‘ব্যাংকিং খাতে জবাবদিহিতা জরুরী’
স্টাফ রিপোর্টার : দেশের ব্যাংকিং খাত ‘দুর্ঘটনার ঝুঁকি’তে রয়েছে বলে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত একজন অর্থনীতিবিদ। এই খাতে নজরদারি ও স্বচ্ছতা বাড়াতে তদারকি বাড়ানোর তাগিদও দিয়েছেন তিনি। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, বেনামি ঋণ নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের ঘটনা নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে সরকারকে এই সতর্ক বার্তা দিলেন অধ্যাপক আবুল বারকাত।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনার সুরাহা হয়নি এখনও। এরই মধ্যে খেলাপি ঋণ ছাড়িয়েছে মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ শতাংশ। এই ঋণ আদায় নিয়ে রয়ে গেছে অনিশ্চয়তা।
আবার বর্তমান সরকারের আগের আমলে ছয়টি নতুন বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়। এ নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা ছিল। এই ব্যাংকগুলোর বেশ কয়েকটির অবস্থা এরই মধ্যে নাজুক হয়ে গেছে। সব শেষ অনুমোদন পাওয়া সাবেক মন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ফারমার্স ব্যাংক দুর্দশায় পড়ে ব্যাংক খাতকেই ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে সম্প্রতি সংসদীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে জানান হযেছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে।
যদিও এর মধ্যে আরও তিনটি নতুন ব্যাংককে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে বলে ২৭ নভেম্বর জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।আবার বেশ কয়েকটি পুরনো ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন নিয়ে নানা ঘটনা ঘটছে। পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে নিয়ে একাধিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আসতে চাইলে ভিন্ন গ্রুপ।
অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ সম্প্রতি এ বিষয়ে বলেছেন, নদী ও ভূমি দখলের মতো এখন দেশের ব্যাংক খাতেও ‘দখলদারিত্ব’ চলছে। খোদ অর্থমন্ত্রীও এ বিষয়ে তার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
এর মধ্যে ব্যাংকে একই পরিবার থেকে দুই জনের বদলে চার জন উদ্যোক্ত পরিচালক করা এবং তাদের মেয়াদ ছয় বছরের বদলে নয় বছর করে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ব্যাংকার এবং অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এতে ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।আবুল বারকাত এসব বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে সরকারকে সতর্ক করেন। বলেন, ‘দেশে বিভিন্ন খাতে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। তবে যা উন্নয়ন হয়েছে সব দৃশ্যমান খাতে। যেমন পদ্মাসেতু, সড়ক যোগাযোগ ইত্যাদি। তবে স্বাস্থ্য, আর্থিক ব্যাংক, বীমা ও শিক্ষা খাতে তেমন উন্নয়ন হয়নি। এই খাতগুলো অদৃশ্যমান খাত।
এই খাতে উন্নয়ন না হলে দেশে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকির আশঙ্কা থেকে যায়।’মঙ্গলবার রাজধানীতে অর্থনীতি সমিতির ২০তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বারকাত।বর্তমান সরকারের আমলে বারকাত নিজেও একটি ব্যাংকের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালে তিন রাষ্ট্রায়াত্ব জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ পান। ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন তিনি।বারাকাত বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে জবাবদিহিতার পরিবেশ নেই বললেই চলে। যার কারণে এই খাতে এত বেশি অনিয়ম। সরকারের পক্ষ থেকে সুষম তদারকি পেলে এই খাত থেকে দেশের মানুষ আরো ভালো সেবা পেত।’
‘ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদনেও অস্বচ্ছতা অব্যাহত রেখেছে। সরকার যদি ব্যাংকগুলোর উপর নজরদারি প্রয়োগ করতো তাহলে বেশিরভাগ ব্যাংক দেউলিয়ার খাতায় নাম লিখাত। ’জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার ব্যাপক ঘাটতি থাকায় ব্যাংকিং খাতে এত অনিয়ম জানিয়ে এই খাতকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার তাগিদও দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘দেশে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি ব্যাংক হয়ে গেছে। এর ফলে এই খাতে সহজেই সার্বিক নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব নয়।’অর্থমন্ত্রী নতুন তিনটি ব্যাংককে অনুমোদন দেয়ার কথা জানালেও এর বিরোধিতা করেন জামাল উদ্দিন। বলেন, ‘দেশে নতুন কোনো ব্যাংকের কোনো প্রয়োজন নেই।’ফার্মাস ব্যাংকের এমডির অপসারণের ব্যাপারে জানতে চাইলে জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ব্যাংকটিতে অনেক আগে থেকেই আইন বর্হিভূত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। সে কারণেই ব্যাংকের এমডিকে অপসারণ করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে অর্থনীতি সমিতির তিন দিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হবে বৃহস্পতিবার।সেদিন সকাল ১০টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এই সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী।