ভয়াবহ জঙ্গি ছক চট্টগ্রামে
স্টাফ রিপোর্টার .চট্টগ্রাম: হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার এলাকার একটি বাসা থেকে ১৯০টি গুলি, একটি এমকে ডাবলওয়ান স্নাইপার রাইফেল, বিস্ফোরক দ্রব্য ও সামরিক বাহিনীর পোশাক উদ্ধার করা হয়। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা ধরে এ অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। ঢাকার পর এবার চট্টগ্রামে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিলেছে বলে জানিয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার এলাকার একটি বাসায় প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে ডিবি ১৯০ রাউন্ড গুলি, একটি এমকে ডাবলওয়ান স্নাইপার রাইফেল, বিস্ফোরক উপাদান ও সামরিক বাহিনীর পোশাক উদ্ধার করেছে। ডিবি বলছে, এর আগে নগরের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) তিন সদস্যকে তাঁরা আটক করেছে। তাঁরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে আজ রোববার সকাল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত ওই অভিযান চলে। আটক তিনজন হলেন, মো. নাঈম (২৫), মো রাসেল (২৪) ও মো. ফয়সাল (২৫)।
অভিযান পরিচালনাকারী নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. বাবুল আক্তার জাতিরকন্ঠকে বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রাতে নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকা থেকে নাঈমকে, নালাপাড়া থেকে ফয়সালকে ও কসমোপলিটন এলাকা থেকে রাসেলকে আটক করেন। তাঁরা তিনজনই চট্টগ্রামে জেএমবির প্রধান মো ফারদিনের সহযোগী।
তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাটহাজারীর আমানবাজার এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়। দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে ডিবি।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে উদ্ধার করা অস্ত্র ও গুলি খতিয়ে দেখছে ডিবি। ছবি: সৌরভ দাশঅতিরিক্ত উপকমিশনার বাবুল আক্তার আরও বলেন, উদ্ধার হওয়া এমকে ডাবলওয়ান স্নাইপার রাইফেলের নিশানা কখনো বিফল হয় না। দেড় হাজার গজ দূর থেকেও নিশানা ঠক রাখা যায়। জেএমবির হাতে এটি কীভাবে গেল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।আজ ছয়টার দিকে আমানবাজার এলাকার ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাসাটি দোতলা। বাসার নাম হাজী ইসহাক ম্যানসন। বাসার মালিক হাজী ইসহাক দোতলায় থাকেন। নিচতলায় দুটি ফ্ল্যাট। ডিবি বলছে, একটিতে জেএমবির প্রধান ফারদিন থাকতেন।
বাড়ির মালিক মো. ইসহাক বলেন, ছয় মাস আগে নাফিস নামে একজন ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে মাসিক ছয় হাজার টাকায় বাসাটি ভাড়া নেন। কোরবানি ঈদের আগে নাফিসের স্ত্রী ও সন্তান ঢাকায় চলে যায়। মাঝে মাঝে নাফিস এই বাসায় আসতেন। জিজ্ঞেস করলে জানাতেন, বাসার কাজে পরিবার বাইরে আছে। ১০ দিন আগে নাফিস ওই বাসায় সর্বশেষ আসেন। তাঁদের কারও আচরণ দেখেই কোনো সন্দেহ হয়নি। গতকাল রাতে অভিযানের পর তাঁরা পুলিশকে বাসা থেকে অস্ত্র বের করতে দেখেছেন বলে জানান।
ডিবি মনে করছে জেএমবির চট্টগ্রামের প্রধান মো. ফারদিনই নাফিস পরিচয় দিয়ে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন।ওই বাসার সীমানাপ্রাচীরের মধ্যে ৮ থেকে ১০টি টিনের ঘর রয়েছে। সেখানকার ভাড়াটিয়ারা বলেন, তাঁরা কেউ কিছু জানতেন না।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর নগরের সদরঘাট এলাকায় তহবিল সংগ্রহের জন্য ছিনতাই করতে গিয়ে গ্রেনেড বিস্ফোরণে জেএমবির দুই সদস্য নিহত হন। আহত হন ফারদিনসহ জেএমবির কয়েকজন সদস্য। বাবুল আক্তারের ভাষ্য, আটক হওয়া রাসেল সেদিন আহত জেএমবি সদস্যদের হাতে ব্যান্ডেজসহ প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।
ঢাকার মিরপুরে ছয়তলা একটি বাসায় গত বুধবার রাত থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই বাড়ির ছয়তলা থেকে মোট ছয়জনকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা হয় হাতে তৈরি ১৬টি গ্রেনেড (আইইডি—ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস), দুটি ককটেল, বোমা বা গ্রেনেড রাখার একটি বিশেষ জ্যাকেট ও গ্রেনেড তৈরির প্রচুর উপকরণ।
এর আগে বুধবার রাতে ডিবি জেএমবির এক সদস্যকে আটক করে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাত দুইটার দিকে মিরপুরের ওই জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু করা হয়। ডিবি বলেছে, আটক সাতজনের মধ্যে তিনজন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বাকি চারজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে।