ভেজাল ঘি বিক্রেতা নিয়াজের দাপটে সাজার পর জামিন নিয়ে তোলপাড়
আদালত রিপোর্টার : ভেজাল ঘি বিক্রেতা আগোরা’র মালিক নিয়াজ রহিম এর দাপটে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত তাকে সাজা দিয়ে ফের জামিন দেয়ায় ভোক্তামহলে তোলপাড় চলছে। একই আদালতে কয়েক ঘন্টা ব্যবধানে দুই পদক্ষেপ কেন তা নিয়ে’ও চলছে নানা সমালোচনা। অভিযোগ রয়েছে ভেজাল ঘি বিক্রেতা আগোরা’র প্রতি পক্ষ’ নেয়ার’ও। বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে মামলার ৯ বছর পর এই রায় হওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরলেও ফের নিয়াজ রহিম এর জামিন হওয়ায় নানা শংকা দেখা দিয়েছে।
কারণ, নিয়াজ রহিম আগোরার প্রায় সব শেয়ার সুইডেনভিত্তিক একটি গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাছাড়া এই নিয়াজ রহিম সিটি ব্যাংকের অপশোর কেলেংকারির সঙ্গে’ও জড়িত। ইতিমধ্যে দুদক এর অনুসন্ধান শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে নিয়াজ রহিম যে জামিনের অপব্যবহার করবেন না তা নিয়ে’ও নানা আশংকা প্রকাশ করেছেন ভোক্তামহল।
ভেজাল ঘি বিক্রির দুই মামলায় বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে সাজা হওয়ার পর আপিল করার শর্তে জামিন পেয়েছেন সুপারশপ আগোরার চেয়ারম্যান নিয়াজ রহিম। ঢাকা সিটি করপোরেশনের এ আদালতের বিচারক বিশেষ মহানগর হাকিম মো. মাহবুব সোবহানী বৃহস্পতিবার দুপুরে নিরাপদ খাদ্য আইনের এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। নয় বছর আগের এ দুই মামলায় নিয়াজ রহিমকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেয় আদালত। সন্ধ্যায় একই আদালতের অপর বিচারক মেহেদী পাভেল সুইট বিবাদীপক্ষের আবেদনে জামিন মঞ্জুর করেন।
বিবাদীপক্ষের আইনজীবী মো. সালাহউদ্দিন কবীর বলেন, “রায়ের পরপরই আমরা বিচারকের কাছে জামিনের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তিনি খারিজ করে দেন। পরে একই আদালতের অপর বিচারক আমাদের মক্কেলের অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে জজ কোর্টে আপিল করার শর্তে জামিন দিয়েছেন।” জামিন পাওয়ার পর নিয়াজ রহিম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের এই আদালত থেকে বাসায় চলে গেছেন জানিয়ে তার আইনজীবী বলেন, “আমরা যত দ্রুত সম্ভব আপিল করব।”
আগোরার চেয়ারম্যান নিয়াজ রহিম ব্যবসায়ী গ্রুপ রহিমআ ফরোজ গ্রুপের একজন পরিচালক। এই গ্রুপের আরও কয়েকটি কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন তিনি।বর্তমানে আগোরার বেশিরভাগ শেয়ার এখন রয়েছে সুইডেনভিত্তিক ইক্যুইটি ফান্ড ব্রামার অ্যান্ড পার্টনারস অ্যাসেটস ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশের হাতে। আগোরার ব্যবস্থাপনাও কার্যত ব্রামার অ্যান্ড পার্টনারসই নিয়ন্ত্রণ করছে। আদালতের নথি থেকে জানা যায়, জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৮ সালে আগোরার মগবাজার বিক্রয়কেন্দ্র থেকে ‘কুষ্টিয়ার স্পেশাল গাওয়া ঘি’ ও ‘স্পেশাল বাঘাবাড়ির ঘি’ জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে নমুনা পরীক্ষায় তাতে ভেজাল পাওয়া যায়।
ভেজাল ঘি বিক্রির অভিযোগে আগোরার চেয়ারম্যান নিয়াজ রহিমের বিরুদ্ধে ১৯৫৯ সালের নিরাপদ খাদ্য আইনে দুটি মামলা করেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের স্যানিটারি ইনস্পেক্টর ফখরুদ্দীন মোবারক। কুষ্টিয়ার ঘিয়ের উৎপাদক আবদুল কুদ্দুস এবং বাঘাবাড়ির ঘিয়ের উৎপাদক অনিল ঘোষকেও মামলায় আসামি করা হয়। মামলার বাদী ফখরুদ্দীন মোবারক জানান, মামলা হওয়ার পর আবদুল কুদ্দুস দোষ স্বীকার করে নেওয়ায় ২০০৮ সালেই তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু নিয়াজ রহিম আপিল বিভাগ পর্যন্ত যান এবং বিফল হন। পরে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে দুই মামলার বিচার শুরু হয়।
দুই মামলায় নিয়াজ রহিমকে এ আইনের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হলেও অনিল ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত।জানা গেছে, গত দেড় যুগে নগরবাসীর বাজার করার অভ্যাস পাল্টে দিয়েছে সুপার শপগুলো। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোকান, দামদরের ঝক্কি নেই, এক জায়গায় অনেক ধরনের নিত্যপণ্যের পাশাপাশি ঘরের প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র পাওয়া যায় বলে সুপার শপগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রাজধানীর পাশাপাশি এই ধরনের দোকান এখন বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি জেলা শহরগুলোতেও চালু হচ্ছে।
তবে প্রায়ই সুপার শপগুলোতে মেয়াদউত্তীর্ণ ও ভেজাল পণ্য বিক্রি, ওজনে কারচুপিসহ নানা অভিযোগ উঠে। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে নামিদামী প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা, কারাদণ্ডসহ সাজাও দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একাধিকবার সাজা পেয়েছে আগোরাও। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিককে এই প্রথম সাজা দেয়া হলো নিয়াজ রহিমকে। জানাপ গেছে, দেশে নিত্যপণ্যের প্রথম চেইন সুপার শপ আগোরার যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালে। বর্তমানে ঢাকায় তাদের বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৫টি।