন। কিন্তু ডুমিনির বলে মাত্র ১৭ রানে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে মিলারের হাতে ধরা পড়েন মুশফিক। বাংলাদেশের ‘লিটল মাস্টার’ ফিরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন লড়াই করার উদ্যম হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। শুরু হয় সাজঘরের দিকে মিছিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ফেরেন সাব্বির রহমান আর নাসির হোসেন। সাকিব ঝুলে ছিলেন। কিন্তু ৩০ বলে ২৬ রানের ইনিংসটাই বলে দিচ্ছে কতটা কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল প্রোটিয়া দল।
সাকিবের ফিরে যাওয়ার পর লিটন একটু লড়েছিলেন। দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানটা এসেছে তাঁর ব্যাট থেকেই (২২)। কিন্তু মাশরাফি, সোহাগ গাজি, আরাফাত সানি আর মুস্তাফিজুররা ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করেন ৯৬ রানেই গুটিয়ে গিয়ে।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দুটি করে উইকেট কাগিসো রাবাদা, ডেভিড ওয়াইস ও জেপি ডুমিনির। একটি করে উইকেট তুলে নেন অ্যারন ফাঙ্গিসো, কাইল অ্যাবট ও ওয়াইন পারনেল।