• শুক্রবার , ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ভোলার সুইসাইড বোমারু শাকিরার অজানা অধ্যায়-


প্রকাশিত: ৩:৫৫ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৫ বার

সাইফুল বারী মাসুম : ভোলার সুইসাইড বোমারু শাকিরা শরীরে লাগানো ছিল সুইসাইডাল ভেস্ট। এ gongi-sakira-www-jatirkhantha-com-bdসঙ্গে লাগানো ছিল গ্রেনেড। গ্রেনেডগুলো ছিল শক্তিশালী। এই সুইডাইডাল ভেস্ট গ্রেনেড ফাটিয়েই আত্মহত্যা করে জঙ্গি সাকিরা। গোয়েন্দারা বলেছে, সুইসাইডাল ভেস্ট জঙ্গিদের নতুন প্রযুক্তি।

গোয়েন্দারা জানায়, রাজধানীর পূর্ব আশকোনার ‘সূর্য ভিলা’র জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী বোমায় নিহত নারীর নাম শাকিরা। বাড়ি ভোলায়। তিনি গত অক্টোবরে তেজগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির সদস্য রাশেদুর রহমান ওরফে সুমনের স্ত্রী। সুমন গ্রেপ্তার হওয়ার পরই শাকিরা নব্য জেএমবিতে যোগ দেন।

gongi-sakira-www-jatirkhantha-com-bdআজ বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দারুস সালাম এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানানো হয়।

গত ১৭ অক্টোবর রাতে তেজগাঁও এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন জেএমবির সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ তখন জানিয়েছিল, জঙ্গি সংগঠনের জন্য অস্ত্র কেনা এবং কারাবন্দী নেতাদের মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের জন্য তাঁরা ডাকাতি করতেন।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া সাতজন ছিলেন মো. জুয়েল সরকার ওরফে সোহরাব ওরফে সরকার (৩২), মো. রাশেদ ওরফে কাকলীর বাবা (২৭), মো. সেন্টু হাওলাদার ওরফে জাহিদ (২৬), নাজমুল হাসান ওরফে নয়ন ওরফে নরেশ (২৩), মো. আবদুল বাসেদ (২২), মো. কাসেম ওরফে কাওসার ওরফে কাসু (২০) ও মো. আবু বকর সিদ্দিক ওরফে শুভ্র ওরফে আকাশ (২০)।

গতকাল সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়া পুরোনো জেএমবির সক্রিয় পাঁচ সদস্য হলেন মো. রিয়াজ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার ওরফে রাকিব, মো. আবু বিন সাঈম ওরফে বাপ্পী ওরফে অপু, কাজী আবদুল্লাহ আল ওসমান ওরফে আহসান, মো. সোহাগ ওরফে চেয়ারম্যান ও মো. মামুন ওরফে হিমেল। তবে সংবাদ সম্মেলনে তাঁদের ঠিকানা বা পূর্ণাঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিরা জানান যে তাঁরা রাজশাহী এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত জিয়া, হায়দার, শহীদুল্লাহর নির্দেশ ও পরামর্শ মোতাবেক থার্টি ফাস্ট নাইটে ঢাকায় নাশকতার লক্ষ্য নিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের তরল ও পাউডার-জাতীয় ৩০ কেজি বিস্ফোরক পদার্থ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও বই উদ্ধার করা হয়েছে।

মনিরুল বলেন, পুরোনো জেএমবির এই সদস্যরা ডাকাতি ও ছিনতাই করে জীবিকা নির্বাহ ও সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে থাকেন। এ রকমই কোনো কিছু করার জন্য তাঁরা ঢাকায় এসেছিলেন।

এই গ্রুপের প্রধান রিয়াজ। জানা যায়, রিয়াজ কিছুদিন আগে ভারতে গিয়েছিলেন। সেখানে আরেক জঙ্গি নেতা সালেহউদ্দিন সালেহিনের সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়ে দেশে ​ফেরেন। গত অক্টোবরে জেএমবির যে গ্রুপটিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের তথ্যমতে গতকাল এই গ্রুপটিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আশকোনার জঙ্গি আস্তানা ১৯টি তাজা গ্রেনেড সম্পর্কে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, এসব গ্রেনেড ছিল হাতে তৈরি। এর মধ্যে কিছু ছিল বেশ শক্তিশালী। আর সুইসাইডাল ভেস্টের থাকা গ্রেনেডগুলো ছিল শক্তিশালী। সুইসাইডাল ভেস্ট ছিল জঙ্গিদের নতুন প্রযুক্তি।

শক্তিশালী গ্রেনেড হলে আত্মঘাতী ওই নারীটির ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা—সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, আত্মঘাতী নারীটি যে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তার মধ্যে কিছু ফুটেছে, কিছু ফোটেনি। অভিযানের পর মনিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে করে বলেছিলেন, আত্মঘাতী নারীটি যখন বিস্ফোরণ ঘটাতে যাচ্ছিলেন, তখন পুলিশও তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল।

কিন্তু ময়নাতদন্তে গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বলা হয়, বোমার আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তে গুলির চিহ্ন কেন পাওয়া গেল না, তা জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলি হয়তোবা ওই নারীর শরীরে ঢুকে বের হয়ে গিয়েছিল।