ভয়াল বিডিআর হত্যাযজ্ঞের দিন আজ-ফাঁসির প্রহর গুনছে দেড়শতাধিক ক্রিমিনাল!
এস রহমান : আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি সেই ভয়াল বিডিআর হত্যাযজ্ঞের দিন। বিজিবি’র সদর দফতর পিলখানায় দেশের ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ চলে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি। বিপথগামী বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের হাতে ওই দু’দিনে বিজিবি’র তখনকার মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন।
পিলখানা হত্যাযজ্ঞের আট বছর অতিবাহিত হলেও বিচার কাজ এখনও চলছে। খুব শিগগির শেষ হবে পিলখানা হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম। বর্তমানে উচ্চ আদালতে এ হত্যা মামলার শুনানি চলছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি উপস্থাপন চলছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের যুক্তি উপস্থাপন চলছে।
এর আগে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিশেষ এজলাস বসিয়ে ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি দু’টি মামলার একসঙ্গে বিচারকাজ শুরু হয়। দীর্ঘ দুই বছর বিচার কার্যক্রম শেষে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পিলখানা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। এ রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন ও ২৬২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। বেকসুর খালাস দেওয়া হয় ২৭১ জনকে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলার ডেথ রেফান্সের ওপর শুনানি চলছে।’ ৩৫৯তম কার্যদিবসে বৃহস্পতিবার আদালত ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ আরও সময় চেয়ে আবেদন করলে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আরও বলেন, ‘একই সাক্ষ্যে নিম্ন আদালতে কারও ফাঁসি, কারও যাবজ্জীবন ও অনেকের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। কিছু আসামি খালাস পেয়েছে। আসামি পক্ষ থেকে কিছু আইনি প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এসব প্রশ্নের জবাব দিতে প্রস্তুতি নিতে হবে। এছাড়াও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি রয়েছে। সেজন্যই সময়ের প্রয়োজন।’
রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। আসামিপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করেছে। সরকার পক্ষে আমাদের যুক্তি উপস্থানও শেষ পর্যায়ে। এখন আমি যুক্তি উপস্থাপন করছি। আরও কিছু বাকি আছে। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল তার চুড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন করবেন আদালতের কাছে। এরপর উচ্চ আদালত রায় দেবেন।
আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী শামীম সরদার বলেন, ‘নিম্ন আদালতের একই নথির ওপর উচ্চ আদালতে চারটি পর্যায়ে শুনানি চলছে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৭১ জনকে খালাস এবং ২৬২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে নিম্ন আদালত রায় দেন। সেখানে কিছু আসামির নিয়মিত আপিল, কিছু আসামির জেল আপিল, সরকারের পক্ষ থেকে একটি সরকারি আপিল করা হয়। এসব আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। বর্তমানে কিছু আইনি প্রশ্নে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন করছেন। সেটাও শেষ পর্যায়ে। তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে আদালত রায়ের জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘সেই রায়ের মধ্য দিয়ে উচ্চ আদালতের কার্যক্রম শেষ হবে। আগামী দু’এক মাসের মধ্যেই নিম্ন আদালতের রায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উচ্চ আদালত তাদের রায় দেবেন বলে আশা করি। হাইকোর্টের রায়ের পর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ চাইলে আপিল বিভাগে যেতে পারবেন।’
নৃশংস এ হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় লালবাগ থানায় সদর ব্যাটালিয়নের ডিএডি (উপ-সহকারী পরিচালক) তৌহিদুল আলমসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। অজ্ঞাতনামা হিসেবে কয়েক হাজার বিডিআর সদস্যকে আসামি করা হয়।মামলাটি পরে নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়।
২০১০ সালের ১২ জুলাই পিলখানা হত্যা মামলায় ৮২৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে সম্পূরক চার্জশিটে আরও ২৬ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়াও বিস্ফোরক আইনে ৭৮৭ জনকে অভিযুক্ত করে আলাদা একটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।