• বৃহস্পতিবার , ১৪ নভেম্বর ২০২৪

বেহাল ন্যাশনাল ব্যাংক-গ্রাহকের তালা সাভার শাখায়


প্রকাশিত: ১১:৪২ পিএম, ৭ নভেম্বর ২৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৩ বার

সাভার প্রতিনিধি : ন্যাশনাল ব্যাংকের সাভার শাখায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন গ্রাহকরা। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও টাকা না পেয়ে প্রথমে ব্যাংকের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করেন, পরে গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন গ্রাহকরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, টাকা না পেয়ে গ্রাহকরা দিন দিন মারমুখর হয়ে উঠেছেন। তবে আমরা নিরুপায়। ক্যাশে টাকা না থাকায় গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছি না।

শেষ কর্ম দিবস বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ব্যাংক খোলার সাথে সাথেই টাকা উত্তোলনে সাভার বাজার রোডে ব্যাংকের শাখায় হুমড়ি খেয়ে পড়েন গ্রাহকরা। তাদের অভিযোগ, দিনের পর দিন ঘুরেও ন্যূনতম ৫ হাজার টাকাও নিজেদের হিসাব থেকে তুলতে পারছেন না তারা।পৌরসভার কাতলাপুর থেকে আসা গ্রাহক ফরিদা ইয়াসমিন জানান, আমি ক্যান্সারের রোগী আমাকে কেমো দিতে হয়। এতদিন মেয়েকে টাকা তোলার জন্য পাঠিয়েছি একটি টাকাও তুলতে পারিনি অসুস্থ অবস্থায় নিজে এসেছি সারাদিন বসে থেকেও একটি টাকাও তুলতে পারলাম না। এখন আমার চিকিৎসা হবে কি দিয়ে!

রাজাবাড়ি থেকে আসা আর একজন গ্রাহক অ্যাডভোকেট ফারজানা ইয়াসমিন জানান, আমার পরিবারের সঞ্চয়ের ৩০ লাখ টাকা এই শাখায়। এখন জরুরি প্রয়োজন একটি টাকাও তুলতে পারছে না।কাতলাপুর থেকে আশা গ্রাহক বিপাশা ইয়াসমিন জানান, এতদিন হজে যাবার জন্য টাকা জমা করেছি। হজের নিবন্ধন করেছি এখন হজের টাকা এজেন্সিকে জমা দিতে পারছি না। টাকা না দিলে হজে যাব কি করে? বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

টঙ্গী থেকে আসা গ্রাহক সাথী বেগম জানান, তিনি সৌদি প্রবাসী। সেখান থেকেই এই শাখায় ৬ লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন। ব্যাংকের সংকটের কথা শুনে সৌদি আরব থেকে ছুটে এসেছেন টাকা তুলতে। তিনিও সারাদিন ঘুরেও একটি টাকাও তুলতে পারেননি।গ্রাহকদের হইচই বিক্ষোভ এবং ব্যাংকের শাখায় তালা ঝুলিয়ে দেবার পরিস্থিতিতে খবর দেওয়া হয় সাভার থানায়। সেখানে দেখা যায় সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মনিরুজ্জামানকে। তিনি জানান, গ্রাহকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চলছে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের সাভার শাখার ব্যবস্থাপক মো. হাসিনুর রহমান জানান, আমরা গ্রাহকদের আস্থা হারিয়েছি। আস্থা বাড়াতে হলে গ্রাহককে টাকা দিতে হবে। সেই টাকা আমি দিতে পারছিনা। কারণ ডিপোজিট জমার পরিমাণ শূন্য। অধিকাংশই তাদের মেয়াদী আমানত মেয়াদ পূর্তির আগেই ভেঙ্গে ফেলছেন। তাতে কিন্তু লাভ হচ্ছে না। কারণ ভেঙে ফেললেও আমি টাকা দিতে পারছি না।

‘পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সাপোর্ট দিচ্ছে, সেটা মহাসমুদ্রে দুই ফোঁটা জলের মতো। ব্যাংকার হিসেবে আমরা অভিশপ্ত জীবন অতিক্রম করছি। এই সমাজে মা সন্তানকে বিশ্বাস না করে স্বামী স্ত্রীকে বিশ্বাস না করে আমাদের উপর আস্থা রেখেছেন আমাদের বিশ্বাস করেছেন আমাদের এখানে তাদের অনেক কষ্টের সংসার রেখেছেন আজ আমরা তাদের কাছে বিশ্বাসভঙ্গ কারী হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, আমরা গ্ৰাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছি। এখান থেকে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর একটাই উপায় চাহিদা মত গ্রাহকদের আমানতের টাকা বুজিয়ে দেয়া। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। নইলে এই ব্যাংক তলিয়ে যাবে।
সূত্রমতে, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাভার শাখায় আমানতের পরিমাণ ২৬০ কোটি টাকা। আমানত নির্ভর এই শাখায় ঋণের স্থিতি মাত্র ২৬ কোটি টাকা। যার ৪২ ভাগই খেলাপি।