• মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৪

ভয়াবহ এটিএম কেলেংকারি -শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বুথ আমদানি


প্রকাশিত: ৯:২৫ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৯ বার

atm booth-www.jatirkhantha.com.bdএস রহমান : কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে যাচ্ছে এটিএম কেলেংকারি তদন্তে।অভিযোগ মিলেছে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে এটিএম মেশিন আমদানি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস ছাড়াও উড়োজাহাজে, কুরিয়ার সার্ভিসে অনেক মেশিন দেশে আসছে। কুরিয়ার সার্ভিসে এলসি ছাড়াই নমুনা বা স্যাম্পলের নামে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এটিএম আনা হচ্ছে। এটিএম স্থাপনে কম্পিউটার যন্ত্রাংশের মতো অনেক ছোট ছোট যন্ত্রাংশ আছে। নিয়ম অনুযায়ী, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক হার কম। এ কারণে কম্পিউটারের নামে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এটিএম আনার অভিযোগ রয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে ৫৩টি ব্যাংকের প্রায় সাত হাজার এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) বুথ চালু আছে। এনবিআরের অধীনে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, বৈধ প্রক্রিয়ায় এ পরিমাণ এটিএম মেশিন আমদানির তথ্য তাদের কাছে নেই।

প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আমদানির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছেন, গত তিন বছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত ২২টি এটিএমের চালান খালাস হয়েছে। ওই সব চালানে মাত্র ৫০০ এটিএম আনা হয়েছে। এটিএম মেশিন দেশে চালু হয়েছে আরও দশ বছর আগে। তবে তিন বছরের আগে যেসব এটিএম মেশিন আমদানি হয়েছে সেগুলোর তথ্য কাস্টমস গোয়েন্দাদের কাছে নেই।

গোয়েন্দারা বলছেন, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে দেশে বন্ধ এটিএম মেশিন আমদানি করা হয়েছে। এগুলোর মান তেমন ভালো নয়। এসব মেশিন কীভাবে এসেছে, সেটি কাস্টমস গোয়েন্দা অধিদপ্তর খতিয়ে দেখছে। শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তর থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর

এমডির কাছে গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আলাদা চিঠিতে এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য চিঠি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, যেসব সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এটিএম মেশিন সরাসরি অথবা দরপত্র কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে কেনা হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে হবে।

চলতি ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেসব প্রতিষ্ঠান এটিএম মেশিন এনেছে তাদের নাম, ভ্যাট নিবন্ধন নাম্বার, এটিএম মেশিন সংখ্যা, মেশিনের ব্যান্ড ও মডেল, আমদানির সময় কী পরিমাণ উৎসে কর দেওয়া হয়েছে_ এসব তথ্য দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।

সূত্র বলেছে, এসব তথ্য পাওয়ার পর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখবেন। প্রকৃত দাম এবং ঘোষিত মূল্য কত, তাও খতিয়ে দেখা হবে। কাস্টমসের একটি সূত্র বলেছে, এটিএম আমদানির নামে মানি লন্ডারিং হচ্ছে কি-না, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্প্রতি জালিয়াতির মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরির ঘটনা ধরা পড়ে। এরপর এটিএম মেশিনের গুণগত মান, কী পরিমাণ এটিএম বুথ আছে ইত্যাদি বিষয়ে সরকার তথ্য সংগ্রহ করছে। কারণ গ্রাহকদের মধ্যে সীমিত আকারে হলেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হলে ব্যাংকের এ সেবাটি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। বর্তমানে এটিএম গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় এক কোটি।

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের একটি সূত্র দাবি করেছে, মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে এটিএম মেশিন আমদানি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস ছাড়াও উড়োজাহাজে, কুরিয়ার সার্ভিসে অনেক মেশিন দেশে আসছে। কুরিয়ার সার্ভিসে এলসি ছাড়াই নমুনা বা স্যাম্পলের নামে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এটিএম আনা হচ্ছে। এটিএম স্থাপনে কম্পিউটার যন্ত্রাংশের মতো অনেক ছোট ছোট যন্ত্রাংশ আছে। নিয়ম অনুযায়ী, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক হার কম। এ কারণে কম্পিউটারের নামে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এটিএম আনার অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া উড়োজাহাজে আনা বেশিরভাগ এটিএম মেশিন মিথ্যা ঘোষণায় আসছে। ফলে অবৈধ পথে বহু মেশিন আসছে বলে শুল্ক গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন। এখন এসব অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছেন তারা।

যোগাযোগ করা হলে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, এটিএম মেশিন আমদানির নামে মান্ডি লন্ডারিং হচ্ছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, যে পরিমাণ এটিএম আছে, বৈধ পথে তার চেয়ে অনেক কম আমদানি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বাকি মেশিন কীভাবে আনা হয়েছে। এসব বিষয় তদন্তে উঠে আসবে। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সভাপতি আনিস এ খান বলেন, ব্যাংক খাতে এটি অভিনব জালিয়াতির ঘটনা। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশে তিন ধরনের এমটি মেশিন ব্যবহৃত হয়। এনসিআর, উইংকর ও জিআরজি। কিছু আসে জার্মানি থেকে। বাকি চীন থেকে। এটিএম কার্ড দু’ধরনের। একটি হচ্ছে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ। অন্যটি চিপ কার্ড। এসব কার্ডের ভেতরে কালো দাগ আছে, যেখানে তথ্য সংরক্ষণ থাকে। ম্যাগনেটিক সহজেই নকল করা যায়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকের সংরক্ষিত তথ্য চুরি করা যায়। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, ম্যাগনেটিক কার্ডের চেয়ে চিপ কার্ড অনেক নিরাপদ। আমাদের দেশে বেশিরভাগ ব্যাংক ম্যাগনেটিক কার্ড ব্যবহার করছে। চীন থেকে আমদানি করা ম্যাগনেটিক কার্ড মানের দিক থেকে ভালো নয়।