• সোমবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৪

‘ব্যাংক লুটপাটের হোতাদের ধামাধরা অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করে বিদায় নিন’


প্রকাশিত: ৫:০৯ পিএম, ২০ জুন ১৭ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩২ বার

সংসদ রিপোর্টার :  জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনাকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল Budget_Press+Conferance-www.jatirkhantha.com.bdআবদুল মুহিতের পদত্যাগের দাবি করেছেন সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারি অর্থব্যয়ের জন্য তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে তাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানিয়ে তারা বলেছেন, অর্থমন্ত্রীর বয়স হয়ে গেছে, তিনি অশীতিপর। অনেক বাজেট দিয়েছেন, আর কত? এখন যেন সসম্মানে পদত্যাগ করে সম্মানের সঙ্গে বিদায় নেন। নিঃশর্ত বিদায় নিয়ে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে মুক্তি দেন।

মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির দুই এমপি দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও কাজী ফিরোজ রশিদ অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করেন। এর আগে-পরে সরকারি দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রস্তাবিত বাজেটের কিছুটা প্রশংসা করলেও ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক ও কয়েকটি পণ্যের ওপর ভ্যাট কমানোর দাবিও জানান। আলোচনার শুরুতে সংসদে অনুপস্থিত না থাকলেও বেলা পৌনে ২টার দিকে সংসদে আসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ব্যাংকিং খাতের মূলধন ঘাটতি পূরণে বাজেটে দুই হাজার কোটি টাকা প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সোনালী, অগ্রণী ও বেসিকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অবস্থা দৈন্যদশা। ব্যাংকিং খাতে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এই টাকা দিয়ে বাজটের ঘাটতি পূরণ করা যেত। খেলাপি ঋণ আদায় হলে ভ্যাট বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।

তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী ব্যাংক আমানতকারী ও ট্যাক্স পেয়ারের টাকা দিয়ে ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি পূরণে দিচ্ছেন। মানুষের টাকা দিয়ে লুটপাটের টাকা পূরণ করছেন? এটা কোনো নৈতিকার মধ্যে পড়ে না। এটা অনৈতিক কাজ। তিনি নৈতিকতা ও আইনবিরোধী প্রস্তাব কীভাবে করেন? এ ধরনের প্রস্তাব কোনোভাবেই তিনি করতে পারেন না। এ টাকা তিনি শিক্ষা-স্বাস্থ্য কিংবা অন্য কোনো খাতে দিতে পারতেন।

আর অর্থমন্ত্রী কেন ২ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের মূলধন পুনর্গঠনের জন্য দেবেন? আগের তিন অর্থবছরেও তিনি এভাবে টাকা দিয়েছেন। সরকার তাদের টাকা দিতে যাবে কেন? অর্থমন্ত্রীর এই টাকা দেওয়ার কোনো অধিকার নেই। ট্যাক্সপেয়ারের টাকা দিয়ে লুটের টাকার ঘাটতিপূরণের কোনো অধিকার নেই। এজন্য তো তাকে (অর্থমন্ত্রী) আইনের আওতায় আনতে হবে। তাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনা উচিত।

ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে পদত্যাগের অনুরোধ জানিয়ে বাবলু বলেন, ‘আপনার বয়স হয়ে গেছে। আপনি তো অশীতিপর। অনেক তো বাজেট দিয়েছেন। আর কত? এখন সসম্মানে পদত্যাগ করে সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিন। নিঃশর্ত বিদায় নিয়ে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে মুক্তি দিন।’

এর আগে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে, সেগুলো আইসিসিইউতে চলে গেছে। ব্যাংকগুলোকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসা হয়েছে। এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে আছে। এর মধ্যে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। কার টাকা অবলোপন করছেন? মানুষের টাকা লুট হচ্ছে, বিদেশে পাচার হচ্ছে। এসব নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কোনও বক্তব্য নেই।

অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে জাতীয় পার্টির এই এমপি বলেন, লুটপাট কারা করছে? এরা কী আপনাদের চেয়ে, সরকারের চেয়ে শক্তিশালী? কেন তাদের আইনের আওতায় আনবেন না? বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দুদক নাকি তার বিরুদ্ধে কিছু পায়নি। শেয়ারবাজার লুটের বিষয়েও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।

তিনি বলেন, বিচিত্র দেশের বিচিত্র মন্ত্রীর বিচিত্র বাজেট। অর্থমন্ত্রী কী উন্নয়নের মহাসড়কে নাকি দুর্যোগের মহাসড়কে আছেন সেটা বিবেচনার বিষয়। এই বাজেট উন্নয়নের মহাসড়কের বাজেট নয়। এটা তো সীমাহীন দুর্গতির বাজেট, দুর্নীতির বাজেট।

ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বাবলু বলেন, ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক ভুল বার্তা দিচ্ছে।অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এ শুল্কের নাম পরিবর্তন করবেন। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন রাখলেও কানা ছেলে কানা-ই থাকে।

কেবল প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের একমাত্র মাপকাঠি নয়। অর্থমন্ত্রী মিথ্যার বেসাতি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। সত্যের কাছাকাছি থাকতে হবে। সত্যকে আলিঙ্গন করার সাহস থাকতে হবে। সুশাসন না থাকলে মানুষ উন্নয়নের সুফল পাবে না।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনার কাছে মাফ চাই, ক্ষমা চাই। আপনার কাছে আর আমরা বাজেট চাই না।’

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ২০১৭ সালে জনগনের জন্য শ্রেষ্ট তামাশা। এটা কোনো বাজেটই হয় নাই। স্পিকারের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাই, মাফ চাই। দয়া করে আমাদের মুক্তি দেন। আমরা আর আপনার কাছে বাজেট চাই না। কি বাজেট আপনে দেবেন? এটা কি ভোটের বাজেট? আগামি বছরতো ভোট। নাকি ভোট নষ্ট করার বাজেট দিয়েছেন। ভোটারদের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপ করেছেন। ভোটারদের ওপর ভ্যাট ধরেছেন। তারপরেও ভোট চান। এদেশের মানুষ এতো পাগল।

ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বসানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক ধরলেন। আবগারি শুল্ক ধরা হয় মদ গাজা, আফিম, ভাং, বিড়ি, সিগারেটের ওপর।  আপনি  জনগনের আমানতের টাকা, ন্যায্য টাকা সেই টাকার ওপর শুল্ক বসালেন। এমন বসানো বসালেন, এখন আসল থেকে টান পড়েছে। কেনো বসালেন। এটা কি ধরনের জুলুম।

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দিলেন। মানুষ টাকা রাখবে কোথায়? মানুষ কোথায় কার কাছে টাকা রাখবে? ব্যাংকে রাখতে পারবে না। টাকা কি বিদেশে নিয়ে যাবে। বিদেশে তো বড় লোকরা টাকা নিয়ে যায়। গরীবের টাকা থেকে টাকা কাটবেন। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী লুটেরাদের প্রটেকশন দিচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের আবগারি শুল্ক বসাইয়া। জনগনের ওপর ট্যাক্স বসাইয়া আখের গোছাবেন। আর ট্যাক্সের টাকা দিয়ে ব্যাংকের ভর্তুকি দেবেন । অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান করে বলেন, লুটেরাদের নাম প্রকাশ করুন। পারবেন না। আপনার সেই সৎ সাহস নেই। ইব্রাহিম খালেদ একটা রিপোর্ট দিয়েছিল সেই রিপোর্টে আপনাদের দলের লোকদের অনেকেরই  নাম আসল। প্রকাশ করলেন না।  কেনো করলেন না? কেনো ব্যবস্থা নিলেন না? একদিন জনগন ঠিকই ব্যবস্থা নেবে।

মন্ত্রীদের সমালোচনা করে ফিরোজ রশিদ বলেন, আপনারা কেবিনেটে বাজেট অনুমোদন দিয়ে এখানে সমালোচনা করেন। আপনাদের নৈতিক অধিকার কি আছে? তিনি বলেন, সেলো মেশিনের ওপর ভ্যাট বসাবেন। এই সেলো মেশিন দিয়ে নৌকা চলে। নৌকা কিস্তু আর চলবে না। নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে।

অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আয় কর ফরম এতো বড়। পূরণ করতে আপনি শেষ হয়ে যাবেন। আপনার বাপ-দাদা যারা মারা গেছে তাদের ইতিহাস লিখতে হবে। ভ্যাট আদায় করবেন  উনার মেশিন কোথায়? উনার সাব অফিস কোথায়?।

তিনি বলেন, আজকাল ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা একটা ফ্যাশান হয়ে দাড়িয়েছে। কথায় কথায় ইসলাম বিরোধী কথা বলে অতি প্রগতিশীল সাজার চেষ্টা করে। পেট খালি, পিট খালি কিছু লোক রাতের বেলায় টক শোতে গিয়ে ইসলাম বিরোধী মন্তব্য করে। মনে রাখবেন এদেশের ৯০ ভাগ লোক মুসলিম। ধর্মীয় মূলবোধে আঘাত করবে না। ভিমরুলের চাকে ঢিল ছুরবেন না ফলাফল ভাল হবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, অর্থমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকারের উদ্দেশে চারটি কবিতা পাঠ করে শোনান ফিরোজ রশিদ।

এর আগে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের ওপর হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এই সংস্কৃতি কে শুরু করেছে? ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমন যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তার মন্ত্রী ব্যারিস্টার সুলতান নিউমার্কেট মোড়ে দাঁড়িয়ে। পুলিশ পাহারা দিয়ে আমার পায়ের রগ কেটেছিল। আমার পিঠে ছুড়ি মেরেছিল। এই সংস্কৃতি কারা শুরু করেছে?

তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখলাম মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন আমি মরেও যেতে পারতাম। আমি বলতে চাই ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় ছিল তার মন্ত্রী ব্যারিস্টার সুলতান নিউ মার্কেটের মোড়ে দাঁড়িয়ে, পুলিশ পাহারা দিয়ে সন্ত্রাসী দিয়ে আমার পায়ের রগ কেটে দিয়েছিল। আমার পিঠে ছুরি মেরে ছিল।

আমি তখন মরে যেতে পারতাম। আজকে এই সংস্কৃতি কে চালু করেছে। ২০০৪ সালে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়েছে। বিএনপি’র শাসন আমলে আমাদের আওয়ামী লীগের ২২ হাজার নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। আর এই ৫ বছরে আমার এলাকায় মাত্র ২৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে।

খালেদা জিয়া ও মওদুদের বাড়ি উচ্ছেদ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়ে বেগম খালেদা জিয়া অন্যায় ভাবে ক্যানটমেন্টের বাড়িতে ছিলেন। যখন উনাকে উচ্ছেদ করা হয়। উনি কেঁদে ছিলেন। ওটা কি উনার পৈত্রিক সম্পত্তি? নাকি উনার খরিদ করা বাড়ি ছিল।

একইভাবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ অবৈধভাবে ৫০ বছর গুলশানের বাড়ি দখল করে ছিলেন। কোর্টের আদেশে তাকে সেই বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। এখন খালেদা জিয়া বলছেন, সুযোগ আসলে নাকি আমাদের এক কাপড়ে বিদায় করবেন। আমরা বলছি না এক কাপড়ে। তবে আমার মনে হয় আপনার প্রসাধনি ছাড়াই আপনাকে এদেশ ছাড়তে হবে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রজেক্টরের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পের ভিডিও চিত্র তুলে ধরেন। এসময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তাকে অভিনন্দন জানান। তারা এই ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন কিনা জানতে চান। সকলেই পারবেন বলে মন্ত্রী জানান।

এসময় মন্ত্রী ঝিলমিল প্রকল্পের ভিডিও চিত্র তুলে ধরে বলেন, বস্তিবাসীরাও আগামীতে অ্যাপাটমেন্টে থাকবে। চীন ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ এখন অ্যাপাটমেন্টের বাইরে থাকে না। অ্যাপাটমেন্টে থাকলে নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। ঝিলমিল প্রকল্পে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

সেখানে প্রত্যেকটি ২৫ তলা ভবনে সুয়ারেজ সিস্টেম, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও সোলার সিস্টেম থাকবে। সুলভে এই ফ্ল্যাট ক্রয় করা যাবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাজধানীতে বস্তিবাসীদের জন্যও ফ্ল্যাট প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।