ব্লগার রাজীবের খুনীদের ফাঁসি বহাল
বিশেষ প্রতিনিধি : ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন হত্যা মামলায় রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাইম অরফে দ্বীপের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই মামলায় নিম্ন আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত ছয়জনের সাজাও বহাল রেখেছে আদালত। রবিবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চ ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের উপর এ রায় দেন।
রায়ে আদালত বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ ধর্ম নিয়ে মানহানিকর মন্তব্য করলে প্রচলিত আইনে তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তবে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। একই সঙ্গে ইসলাম সম্পর্কে ইমামদের সঠিক বয়ান দিতেও অনুরোধ জানিয়েছে আদালত।
ফাঁসির আসামি রেদোয়ানুল আজাদ রানা এই মামলার শুরু থেকেই পলাতক ছিলেন। সম্প্রতি ঢাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপরই রানার আইনজীবী হাইকোর্টে ৫৬১(ক) ধারায় ডেথ রেফারেন্সে শুনানির সুযোগ চেয়ে আবেদন দাখিল করেন।
গত ৭ নভেম্বর হাইকোর্টে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার রাজীব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। ২২ কার্যদিবসব্যাপী এই শুনানি চলে। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, এই মামলার আট আসামির মধ্যে সাতজন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের দেয়া এই জবানবন্দি বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা বহাল রাখার জন্য যথেষ্ট। তিনি বলেন, এই মামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী নেই। তবে আনুষাঙ্গিক যে সাক্ষ্য-প্রমাণাদি রয়েছে তা দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, এই মামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষি নেই। এছাড়া স্বীকারোক্তিমূলক যে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে তা রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে। এই জবানবন্দি আসামিদের স্বতঃপ্রণেদিত ছিলো না। এই কারণে তারা খালাস পাওয়ার যোগ্য। গত ৯ জানুয়ারি উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রায়ের জন্য সুনিদ্দিষ্ট দিন ধার্য না করে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষ মান রাখেন। প্রায় আড়াই মাস পর হাইকোর্ট ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর রায় ঘোষণার জন্য সুনিদ্দিষ্ট দিন ধার্য করে দেয়।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পল্লবীতে নিজ বাসার সামনে ব্লগার রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ ওই হত্যার দায়ে মূল পরিকল্পনাকারী রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দ্বীপকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
এছাড়া মাকসুদুল হাসান অনিককে যাবজ্জীবন, এহসান রেজা রুম্মান, নাফিজ ইমতিয়াজ ও নাইম শিকাদরকে ১০ বছর এবং সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানীকে ৫ বছরের দণ্ড দেয়া হয়। রাহমানী ছাড়া বাকি সাত আসামি বেসরকারি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।