বেপরোয়া ছাত্রদল-গ্রেপ্তার নেতাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশে হামলা
বিশেষ প্রতিনিধি : বেপরোয়া ছাত্রদল-গ্রেপ্তার নেতাকে ছিনিয়ে নিতে এবার পুলিশের ওপর হামলা করেছে। পুলিশ বলেছে, রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় গ্রেপ্তার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে মিথুনকে (৩৫) ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা করেছেন তাঁর অনুসারীরা। হামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার (এসি) তারিক লতিফসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভোরে রাজধানীর নিউমার্কেট থানার সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের শেষ প্রহরে সহকারী কমিশনার তারিক লতিফের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়ক এলাকা থেকে মোহাম্মদ হোসাইনকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানা-পুলিশ। পরে শুক্রবার সকালে আসামিকে নিয়ে নিউমার্কেট থানায় প্রবেশের সময় হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা হয়েছে।
এসব ঘটনার আগে ১০ জানুয়ারি রাতে এলিফ্যান্ট রোডের বিপণিবিতান মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে ওই বিপণিবিতানের ব্যবসায়ী এহতেশামুল হককে কুপিয়ে জখম করা হয়। এহতেশাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে যখন কোপানো হয়, তখন আরেক ব্যবসায়ী ওয়াহিদুল হাসানের (দিপু) গাড়িতে হামলা হয়। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন রিমান্ডে জানিয়েছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হাসান ওরফে ইমনের হয়ে ধানমন্ডি এলাকার চাঁদা তোলার কাজ করেন মোহাম্মদ হোসাইন। ব্যবসায়ীকে কোপানোর সময় তাঁকে (রিমান্ডে থাকা আসামি) ঘটনাস্থলে যেতে বলেছিলেন ওই ছাত্রদল নেতা। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া সেই তথ্যের ভিত্তিতেই ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ হোসাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওমর ফারুক বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বশির ইসলাম (২৮), মোহাম্মদ হাসান (২১), মোহাম্মদ ইমন (২৫), মাসুম মাহমুদ (৩২), মোহাম্মদ আলামিন (৩০) ও আকবর আলী (২১)। এ ছাড়া ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে মিথুনকেও এ মামলার আসামি করা হয়েছে।
মোহাম্মদ হোসাইনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার ভোর চারটার দিকে তাঁকে বহনকারী পুলিশের গাড়ি নিউমার্কেট থানায় প্রবেশকালে চাপাতিসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে গাড়িটির গতি রোধ করেন আসামিরা। পরে মোহাম্মদ হোসাইনের অনুসারীরা লাঠি, লোহার রড ইত্যাদি নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেন। এতে নিউমার্কেট জোনের এসি তারিক লতিফ, এসআই আরব আলী, এসআই ফিরোজ আহমেদ ও খন্দকার মেসবাহ এবং বার্তা অপারেটর মো. আনোয়ার গুরুতর আহত হন।
নিউমার্কেট থানার ওসি মোহসিন উদ্দিন দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় মোহাম্মদ হোসাইনসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত ব্যবসায়ীকে কোপানোর মামলায় মোহাম্মদ হোসাইনকে এক দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বশির ইসলামকেও এক দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে বলে ওসি জানিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান রাসেলকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে ছাত্রদল। আজ সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক ওই দুই নেতার সঙ্গে কোনো ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখতে সংগঠনের নেতা–কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।