তারেক ও আরিফের বিরুদ্ধে দালিলিক প্রমাণ মিলেছে
সটাফ রিপোর্টার: ৩০ মে ২০১৪:
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলায় র্যাব-১১-এর সাবেক দুই কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ ও মেজর (অব.) আরিফ হোসেনকে আবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এর আগে দুই দফায় ১৩ দিনের রিমান্ডে ছিলেন এই দুজন৷
দ্বিতীয় দফায় আট দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল শুক্রবার বিকেলে এই দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে আরও সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ৷ তাতে বলা হয়, সাত খুনের ঘটনায় তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেনের জড়িত থাকার দালিলিক প্রমাণ মিলেছে৷ শুনানি শেষে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম এইচ এম শফিকুল ইসলাম আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড চেয়ে আদালতে দেওয়া পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, র৵াব-১১-এ কর্মরত থাকাকালে লে. কর্নেল তারেক ও মেজর আরিফ হোসেনের সঙ্গে সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সখ্য গড়ে ওঠে। নূর হোসেন অপহরণ, গুম, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। তিনি ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের গডফাদার। নূর হোসেনের এসব অপরাধে র৵াবের এসব কর্মকর্তাও জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং তাঁরা এ থেকে সুবিধাভোগী।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়৷ এরপর লাশের পেট কেটে ইট বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়৷ ৩০ এপ্রিল ছয়জনের ও পরদিন একজনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে৷ এ ঘটনায় ইতিমধ্যে দুজন প্রত্যক্ষদর্শী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক দালিলিক প্রমাণ মিলেছে যে লে. কর্নেল তারেক ও মেজর আরিফ এই ঘটনায় জড়িত৷ সর্বশেষ আট দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য অধিকতর যাচাই-বাছাই করতে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ কারণে এই দুই আসামিকে আরও সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন৷
রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান আদালতকে বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, রিমােন্ড আসািমরা সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সিদ্ধিরগঞ্জের গডফাদার নূর হোসেনের সঙ্গে সখ্যের কারণে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকােণ্ড র৵াবের সাবেক এই কর্মকর্তারা জড়িয়ে পড়েন৷ তা ছাড়া সাতজনের লাশের সঙ্গে যে ইট পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলো র্যাব-১১-এর প্রধান কার্যালয়ের অদূরে স্তূপ করে রাখা ছিল। ইটগুলো যে বস্তায় ভরে লাশের সঙ্গে বাঁধা ছিল, সে বস্তাগুলো র৵াব সদস্যদের দেওয়া সরকারি রেশনের বস্তা। আর যে দড়ি দিয়ে ইট বাঁধা হয়েছিল সেই দড়িও র্যাব ব্যবহার করে। দড়ি বাঁধার যে কৌশল ছিল, তা কোনো সাধারণ সন্ত্রাসীর পক্ষে করা সম্ভব নয়। প্রশিক্ষণ ছাড়া এ ধরনের গিঁট দেওয়া অসম্ভব।
আইনজীবী সাখাওয়াত আরও বলেন, এ মামলাটি এখন আর নারায়ণগঞ্জে সীমাবদ্ধ নেই। এটি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
এ সময় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি ফজলুর রহমান আদালতকে বলেন, সাতজনকে অপহরণের পর খুনের সঙ্গে অন্য যাঁরা জড়িত তাঁদের শনাক্ত করার জন্য আসামিদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। তাই তদন্তের স্বার্থেই রিমান্ড মঞ্জুর করা দরকার৷
দুই আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। লে. কর্নেল (অব.) তারেক নিজেই আদালতে বক্তব্য দেন। তিনি দাবি করেন, এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় প্রজন্মের কর্মকর্তা। তাঁর বাবাও সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রয়োজন হলে রিমােন্ড নেওয়া হোক আপত্তি নেই। আমিও চাই তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করা হোক। ’
মেজর আরিফ আদালতে কোনো কথা বলেননি। তবে তিনি আদালতে আসার পর থেকেই বারবার চারদিকে তাকাচ্ছিলেন। তাঁকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।