• বুধবার , ২০ নভেম্বর ২০২৪

বুদ্ধিজীবী খুনী আশরাফ-মুঈনুদ্দীন বহাল তবিয়তে


প্রকাশিত: ৮:৫৬ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ১৭ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২২৮ বার

বিশেষ প্রতিনিধি :  বুদ্ধিজীবী খুনী আশরাফ-মুঈনুদ্দীন এখনও কেন বহাল তবিয়তে? এ প্রশ্ন এখন বাঙ্গালী জাতির। অভিযোগ করা হয়েছে, বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত দুই Buddijibi mardarer-www.jatirkhantha.com.bdআসামিকে ফিরিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা কূটনৈতিক তৎপরতার কথা বললেও মূলত বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই।বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার রায়ে আলবদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।

দু’জনই বর্তমানে বিদেশে পালিয়ে আছেন।চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জাতিরকন্ঠকে বলেন, ‘আমাদের সব প্রক্রিয়া চলছে। শুধু বুদ্ধিজীবী নয় ও বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াও চলছে। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

মুক্তিযোদ্ধাসহ বিশিষ্টজনরা জানান, কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত থাকার কথা বললেও পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এক্ষেত্রে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার কথা বলছে তারা। স্বাধীনতার পরপরই বুদ্ধিজীবী হত্যার দুই আসামি বিদেশে পালিয়ে যান।জানা যায়, মুঈনুদ্দীন বর্তমানে যুক্তরাজ্যে আছেন। তিনি সেখানে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মুসলিম স্পিরিচুয়াল কেয়ার প্রভিশনের পরিচালক। অন্যদিকে আশরাফুজ্জামান থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। তিনি সেখানে ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকার (আইসিএনএ) শুরা সদস্য।

সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সহ-সভাপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদ জাতিরকন্ঠকে বলেন, ‘পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কোনো উদ্যোগ আমরা দেখছি না। আমরা ওদের (মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান) ফিরিয়ে আনার দাবি করে যাচ্ছি আর সরকার বলছে উই আর ওয়ার্কিং।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিকে ব্রিটেন থেকে তাদের ফিরিয়ে আনতে সমস্যা ছিল, কারণ আদালতের রায়ে শাস্তি না হলে তারা ফেরত দেয় না। কিন্তু মুঈনুদ্দীন তো সর্বোচ্চ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত। তবে যুক্তরাজ্য আবার মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না। তবে আমরা তো কম্প্রোমাইজ করব না।’

আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় বাস্তবায়ন করতে সরকারের সবটুকু সামর্থ্য কাজে লাগানোর দাবি জানিয়ে বীর প্রতীক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘সরকারের তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ম্যান্ডেট আছে। সেটা ব্যবহার করতে পারে। তাদের ফিরিয়ে আনতে আলোচনার জন্য সরকার প্রয়োজনে উচ্চ পর্যায়ে প্রতিনিধি দল পাঠাতে পারে। সেখানে রাজনৈতিক নেতা, বিচারকসহ অন্যান্যরা থাকবেন। তবে অবশ্যই ইতিবাচক ফল আসবে।

কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র।’ স্বাধীনতার ২৫ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ১৯৯৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনায় রমনা থানায় প্রথম মামলা করা হয়। ওই হত্যা মামলায় আলবদর বাহিনীর চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানকে আসামি করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিনের বোন ফরিদা বানু।

নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে অবশেষে শেষ হয় মামলাটি। ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলায় দুই জনের বিরুদ্ধে আনা ১১টি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলায় একাত্তরে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল ১১টি অভিযোগে।

২৫ মার্চের কালরাত্রে পাকিস্তানিদের অতর্কিত হামলার শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বরের চূড়ান্ত বিজয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পাক-হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-সামস বাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দিতে ষড়যন্ত্র করছিল। এজন্য তারা দেশের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা মূলত ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সংঘটিত হলেও সারা বছরব্যাপী তা বিস্তৃত ছিল।১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতার মাত্র দুই দিন আগে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয় ৯৯০ জন প্রখ্যাত শিক্ষক, ১৩ জন সাংবাদিক, ৫০ জন চিকিৎসক, ৫০ জন আইনজীবী ও ১৮ জন লেখক, প্রকৌশলীসহ অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের।

হত্যার শিকার বিশিষ্টজনদের মধ্যে রয়েছেন- সিরাজুদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, শহীদুল্লা কায়সার, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক সিরাজুল হক খান, ড. মো. মুর্তজা, ড. আবুল খায়ের, ড. ফয়জুল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, জহির রায়হান, আলতাফ মাহমুদ, অধ্যাপক ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরীসহ আরও অনেকে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের মরদেহ পরে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে পাওয়া গেছে, কয়েকজনের মরদেহ পাওয়া যায়নি।

এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষে ছিলেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। আর তাকে তালিকা প্রস্তুতে সহযোগিতা ও হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের পেছনে ছিল মূলত জামায়াতে ইসলামীর গঠিত কুখ্যাত আল বদর বাহিনী। বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান ঘাতক ছিলেন বদর বাহিনীর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান। ১৬ ডিসেম্বরের পর আশরাফুজ্জামানের নাখাল পাড়ার বাড়ি থেকে তার একটি ব্যক্তিগত ডায়েরি উদ্ধার করা হয়, যার দুটি পৃষ্ঠায় প্রায় ২০ জন বুদ্ধিজীবীর নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কোয়ার্টার নম্বর লেখা ছিল।