ভগবান ‘হনুমানজি’ ভেবে মুসলিম কিশোর পূজো
সেই কিশোরীর নাম ছিল দয়াময়ী। হঠাত্ এক সন্ধ্যা থেকে দয়াময়ীর কালীভক্ত শ্বশুর কালীকিঙ্করের তাঁকে দেবী বলে মনে হতে শুরু করে। তার পর থেকেই দয়াময়ী হয়ে ওঠেন ‘দেবী’। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের সেই গল্প নিয়ে সত্যজিত্ রায় সিনেমাও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু, এ সব তো গল্প-উপন্যাস-চলচ্চিত্রের বিষয়। ঘোর বাস্তবে এমনটা হয় নাকি? হয়! আনন্দবাজার।
এই কিশোরের নাম মহম্মদ রাইহান। বয়স মেরেকেটে ১৩ হবে! স্কুলে বন্ধুবান্ধবরা তাঁকে ভীষণ উত্যক্ত করে। চলে মারধরও। কারণ? রাইহানের গোটা শরীরে প্রচুর লোম। এমনকী, মুখেও। এ ছাড়া ওই কিশোরের দুই ঠোঁট যথেষ্ট পুরু, দুই ভ্রু ক্রমশ মিলিয়ে গিয়েছে মাথার চুলের সঙ্গে। নাকটাও অসম্ভব রকমের চওড়া এবং থ্যাবড়া। সহপাঠীদের অনেকেই তাকে নেকড়ে বাঘ বলে ডাকে। কিন্তু, এ সবে কিছু মনে করে না রাইহান। এটাই তার ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছে ওই কিশোর।
এর একটা উল্টো দিক আছে। আর সেখানেই দয়াময়ীর সঙ্গে গভীর মিল রাইহানের। যে কারণে তার সহপাঠীদের তাকে নেকড়ে বাঘ বলে মনে হয়, ঠিক একই কারণে রাইহানের গ্রামের লোকদের তাকে হনুমান বলে মনে হয়। সেখান থেকেই তাকে পুজো করার শুরু। শুধু তার গ্রাম নয়, আশপাশের বহু গ্রামের মানুষের কাছেই সে হিন্দুদের ভগবান ‘হনুমানজি’। ওই ‘ভক্ত’দের মতে, সে আসলে হনুমানজির এ যুগের অবতার। সেই ভাবনা থেকেই মুসলমান ওই কিশোরের পুজোপাঠ।
কিন্তু, মানুষ রাইহান এ সবে কিছু মনে করে না। তার কথায়, ‘‘কিছু মানুষ আমাকে দেখে হাসে। অন্যেরা আমার কাছে আশীর্বাদ চাইতে আসে। আমি এ সবে মোটেও গুরুত্ব দিই না।’’ এর পরে তার সংযোজন, ‘‘আমার খুব হাসি পায়, যখন দেখি আমাকে এক বার শুধু দেখবেন বলে অনেক সময় বহু দূর দূর গ্রাম থেকে মানুষজন আসেন।’’ কিন্তু, সে কি নিজেকে দেবতা বলে মনে করে?