• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ব্ল্যাকমানিতেও জালিয়াতি এসআলমের ২ছেলের


প্রকাশিত: ১:৩৪ এএম, ২০ অক্টোবর ২৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৮ বার

 

 জুনে যে দুটি পে–অর্ডার দেওয়া হয়েছিল, তার বিপরীতে প্রেরকের (এস আলমের দুই ছেলে) ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল কি না। ব্যাংক থেকে তখন জানানো হয়, ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল। কিন্তু পরে জানাজানি হয় ২০২১ সালের জুনে এস আলমের দুই ছেলে কর বাবদ যে পে–অর্ডার জমা দিয়েছিলেন, সেগুলো ভুয়া ছিল।

 

লাবণ্য চৌধুরী : দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের (এস আলম) দুই ছেলের অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করতে কর ফাঁকিতে সহায়তা করায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তিন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বা আইআরডির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার তিন সংস্থাকে আলাদা আলাদা এই চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, এস আলমের ছেলে আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলমের অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করতে মোটা অঙ্কের কর ফাঁকি দেওয়া হয়। আর এই কর ফাঁকির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলের কর কর্মকর্তা সাইফুল আলম, এ কে এম শামসুজ্জামান ও আমিনুল ইসলাম।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, কর ফাঁকির এ ঘটনাটি ঘটেছে ২০২১ সালে, চট্টগ্রামের কর অঞ্চল–১–এ। ওই বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয় সরকার। সেই সুযোগ নিয়ে এস আলমের দুই ছেলে আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম ২৫০ কোটি করে মোট ৫০০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করেন। এ জন্য ১০ শতাংশ হারে কর বাবদ প্রদেয় অর্থ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পে–অর্ডারের মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়। সরকারের দেওয়া অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার বিধান অনুযায়ী, নিয়ম ছিল ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কেউ এই সুযোগ নিলে সে ক্ষেত্রে করহার হবে ১০ শতাংশ। আর ৩০ জুনের পর কেউ এই সুযোগ নিলে তাদের ক্ষেত্রে জরিমানাসহ করের হার বেড়ে দাঁড়াবে ২৫ শতাংশে।

এস আলমের দুই ছেলে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করতে কর বাবদ অর্থ পরিশোধের যে পে–অর্ডার দিয়েছিল, তা নগদায়ন করতে গেলে অস্পষ্টতার কারণে ব্যাংক থেকে তা নগদায়ন করা হয়নি। পরে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চল থেকে এ বিষয়ে করদাতা এস আলমের দুই ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে ওই বছরের ডিসেম্বরে নতুন করে দুটি পে–অর্ডার দেয় এবং সেগুলো ডিসেম্বরে নগদায়ন হয়। কিন্তু ২০২২ সালের জুনে এসে কর অঞ্চলের যুগ্ম কমিশনার এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, যে অর্থ ডিসেম্বরে জমা হয়েছে, তার বিপরীতে জুন মাসের প্রাপ্য কর সুবিধা মিলবে কি না।

পরে এ নিয়ে তিনি ব্যাংকের কাছে জানতে চান, জুনে যে দুটি পে–অর্ডার দেওয়া হয়েছিল, তার বিপরীতে প্রেরকের (এস আলমের দুই ছেলে) ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল কি না। ব্যাংক থেকে তখন জানানো হয়, ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল। কিন্তু পরে জানাজানি হয় ২০২১ সালের জুনে এস আলমের দুই ছেলে কর বাবদ যে পে–অর্ডার জমা দিয়েছিলেন, সেগুলো ভুয়া ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের ঢাকার তদন্ত কার্যালয় থেকে বিষয়টি অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়। চলতি মাসে সেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

এনবিআরের অধিকতর তদন্তে উঠে আসে, ২০২১ সালে ভুয়া পে–অর্ডার জমা দিয়ে ৫০০ কোটি টাকা সাদা করার সুবিধা নিয়েছেন এস আলমের দুই ছেলে। তাতে তাঁরা ৭৫ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন। এমনকি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকেও এনবিআরকে জানানো হয়, ২০২১ সালে ব্যাংকটির মালিকানায় থাকা এস আলম গ্রুপের চাপে তারা ভুয়া পে–অর্ডারের বিষয়টি গোপন করতে বাধ্য হয়েছিল। এভাবে কর ফাঁকির পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এনবিআরের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ ব্যাংক ও এস আলমের দুই ছেলের প্রতিনিধির দায় পেয়েছে তদন্ত দল। এ কারণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদক, এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে আইআরডি।