‘ভালোবাসাময়’ সেই মেয়র শ্রীমঙ্গলে উদ্ধার
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি : দুই দিন নিখোঁজ থাকার পর জামালপুর সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ রুকুনুজ্জামানকে অক্ষত অবস্থায় শ্রীমঙ্গল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুর ১টার দিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নের কাকিয়াছড়া চা বাগান থেকে তাকে উদ্ধার করেছে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মো: শাহজালাল জানান, বুধবার বেলা ১টার দিকে শ্রীমঙ্গল শহরতলীর কালিঘাট ইউনিয়নের কাকিয়াছড়া চা বাগানে কালিঘাট ইউনিয়ন অফিসের সামনে একটি কালো রং এর হাইএস থেকে তাকে নামিয়ে গাড়িটি পালিয়ে যায়। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের এক পাহারাদার কাছে দাঁড়ানো ছিল। মেয়র পাহারাদারকে কাছে ডেকে তার পরিচয় দেন এবং তাকে বাঁচাতে বলেন।
পাহারাদার ইউনিয়নের সচিবকে ডেকে তাকে ইউনিয়নের অফিসে নিয়ে বসায়। খবর পেয়ে কালীঘাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা ইউনিয়নে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শ্রীমঙ্গল থানা ওসিকে জানান। শ্রীমঙ্গল থানা ওসি কে এম নজরুল ইসলাম বেলা ২টার দিকে কালীঘাট ইউনিয়ন থেকে তাকে শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে আসেন। এ ব্যপারে শ্রীমঙ্গল থানা ওসি কে এম নজরুল ইসলাম জানান, মেয়রের শারিরীক অবস্থা অস্বাভাবিক মনে হলে তিনি শ্রীমঙ্গল সদর হাসপাতাল থেকে ডাক্তার ডেকে আনেন এবং থানায় তার চিকিৎসা করান।
এ ব্যপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আহমদ শিবলী জানান, মেয়রের শারিরীক অবস্থা ভালো। তবে শরীর কিছু দুর্বল এবং চোখে ঘুমের ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। এই মুহূর্তে তার বিশ্রামের প্রয়োজন। কালীঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা জানান, তার ইউনিয়ন সচিবের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি ইউনিয়নে গিয়ে অপহৃত মেয়রের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন।
কিন্তু তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনিও গিয়ে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। তখনও তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। এ সময় প্রাণেশ গোয়ালা আরো জানান, তাকে ফেলে যাওয়া কালো হাইএসটি শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ রোড হয়ে চা গবেষণা কেন্দ্রের রাস্তায় প্রবেশ করে ইউনিয়ন অফিসের সামনে মেয়রকে নামিয়ে কালিঘাট চা বাগানের দিকে চলে যায়।
কারা তাকে ফেলে গেছে এবং কিভাবে তিনি নিখোঁজ হয়েছেন পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেনি। রোববার রাত ৯টা ১৩ মিনিটে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন সরিষাবাড়ী পৌর মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকন। তাতে বলা হয়, ‘তোমাদের এই ভালোবাসা আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না।
তোমাদের ভালোবাসার কাছে মনে হয় আমি হেরে গেলাম। কারণ, আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারলাম না। তারপরও বলতে চাই, ভালোবাসি ভালোবাসি। এই ভালোবাসা নিয়েই সবকিছু জয় করতে চাই এবং এই ভালোবাসা নিয়েই মরতে চাই। নতুন প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান যে, আমাকে হত্যা করা হলেও তোমাদের সিক্ত ভালোবাসা যেন অটুট থাকে এবং আমার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখবা।’
এ স্ট্যাটাস দেওয়ার পরদিন সোমবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকার উত্তরার একটি পার্ক থেকে নিখোঁজ হন মেয়র রোকন। সোমবার সন্ধ্যায় মেয়র রুকনের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম টুকন উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন (নম্বর-১৬১১)।