ভাগ হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী জাতীয় প্রেসক্লাব-বিএনপিপন্থিদের একরোখা খবরদারির কারণে-
দিনা করিম.ঢাকা: ভাগ হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী জাতীয় প্রেসক্লাব। বিএনপিপন্থি সাংবাদিকদের একরোখা খবরদারি, সদস্যপদ দিতে ধান্ধাবাজি. নানা ফন্দিফিকির, ঐতিহ্যবাহী জাতীয় প্রেসক্লাব এর নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিতে এর কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে রাখতেই প্রেসক্লাব ভাগ হয়ে যাচ্ছে।
দুই ডিইউজে (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পন্থি) যেভাবে ভাগ হয়েছে এবারও তাই হচ্ছে বলে একাধিক সিনিয়র সাংবাদিক অনলাইন দৈনিক জাতিরকন্ঠকে জানিয়েছেন।
ইতিমধ্যে লবির পাশের একটি অংশ দখল হয়েছে। সেখানে লোহার তার দিয়ে দরজা বেঁধে রেখেছেন সদস্যপদ বঞ্চিত সাংবাদিকরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যে কোন সময় কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব দুই ভাগ করে ফেলা হবে।
এদিকে প্রেসক্লাবের কোন বৈধ কমিটি বর্তমানে না থাকায় যেন সাপে বর হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদস্যপদ বঞ্চিত সাংবাদিকরা। তাঁদের মতে বিএনপিপন্থি সাংবাদিকদের অযোগ্যতা অসততা ও গোয়ারর্তুমির কারণে জাতীয় প্রেসক্লাব বিভক্ত হতে বাধ্য।
একাধিক সিনিয়র সাংবাদিক বলেছেন, এই জাতীয় প্রেসক্লাবের বিএনপিপন্থি কুচক্রি মহল সদস্যপদ দিয়েছিল একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান এবং কাদের মোল্লাকে। এই দুজনের ফাঁসির মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে জাতীয় প্রেসক্লাবের ওই পন্থি নেতারা দেশের স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের সহযোগী। তাই এদের হাত থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব কলংকমুক্ত করতে বিএনপিপন্থি কুচক্রি মহল বিতাড়নের এটাই উত্তম সময়!
ওদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাচন নিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগ-জামায়াত জোটবদ্ধভাবে প্যানেল দিয়েছে এবং সেই প্যানেলকে বিনা নির্বাচনে জয়ী ঘোষণা করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে চাপ দেয়া হয়েছিল। সেকারনে নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছে। এগুলো ডাহা মিথ্যা কথা।
প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে প্রেসক্লাব নির্বাচনের জন্য আওয়ামীলীগ সমর্থিত কোনও প্যানেল হয়নি। জামায়াতের সাথে জোট বদ্ধ হওয়া দূরের কথা। জামায়াত সমর্থিত কোনও প্যানেলও হয়নি।
এই নির্বাচনে আদৌ কোনও প্রতিদ্বন্দীতা হওয়ার কথা ছিলনা। প্রেসক্লাবে সকল সাংবাদিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সদস্যপদ উন্মুক্ত করার দাবিতে আমোদের যে আন্দোলন তার প্রেক্ষিতে প্রেসক্লাবের অখন্ডতা রক্ষায় বিবাদমান আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ফোরামের নেতৃবৃন্দ একটি সমঝোতায় পৌছেছিল।
সমঝোতা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সমর্থিত (সভাপতি সহ) ৭জন এবং বিএনপি-জামাত সমর্থিত (সাধারণ সম্পাদক সহ) ১০ জন নিয়ে সমঝোতার কমিটি গঠন করার কথা ছিল। সেই সমঝোতা মোতাবেক এক মাস আগে আওয়ামীলীগ সমর্থিত ৭ জনের নাম দেয়া হয়েছিল। এই ৭ জনের মধ্যে সমকাল সম্পাদক গোলাম সরোয়ার হবেন সভাপতি এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নইম নিজামের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন হবেন যুগ্ম সম্পাদাক।
আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্যানেল তাদের নাম চূড়ান্ত করে জমা দিলেও বিএনপি-জামাত সমর্থিত ১০ জনের নাম জমা দিতে তারা অনেক দিন থেকে তালবাহানা করছিল। অবশেষে তারা রুহুল আমীন গজীকে সাধাররণ সম্পাদক ঘোষণা করে তাদের ১০ জনের একটি তালিকা দেয়।
কেবলমাত্র এই (৭+১০) ১৭ জন ছাড়া আর কেউ নির্বাচনে দাড়াবেনা বলে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ সভাপতি প্রার্থি হিসেবে দাড়িয়ে যান এবং রহস্যজনক কারনে নইম নিজামের স্ত্রী ফরিদাও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হন। অন্যান্য পদেও প্রার্থী দেয়া হয়। ফলে সমঝোতা ভেঙ্গে যায়।
প্রেসক্লাবের কমিটির মেয়াদ দেড় মাস আগেই পার হয়ে গেছে। বর্তমান কমিটির আর কোনও বৈধতা নেই। নির্বাচন কমিশনও সময়মত নির্বাচন করতে পারেননি। ফলে সাংবিধানিক সংকট ও চুড়ান্ত বিরোধের মধ্যে নিজেদের মান বাঁচাতে নির্বাচন কমিশনের সকল সদস্য রবিবার পদত্যাগ করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাব এই মহুর্তে কোনও বৈধ কমিটি ছাড়াই শুন্যে ভাসমান রয়েছে। এরপর কি হয় তা অনিশ্চিত।