ভাষা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুই সর্বপ্রথম বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন
বিশেষ প্রতিনিধি : রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠায় বাঙালি জাতির লড়াই-সংগ্রাম আর বীরত্বের গৌরবগাঁথা অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন সর্বপ্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বে বাংলার ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল।
মহান ভাষা আন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান তুলে ধরে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। শেখ হাসিনা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জয় লিখেছেন, পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসন ও শোষণের শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতিসত্তা বিনির্মাণের প্রথম সোপান।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে না হতেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের মুখের ভাষা ‘‘বাংলা’’ কেড়ে নিতে চায়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দিলেন ‘‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’’। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলার ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হয়ে ওঠে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পূর্ববাংলার ছাত্র-জনতা।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দিলেন ‘‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’’। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলার ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র জয় লেখেন, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘট ও হরতালের আহ্বান করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই হরতাল কর্মসূচীর নেতৃত্ব প্রদান করেন। যার ফলে তার উপর পুলিশি নির্যাতন চালানো হয় এবং ঐ দিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তারের পর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠন করা হয়। সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ২৪ জন নেতৃবৃন্দকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়।
১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু আটকাবস্থায় গোপনে বৈঠক করে ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন ও সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশনা প্রদান করেন। পাশাপাশি ১৯৫২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু জেল হাসপাতালে থেকে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ২১ফেব্রুয়ারি হরতাল ডেকে গণপরিষদ ঘেরাও করার পরামর্শ দেন।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে এই আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত সংঘবদ্ধ ছাত্র-জনতাকে কোনোভাবেই দাবিয়ে রাখা যায়নি। ‘‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বাংলার আকাশ-বাতাস।
ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয় রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অগণিত শহীদের রক্তে। ভাষা আন্দোলনের গতিবেগ দমিয়ে রাখতে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে কারান্তরীণ রাখে। তবে জেলে অবস্থানকালেই বঙ্গবন্ধু ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রতিষ্ঠা’ ও ‘রাজবন্দীদের মুক্তি’-র দাবিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এক সপ্তাহের অনশন করেছিলেন।
মায়ের ভাষার অধিকার ও রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছিল বীর বাঙালি জাতির লড়াই-সংগ্রাম আর বীরত্বের গৌরবগাঁথা অধ্যায়। শহীদের রক্তে রঞ্জিত অমর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠা, আত্মবিকাশ ও আত্ম-বিশ্লেষণের দিন।ওদিকে ফেসবুকের পাশাপাশি এক্স (সাবেক টুইটার) এও পোস্ট করেছেন জয়।