ব্যাংকের দুষ্টুচক্রকে ধরেন! কিছু ব্যাংক বিপর্যয়ে পড়েছে-
সিপিডি ফেলো বলেছেন: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনা অনিয়ম চলছে, খেলাপি ঋণ বাড়ছে, কিছু ব্যাংক বিপর্যয়ের মধ্যেও পড়েছে। এখন আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত বা মার্জার করার বিষয় আগেই অনেকবার বলা হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার : ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ পাচার একটি ‘দুষ্টুচক্র’ সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করে তাদের ধরার দাবি তুলেছেন বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফ আয়োজিত দেশের সমসাময়িক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনা অনিয়ম চলছে, খেলাপি ঋণ বাড়ছে, কিছু ব্যাংক বিপর্যয়ের মধ্যেও পড়েছে। এখন আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত বা মার্জার করার বিষয় আগেই অনেকবার বলা হয়েছে। এজন্য আইনি দুর্বলতা ও নিয়মনীতিগুলো ঠিক করতে হবে। কারণ ব্যাংক খাত হচ্ছে অর্থনীতির প্রাণ। এ খাতের সমস্যা পুরো অর্থনীতির উপরে পড়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরের ‘দুষ্টুচক্র’ সৃষ্টি কারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই চক্র এ খাতের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার সবকিছুই এক জায়গায় নিয়ে এসেছে। এটা নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তাদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। এখানে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। আগামীতে এ খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে এ উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, ঋণ খেলাপির বিপরীতে একটি বড় অংকের অর্থ ব্যাংকের প্রভিশনিং করতে হচ্ছে। এর মানে টাকাটা অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারছে না, ব্যাংকে পড়ে থাকছে। এতে করে একদিকে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে আয় কমে যাচ্ছে অর্থাৎ ১০০ টাকার আমানতের বিপরীতে সুদ দিচ্ছি কিন্তু ব্যাংক ঋণ দিতে পারছে ৮০ টাকা। তার মানে ঋণের সুদহার বাড়াতে হচ্ছে। এটা আবার বিনিয়োগে প্রভাব ফেলছে।
চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং সে সুযোগে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে মার্কিন হস্তক্ষেপের রেশ ধরে নির্বাচনের পর আমেরিকার বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসবে কিনা তাই এখন জনমনে বড় প্রশ্ন। অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান এমন শঙ্কা উড়িয়ে না দিয়ে বরং নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার অজুহাতগুলো বন্ধের তাগিদ দিলেন সরকারকে।
সংস্কার নিয়ে সরকার যত শৈথিল্য দেখাবে মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি তত বাড়বে মনে করেন সিপিডির এই ফেলো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ এড়াতে চাইলে জনগণের সর্মথনে সরকার গঠন করতে হবে। আর্থিকখাতের সংস্কারে সরকার নির্মোহ না হলে আগামী দিনে ব্যাংকখাতের সংকট আরও বাড়বে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন ভু-রাজনৈতিক কারনেই বাংলাদেশ অনেক দেশের মাথা ব্যাথার কারন। জনগণের নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই কেবল সম্ভব মাথা উঁচু করে নিজের স্বার্থ রক্ষা করা।
সম্প্রতি ব্যাংকখাত ও অর্থ লোপাট নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীলদের মন্তব্যে নিজের হতাশার কথা জানান এ অর্থনীতিবিদ। বলেন, সিপিডির প্রত্যাশা নীতিনির্ধারকেরা সমস্যার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তা নির্বাচনী ইস্তেহারে রাখবেন।রাজনৈতিক নানা টানাপোড়েন থাকলেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভাগ্য পরিবর্তনে দিন শেষে রাজনীতিবিদের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে নীতি নির্ধারকদের আরও সমালোচনা-সহিষ্ণু হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।