বেওয়ারিশ কুকুরের তান্ডব
বিশেষ প্রতিনিধি : রাজধানীতে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব অস্বাভাবিক বেড়েছে। দলবেঁধে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো এসব কুকুর মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি করে। বিশেষ করে জরুরি প্রয়োজনে খুব ভোরে ও বেশ রাতে রাস্তায় বের হওয়াটাই দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নগরীর ভেতরের রাস্তা ও অলিগলি দাপিয়ে বেড়ানো এসব কুকুর প্রায়শই সামনে যাকে পায় তাকেই কামড়ানোর চেষ্টা করে। দীর্ঘদিন ধরে সরকারিভাবে কুকুর বন্ধ্যাকরণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি এখন আরো ভয়াবহ। উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে দুই সিটি কর্পোরেশন বেওয়ারিশ কুকুর নিধনও করতে পারছে না। সম্প্রতি ডেমরা এলাকায় মাহিনুর নামে পাঁচ বছরের একটি শিশু কুকুরের আক্রমণে মারাত্মক আহত হয়। একদল পাগলা কুকুর বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুটির ওপর হামলে পড়ে তাকে ক্ষতবিক্ষত করে। শিশুটির আর্তচিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে কুকুরগুলোকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে শিশুটিকে রক্ষা করেন। গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। গত ১ জুলাই গুলশানের শহীদ ফজলে রাব্বি পার্কে পাগলা কুকুরের কামড়ে কয়েকজন আহত হলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন পার্কটি বন্ধ করে দেয়। পরে কুকুরের উৎপাত কমলে ৭ জুলাই পার্কটি আবার চালু করা হয়।
আগে কুকুরের পিক ডেঞ্জার সিজন (ভাদ্র-আশ্বিন মাস) শুরু হওয়ার আগে সিটি কর্পোরেশন অভিযান চালিয়ে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করতো। কিন্তু ২০১২ সালে উচ্চ আদালত নির্বিচারে কুকুর নিধন অমানবিক উল্লেখ করে তা বন্ধের নির্দেশ দেন। তখন বিকল্প হিসেবে কুকুর বন্ধ্যাকরণের ঘোষণা দেয় সরকার। এজন্য ২০৩০ সাল মেয়াদ পর্যন্ত এক প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এর মধ্যেই ২০১৯ সালে প্রাণিকল্যাণ আইনও করা হয়। তবে করেনার মধ্যে বন্ধাত্বকরণ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর স্বাভাবিক সময় এলেও সেই কার্যক্রম আর এগোয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসেবে, ২০২৩ সালে সারাদেশে ছয় লাখের বেশি মানুষ কুকুরের কামড় খেয়ে জলাতঙ্ক রোগের টিকা নিয়েছে। আগের বছর এই সংখ্যা ছিলো পাঁচ লাখের কম। আর এই দুই বছরে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৮৬ জন। আর ২০১২ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে জলাতঙ্ক রোগে মোট মারা গেছে ৭৭১ জন। ২০১০ সালের আগে জলাতঙ্ক রোগে প্রতিবছর আড়াই হাজারের মতো মারা যেতো। সরকারের নানা উদ্যোগে জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যুও সংখ্যা কমেছে।
দেশে সংক্রামক রোগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে কুকুর-বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণির কামড়ে আহত হয়ে ২০২৩ সালে ৮৯ হাজার ৯২৮জন চিকিৎসা নিয়েছেন।ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-৪ এর ভেটেরিনারি সার্জন শরণ কুমার সাহা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের অধীনে কুকুর বন্ধ্যাকরণ করা হয়। তবে গত অর্থবছর থেকে এটি বন্ধ রয়েছে। তবে যে কোনো স্থানে কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেলে আমরা সেখানে কার্যক্রম চালাই।