ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ধরবে জনতা
প্রিয়া রহমান : এবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ধরবে পাবলিক! এজন্য মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করতে বেছে নেয়া হচ্ছে উন্মুক্ত স্থান। যে মুক্তিযোদ্ধা যে এলাকার সেখানেই টানানো হবে ওই মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা। এতে যাচাই-বাছাই হবে সহজে। এজন্য উন্মুক্ত স্থানে থাকবে ‘মুক্তিযোদ্ধার তালিকা’। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হলে তাকে সহজেই এলাকার মানুষ চিহ্নিত করতে পারবে। সরকারি এক প্রতিবেদনে এসেব তথ্য মিলেছে।।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা উন্মুক্ত স্থানে টানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সরকারি অফিসের নোটিশ বোর্ডের পাশাপাশি উন্মুক্ত স্থানে (পাবলিক প্লেস) এই তালিকা টানিয়ে দেওয়া হবে। যাতে স্থানীয় জনগণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে অবগত হতে পারে; কারো বিরুদ্ধে ‘অমুক্তিযোদ্ধা’ বা ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’র অভিযোগ থাকলে সে বিষয়ে যেকোনো নাগরিক অভিযোগ জানাতে পারে। যাচাই শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাতিল করা হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ।
বন্ধ হবে সরকারি ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কেউ মুক্তিযোদ্ধা হলে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার দায়ে মামলা হবে। ফেরত দিতে হবে ভাতাসহ সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা। তবে কেউ স্বেচ্ছায় নিজের দোষ স্বীকার করে গেজেট বাতিলের আবেদন করলে তাকে সহায়তা দেবে সরকার। এ ক্ষেত্রে তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হবে।
এই পদক্ষেপের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী। তিনি দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘আগের সরকারের তালিকা অনুযায়ী গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অমুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদের ভাতা স্থগিত করা হয়েছে। আমরা ওয়েবসাইটে অমুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ চেয়েছি। এ পর্যন্ত স্বল্পসংখ্যক আবেদন পেয়েছি। কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিলছে না। আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় এরই মধ্যে অমুক্তিযোদ্ধাদের স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। যারা স্বেচ্ছায় নিজের দোষ স্বীকার করবে, তাদের আমরা সম্মান দেব। দায়মুক্তি দেওয়া হবে।’
তিনি আরো বলেন, “এ ছাড়া আমরা চাই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত করতে স্থানীয় জনগণ সরকারকে সহায়তা করুক। এ জন্য প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সরকারি অফিসের নোটিশ বোর্ডের পাশাপাশি উন্মুক্ত স্থানে এ তালিকা টানিয়ে দেওয়া হবে। যাতে স্থানীয় জনগণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে অবগত হতে পারে। কারো বিরুদ্ধে ‘অমুক্তিযোদ্ধা’ বা ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’র অভিযোগ থাকলে সে বিষয়ে যেকোনো নাগরিক অভিযোগ জানাতে পারে। যাচাই শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাতিল করা হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ। বন্ধ হবে সরকারি ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কেউ মুক্তিযোদ্ধা হলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। ফেরত দিতে হবে ভাতাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর তিন দিন পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক। এরপর গত ১৫ আগস্ট সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি ও আধাসরকারি চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের একটি তালিকা তৈরি হবে।
সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজনের চাকরি হয়েছে, এখানে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা এবং মুক্তিযুদ্ধ না করে যারা মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এর পরই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত করতে নানা উদ্যোগ শুরু করে মন্ত্রণালয়। তৈরি হয়েছে ‘অমুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণ অভিযোগ ফরম’। এ ফরম মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অমুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে অভিযোগ করা যাবে। এরই মধ্যে কয়েক শ অভিযোগ জমা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। তবে কাঙ্ক্ষিতসংখ্যক অভিযোগ না পাওয়ায় বিকল্প চিন্তা করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।