• মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৪

বেহাল দুবাই বিমানবন্দর-খাবারের হাহাকার


প্রকাশিত: ১:৫৮ এএম, ১৯ এপ্রিল ২৪ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৬৫ বার

দুবাই থেকে বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ মেহেদী হাসান : প্রবল বন্যাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের আধুনিক দুবাই বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্ঠি হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সেখানে খাবার মিলছে না। অনেকে অভুক্ত অবস্থায় হায় হায় করছেন।
আটকে পড়া যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। যদিও দুবাই কর্তৃপক্ষ বলছে আগামীতে এমন পরিস্থিতির আর সৃষ্ঠি হবেনা। সে ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তাঁরা নেবেন বলেও আশ্বাস দিচ্ছেন।

কিন্তু ভুক্তভোগী যাত্রীরা এসব আশ্বাস মানছেন না। তারা ফ্লাইটের দাবীতে বিক্ষোভ করছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক শহরগুলোর অন্যতম দুবাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অনেকে ভাবনায় পড়েছেন। ভারী বৃষ্টি ও তীব্র জলাবদ্ধতার ভবিষ্যতে আরো কি পরিণতি হয় সেটাও ভাবছে দুবাই কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত দুবাই বিমানবন্দর যেভাবে পানিতে তলিয়ে গেছে সেটি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।শহরটির বহু বাড়ি ও শপিংমল হাঁটু পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। দুবাইয়ের মতো শহরে এ ধরনের চিত্র অনেকর কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে।দুবাই বিমানবন্দর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাতিল করতে হয়েছে শতশত ফ্লাইট। বিমানবন্দরের ভেতরে চরম এক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা বিমানবন্দরের পরে দুবাই বিমানবন্দরই হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। গত বছর এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করেছে আট কোটি যাত্রী।

বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে বিমানবন্দরটি প্লাবিত হওয়ায় দুবাইগামী ও দুবাই ছেড়ে আসা ফ্লাইট কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। যদিও বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

দুবাই বিমানবন্দরের বেহাল অবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশের রাজশাহীর বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, গত তিন ধরে দুবাই বিমানবন্দরে আটকে আছি, কি যে দূর্বিসহ অবস্থা কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। এ অবস্থায় কবে ঢাকায় আসতে পারবো সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন যাপন করছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আটবার তার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ফ্লাইট কখন ছেড়ে যাবে সেটির কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ফ্লাইট ছিল তার। কিন্তু তিনি বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ফ্লাইটে উঠতে পারেননি। মঙ্গলবার দুপুরে বিমানবন্দরে যাবার পর তিনি ১৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। ফ্লাইটের কোনো নিশ্চয়তা না পেয়ে এন্ট্রি ভিসা নিয়ে তিনি শহরের ভেতরে গেছেন। কারণ, এয়ারপোর্টের ভেতরে কোনো হোটেলে কক্ষ খালি নেই।

তার বর্ণনা অনুযায়ী, হাজার হাজার যাত্রী দুবাই এয়ারপোর্টের ভেতরে আটকা পড়ে আছে। অনেকে শ্লোগান দিচ্ছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রাত-দিন কাজ করেও কূলকিনারা করতে পারছে না। পুরো ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, বলেও জানান তিনি।ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে যারা বুধবার দুবাইতে অবতরণ করেছেন তাদের অভিজ্ঞতা ছিল দুর্বিষহ। অবতরণ করার জন্য বিমানগুলো ঘটনার পর ঘণ্টা আকাশে চক্কর দিলেও অবতরণের অনুমতি পাচ্ছিল না।

বিমানবন্দরের বাইরে শতশত গাড়ি বিকল অবস্থায় পড়ে ছিল। গাড়িগুলোতে পানি ঢুকে যাওয়ায় সেগুলোর ব্রেক কাজ করছিল না। ফলে একটি গাড়ি গিয়ে আরেকটি গাড়িকে ধাক্কা মেরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। অনেক গাড়ি রাস্তায় পানির মধ্যে ডুবে ছিল।

বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় রেজাউল করিম নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, অনেকবার ফ্লাইট বাতিল হবার পর শেষ পর্যন্ত তিনি ঢাকা থেকে দুবাই পৌঁছেছেন। ঢাকায় তিনি ৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর দুবাইয়ের উদ্দেশে প্লেন ছেড়ে যায়। দুবাইতে সিনেমার মতো যাত্রা।.. এক ঘণ্টা পঞ্চাশ মিনিট প্লেনের ভেতরে বসে আছি। কারণ, কোনো গ্রাউন্ড সার্ভিস নেই,” লিখেছেন রেজাউল করিম।

তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আকিব ইরফানের। তার স্ত্রী দুবাই থেকে ঢাকা আসার কথা ছিল। একদিন অপেক্ষা করার পর শেষ পর্যন্ত তিনি ঢাকার উদ্দেশে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটে উঠতে পেরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ফ্লাইট কনফার্ম না হলে কাউকে বিমানবন্দরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। কারণ, ভেতরে যাত্রীদের এতো বেশি চাপ তৈরি হয়েছে যে আর যাত্রী ভেতরে নেয়া সম্ভব ছিল না।

দুবাই বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন ব্রিটিশ টুরিস্ট অ্যান উইং, তার স্বামী ও তিন সন্তান। তারা লন্ডনের হিথ্রোতে যাবার জন্য অপেক্ষা করছেন।এটা খুব ভয়াবহ পরিস্থিতি। আমদের পশুর মতো করে রাখা হয়েছে। এটা খুবই অমানবিক, বলছিলেন অ্যান উইং। তিনি বলছিলেন, তার পরিবারের সদস্যদের কাছে কোনো খাবার নেই।বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আটকে পড়া যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে খাবার আনতে কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। কারণ, বিমানবন্দর অভিমুখে সবগুলো সবগুলো সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।