• শনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪

বেসিক ব্যাংক জালিয়াত বাচ্চু রহস্যজনকভাবে উধাও !


প্রকাশিত: ৯:২২ পিএম, ১৭ আগস্ট ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৯ বার

এস রহমান  :   বেসিক ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতির মহানায়ক আব্দুল হাই বাচ্চু অবশেষে ধরা খাচ্ছে। একই সঙ্গে তার bachu-www.jatirkhantha.com.bdসহযোগী ৬৮ কর্মকর্তাকেও চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি।তবে বাচ্চুকে ধরতে যে জাল বিছানো হয়েছে তা থেকে সে ইতিমধ্যে ফসকে গেছে বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে। কারণ, বাচ্চুকে দেশে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। রহস্যজনকভাবে উধাও বাচ্চু এখন কোথায় তাকে খুঁজছে গোয়েন্দারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী চাঞ্চল্যকর ঋণ কেলেংকারির সঙ্গে সম্পৃক্ত। পাশাপাশি নানা অনিয়মের সঙ্গে আরও ৫৫ জন জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসিক ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

পাশাপাশি অন্যান্য দায়ী ব্যক্তিকে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। এছাড়া ঋণ অনিয়মের অভিযোগে দুর্র্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৫৬ মামলায় ব্যাংকটির ২৭ জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সাবেক চেয়ারম্যান ও টপ ম্যানেজমেন্টকে বিচারের আওতায় আনতে দুদকের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়মের নথি সরবরাহ করা হয়েছে। আর দুদক প্রাথমিক তদন্ত শেষে ১২০ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করেছে ৫৬টি মামলা। যার মধ্যে আসামি হিসেবে আছেন ২৭ জন বেসিক ব্যাংক কর্মকর্তা। ইতিমধ্যে দুদক ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের ৩ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকি দু’জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বেসিক ব্যাংকের অনিয়মের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা সংসদীয় কমিটি জানতে চেয়েছে। কারণ এখন পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সুপারিশ করা হবে।

জানা গেছে, এর আগে বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম, দুর্নীতি ও নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত দোষীদেরসহ সাবেক চেয়ারম্যান ও শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করে এই সংসদীয় কমিটি।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বেসিক ব্যাংকের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি ছাড়াও ভুয়া সনদ দেখিয়ে চাকরি নিয়েছেন ৪০ জন এবং অন্যান্য অনিয়মের সঙ্গে জড়িত আছেন ১৫ জন। তবে ঋণ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে মোট ৬৮ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে শনাক্ত করা হয়েছে।

এর মধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় ৪৯ জনকে, সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ১১ জন ও অপসারণ করা হয় ৪ জনকে। এছাড়া ৩ জনের বিরুদ্ধে দাখিল করা হয়েছে অভিযোগপত্র এবং আর একজনকে অবসায়ন করা হয়। তবে এসব শাস্তিমূলক পদক্ষেপের বাইরে রয়েছেন প্রধান হোতা বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু।

জানা গেছে, বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেংকারি, অবৈধ নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায় নির্ধারণের জন্য ব্যাংক নিজস্বভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপকদের সমন্বয়ে এ কমিটির সুপারিশে দায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নেয়া হয় এ ব্যবস্থা।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে অডিট ফার্ম মেসার্স এসএফ আহমেদ অ্যান্ড কোং এবং মেসার্স ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনারস রিপোর্ট দাখিল করে। ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্টে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

পাশাপাশি সাবেক ব্যাংক পরিচালকরা ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততার সন্ধানও পাওয়া গেছে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই রিপোর্ট পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মূল হোতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অনিয়মিতভাবে আইনি বিল পরিশোধের জন্য বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তিনজন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুস সোবহান, রুহুল আলম ও মো. সেলিম এবং একজন মহাব্যবস্থাপক মাহবুব আলমকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এছাড়া ব্যবস্থাপনা কর্তৃক গঠিত কমিটি দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত অন্য কর্মকর্তা ও নির্বাহীদের দায়-দায়িত্ব শনাক্ত করার বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন। বিশেষ করে ঋণ অনিয়ম, অবৈধ নিয়োগ ও অনিয়মিতভাবে পদোন্নতির জন্য দায়ীদের শনাক্তের ব্যাপারে কাজ করছে কমিটি।

পাশাপাশি ২০১০-১৪ সাল পর্যন্ত এই ৫ বছরে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হলে নেয়া হবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা।

অডিট রিপোর্টে বিপুল অংকের ঋণ প্রদানে অনিয়মের জন্য তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক, রিলেশনশিপ ম্যানেজার, প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি, ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্যাংকের এমডি ও তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের দায়ী করা হয়েছে। তবে এদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।