ভালবাসার লালরঙ্গে-ভালবাসুন প্রিয়জনকে!
এস রহমান : ভালবাসার লালরঙ্গে-ভালবাসুন প্রিয়জনকে! ভালোবাসা দিবস নিয়ে নানা রকম কথা প্রচলিত আছে বাংলাদেশে। বিশ্বের অনেক দেশে ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি কে ভালবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হলেও বাংলাদেশে কিন্তু এখনো দিবসটি সেভাবে পালন হয় না। এর কারণ বাংলাদেশ এখনো রক্ষণশীল দেশ। তাই এখানে ভালবাসার প্রকাশটা রক্ষণশীলতার মধ্যেই! কাউকে ঘটা করে দেখানোর মতো না।দেখা গেছে, এখানকার বেশীর ভাগ মানুষ এখনো রক্ষণশীলতাকে পছন্দ করেন। তবে তরুণ সমাজের একটি অংশ ইতিমধ্যে এই
দিবসের সঙ্গে একাত্ম হয়েছে। এদের বর্হিপ্রকাশ মেলে পার্কে । তা সত্বেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ভালোবাসার প্রকাশ খুব স্বাভাবিক ব্যাপার না, যে কারণে মানুষ খুব স্বচ্ছন্দে প্রকাশ্যে ভালোবাসার কথা বলে না। তবে অনেকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলে দেখা গেছে, প্রায় সকলেই ভালবাসার কাঙ্গাল। তাই সকলের আর্তি সপ্তাহের প্রতিটি দিন সকলের হোক ভালবাসাময়, নিজেকে ভালবাসার, প্রিয়জনকে ভালবাসার এবং দেশকে ভালবাসার।
ভালবাসা দিবস নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন বলেন, বাংলাদেশে ভালোবাসার প্রকাশ নিয়ে এখনো অনেক সামাজিক ট্যাবু আছে। কারণ পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ছোট বাচ্চারাও যেভাবে কার্ড বানায়, ফুল বা চকলেট দিয়ে উদযাপন করে, সেটা বাংলাদেশে হয়না।ফলে দিবসটিকে যতটা বানিয়ে তোলা হচ্ছে, ততটা উদযাপন হয় না। বরং এখন একে কেন্দ্র করে নানা রকম বাণিজ্যও গড়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মফস্বল বা গ্রামে এই দিনটি তেমন অর্থ বহন করেনা বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে, অনেকেই এমনটা মনে করেন।তবে, রক্ষণশীল অনেক দেশে ভালোবাসা দিবসের উদযাপনকে কেন্দ্র করে বাড়িঘর বা দোকানপাটে হামলার ঘটনা ঘটে।যেমন পাকিস্তানের ইসলামাবাদে ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।কিন্তু বাংলাদেশে এ নিয়ে হামলার ঘটনা দেখা যায়নি। এর কারণ বাংলাদেশের সংস্কৃতি অনেক সহনশীল।তবে বাংলাদেশে কিন্তু বসন্ত দিবস পালিত হয় ঘটা করে। ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত লেখা হয় পত্রিকায়। ছেলে মেয়েরা এ দিনে হলুদ কাপড় পড়েন।
মূলত এটাই বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসা দিবস।এ কারণে বাংলাদেশে বসন্ত উৎসব পালনের পরিসর বেড়েছে।আগে ১৪ই ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন হতো।১৯৮৩ সালে সেই সময়কার সরকারের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে স্মারকলিপি দিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল করে সচিবালয়ের দিকে যাবার সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব ও দীপালি সাহাসহ অন্তত ১০জন নিহত হন। অনেকে নিখোঁজ হন। এই রাজনৈতিক ঘটনা ঢেকে ফেলেছে বি-রাজনৈতিক একটি দিবস। অনেকে বলেন, একে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনেরা অব্যাহত রেখেছেন নিজেদের স্বার্থে।
আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে ভালবাসা দিবস-
আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে ভালবাসা দিবস-একটু ভিন্ন আকৃতির। ভ্যালেন্টাইন্স ডে, বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স দিবস, প্রতিবছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। এই দিনটি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালিত হয় যখন মানুষ তাদের ভালোবাসার মানুষকে কার্ড, ফুল বা চকোলেট উপহার এবং শুভকামনা দিয়ে তাদের স্নেহ ও ভালোবাসা প্রদর্শন করে ।তবে এই ভালোবাসা দিবসকে কেনই বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে কেন বলা হয়? সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কে ছিলেন?
জানা গেছে, ভ্যালেন্টাইন ডের ইতিহাস তৃতীয় শতাব্দীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন রোমে ধর্মযাজক হিসেবে কাজ করছিলেন । সেই সময় সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তার সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তরুণদের বিয়ে করাকে আইন বহির্ভূত বলে ঘোষণা করেন । তিনি মনে করতেন, যাদের স্ত্রী ও সংসার আছে তাদের তুলনায় অবিবাহিত পুরুষরা অধিকতর উন্নত যোদ্ধা হতে পারেন ।সেন্ট ভ্যালেনটাইন অনুভব করলেন এটি অন্যায়, তাই তিনি নিয়ম ভাঙ্গেন এবং গোপনে তাদের বিবাহ বিয়ের ব্যবস্থা করেন। ক্লডিয়াস যখন জানতে পারলেন, তখন তিনি সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন ।
সেখানে, তিনি কারাবন্দি থাকার সময় কারা অধ্যক্ষের এক সুন্দরী তরুনী কন্যার প্রেমে পড়েন যান এবং সে কারা ভ্যন্তরেই তারা দেখা করতেন । সম্রাট যখন তাদের সম্পর্কে জানতে পারেন তখন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করেন । ২৭০খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি যখন ভ্যালেন্টাইনকে হত্যা করা হয় তখন তিনি তার প্রেমিকাকে “ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন (from your Valentine)” লিখে সর্বশেষ একটি প্রেমপত্র পাঠিয়েছিলেন । মূলত ভ্যালেন্টাইনের বীরোচিত ভালোবাসার এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করতেই এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে, বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে বলা হয়।
কবে থেকে শুরু হয়-
ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তির সঠিক সময়কাল জানা না গেলেও । রোমানরা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে লুপারক্যালিয়া নামে একটি উৎসব উদযাপন করেছিল – যখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বসন্তকালের শুরু । এটা মনে করা হয় রোমানরা উদযাপনের অংশ হিসেবে তারা উৎসবের সময় প্রেমিক ও প্রেমিকা হবেন এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ।৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের দিকে পোপ গেলাসিয়াস ১৪ ফ্রেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা দেন । মধ্যযুগে ফ্রান্সে এবং ইংল্যান্ডের লোকেরা বিশ্বাস করতেন যে, ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি পাখিদের প্রেম-বন্ধনের ঋতু, আর সেখান থেকেই চালু হলো ফ্রেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’ ।