ব্লাডি নাসরিন পাকিস্তানে তোলপাড়
ডেস্ক রিপোর্টার, ঢাকা: করাচির পথে পথে গ্যাংস্টার আর পাচারকারীদের সঙ্গে লড়াই করছেন এক তরুণী। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, লড়াই করে উদ্ধার করছেন বিপদ থেকে। অলৌকিক ক্ষমতায় নয়, প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে লড়াই করেই। সুন্দরী, আত্মবিশ্বাসী ও মারদাঙ্গা এই নারী সুপারহিরোর নাম ব্লাডি নাসরিন।
আত্মপ্রকাশের আগেই ব্লাডি নাসরিন তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন পাকিস্তানে। কমিকের এই সুপারহিরো চরিত্রের জনক দেশটির ডিজাইনার-কার্টুনিস্ট শাহান যাইদি। এর আগে পাকিস্তানের পুরস্কারজয়ী টেলিভিশন কার্টুন সিরিজ ‘বুরকা অ্যাভেঞ্জার’ নির্মাণে ভূমিকা রেখেছিলেন যাইদি। অবশ্য বাচ্চাদের কার্টুন সিরিজ ‘বুরকা অ্যাভেঞ্জার’ জনপ্রিয়তার পাশাপাশি বেশ বিতর্কের ঝড়ও তুলেছিল পাকিস্তানে।
শাহান যাইদির কমিক সুপারহিরো ব্লাডি নাসরিন নিয়েও দেশটিতে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একদল প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত, আরেক দল নিন্দায়। এ নিয়ে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও চলছে হইচই। কেউ বলছেন, বন্দুক আর তলোয়ার হাতের নাসরিন পাকিস্তানের নারীদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না! কেউ বলছেন, নাসরিন রুক্ষ আর মারদাঙ্গা স্বভাবের এবং যখন-তখন তাঁর মুখে সিগারেট জ্বলতে থাকে, এভাবে নেতিবাচক বিষয়কে সামনে তুলে ধরার কোনো মানে নেই। নাসরিন-ভক্তরা বলছেন, এগুলো তুচ্ছ বিষয়, আসল কথা হলো নাসরিন মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন এবং তিনি পুতু-পুতু দুর্বল নারী নয়, আত্মবিশ্বাসী এবং নিজের জোরেই বলীয়ান।
কার্টুনিস্ট শাহান যাইদি অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি জানিয়েছেন, নাসরিন চরিত্রটা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, সে কখনোই যেমন কোনো ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেবে না, তেমনি জাতি-গোত্রেরও প্রতিনিধিত্ব করবে না। এই বিষয়টা ওর নামের মধ্যেই আছে, নাসরিন পাকিস্তানে খুবই সাধারণ এবং পরিচিত একটা নাম। নাসরিন আসলে দেশের সাধারণ নারীদেরই প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু কমিকের সুপারহিরো দেখেই ওর বিশেষ কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো ক্যারিশমাটিক, যেগুলো সব মানুষের প্রত্যাশাতেই থাকে। বাস্তব জীবন আর কমিকের যতটুকু ভিন্নতা একজন সাধারণ নাসরিন আর সুপারহিরো ব্লাডি নাসরিনের পার্থক্যও ততটুকুই।
১৯৯৭ সালে কার্টুনিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করা যাইদি মনে করেন, উপমহাদেশের সংস্কৃতিতেই নারী ‘সুপারহিরো’র ধারণা আছে। তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তান-ভারতে জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী ‘দস্যুরানি’ চরিত্র থেকেই এই কমিক চরিত্রের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তাঁর কাছে ব্লাডি নাসরিন হয়তো এ যুগের একজন ‘ফুলন দেবী’। আর নাসরিন চরিত্রের হাল ফ্যাশনের পোশাক-আশাক এবং আবেদনময়ী উপস্থাপনা প্রসঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে যাইদি বলেছেন, এটা শিশুদের জন্য বানানো কমিক সিরিজ নয়, ১৮ কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সীরাই ব্লাডি নাসরিনের উপযুক্ত।
ব্লাডি নাসরিন এতটাই আলোচনায় এসেছে যে, এই চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র বানানোরও প্রস্তুতি চলছে পাকিস্তানে। দেশটির খ্যাতিমান নির্মাতা উসমান মুখতার এই গ্রাফিক নভেল বা চিত্রিত গল্পের নির্মাতা শাহান যাইদির সঙ্গে ইতিমধ্যেই পাকা কথা সেরে ফেলেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে হয়তো এ বছরের শেষ দিকে ব্লাডি নাসরিন কমিক প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই নাসরিনের ছায়া অবলম্বনে ওই ছবির কাজ শুরু হতে পারে।