বি–চৌধুরী’র নতুন মিশন কার স্বার্থে-বিএনপিকে ডোবাবে না ভাসাবে—
কারনাইন.ঢাকা: বি–চৌধুরী’র নতুন মিশন কার স্বার্থে-বিএনপিকে ডোবাবে না ভাসাবে— ।বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, বর্তমানে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে (বি.চৌধুরী) ঘিরে নতুন করে রহস্য সৃষ্ঠি হয়েছে বিএনপিতে।প্রশ্ন তোলা হয়েছে তিনি বিএনপিকে ভাসাবেন না ডোবাবেন? বি. চৌধুরীর উদ্যোগে জিয়ার আদর্শে নতুন একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গঠনের চেষ্টা চলছে- রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন খবর রয়েছে। যা বিএনপি নীতি-নির্ধারকদের দুর্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
নতুন এই প্ল্যাটফরমে জামায়াতে ইসলামী বাদে ২০-দলীয় জোটের অন্তত ১২টি রাজনৈতিক দল থাকছে। এ ছাড়া বিএনপির সংস্কারবাদী ধারা ও বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি ক্ষুব্ধ ও হতাশ অংশটিও থাকতে পারে। যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ার রয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। দেখা যেতে পারে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোটকেও। এ ছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী যুক্ত হতে পারেন এ প্রক্রিয়ায়।
নতুন এ প্ল্যাটফরম তৈরির উদ্যোক্তাদের অভিমত বিএনপিতে দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ নির্বাসিত। দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী ও লাখ লাখ সমর্থক জিয়ার ভাবমূর্তি ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শে উজ্জীবিত। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও তাদের মতে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ এ নেতার মুক্তিদ্ধুদ্ধের বীরত্বও আজ ম্লান হতে বসেছে। দলটির অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধের চর্চার পরিবর্তে রাজাকারদের পৃষ্ঠপোষকতার মানসিকতা বিরাজ করছে- যা দেশে বিদেশে দলটির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে দরকার ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব। এমন চিন্তা থেকেই জোট বাঁধছেন দেশের রাজনীতির এ বাঘা নেতারা। এ অবস্থায় হালে পানিও পাচ্ছে বি. চৌধুরীর উদ্যোগ।
উদ্যোক্তারা আরো মনে করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলায় সাজা পেয়ে নির্বাচনে অযোগ্য হওয়া সময়ের ব্যাপার। এমন ঘটনা যদি সত্যিই ঘটে, তাহলে দলটিকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার মতো গ্রহণযোগ্য নেতা দলটিতে নেই। এ জন্য বিকল্প নেতৃত্ব দরকার। উদ্যোক্তাদের মতে, বি. চৌধুরী এখন বিকল্পধারার সভাপতি হলেও তিনিই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলটির প্রতিষ্ঠার দিন থেকে তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করলে দলের সিনিয়র অনেক নেতা এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দিলেও তিনি থেকে যান খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিতে।
দেশের একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক হিসেবে তার যেমন সুখ্যাতি রয়েছে তেমনি রাজনীতিক হিসেবেও পরিপক্বতার সাক্ষর রাখেন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি হন জাতীয় সংসদের উপনেতা। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর হন দেশের ষোড়শ রাষ্ট্রপতি। অবশ্য বিএনপির তখনকার নেতা ও জিয়া পরিবারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি থেকে ২০০২ সালের ২১ জুন তাকে রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে হয়। পরে ২০০৪ সালে গঠন করেন বিকল্পধারা বাংলাদেশ। অবশ্য ২০০৬ সালে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বিএনপি থেকে বের হয়ে এলে তাকে নিয়ে গঠন করেন এলডিপি। বি. চৌধুরী দলটির চেয়ারম্যান হন। কর্নেল অলি হন কো-চেয়ারম্যান। কিছুদিনের মাথায় ভুল বোঝাবুঝি থেকে আবার ফিরে আসেন বিকল্প ধারায়।
বি. চৌধুরীর ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, তার এই বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে বিএনপিতে তৈরি হয় নানা ভক্ত অনুরাগী। যাদের অনেকেই এখনো বিএনপির নেতৃত্বে রয়েছেন। সেসব ভক্ত-অনুরাগী আর বিকল্প ধারার নেতাকর্মীদের একান্ত ইচ্ছায়ই নতুন এ প্ল্যাটফরম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
উদ্যোক্তাদের ধারণা, মামলা ও বয়সসহ বিভিন্ন কারণে খালেদা জিয়া কত দিন বিএনপির নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন এ নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। এ ছাড়া লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান মামলা মোকাবেলা করে আদৌ দেশে ফিরতে পারবেন কিনা এ নিয়েও রয়েছে সংশয়। এ কারণে বিগত দুটি আন্দোলনে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার ডাকে তেমনভাবে সাড়া দেয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। দুই দফা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে খালেদা জিয়া দলকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। তার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলটি পড়েছে বেকায়দায়। এখন সংসদেও নেই আন্দোলনেও নেই বিএনপি।
এমন প্রেক্ষাপটে ইতোমধ্যেই বি. চৌধুরীর পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল বাছাই করা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে। বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা হয়েছে তাদের। এদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা রয়েছেন। পরিস্থিতি বুঝে তারা সংকেত দেবেন বলে প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেছেন। বিএনপির আগামী কাউন্সিলের পরেই এ বিষয়ে সবুজ সংকেত দেবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এসব নেতা। অবশ্য কোনো কোনো নেতা বি. চৌধুরী সাচ্ছা জাতীয়তাবাদী চেতনা থেকে এমন উদ্যোগ নিচ্ছেন, না তার পেছনে সরকারের কলকাঠি রয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করছেন।
অবশ্য বি. চৌধুরীর ভূমিকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কীভাবে নিচ্ছেন তাও বিবেচনায় নিয়েছেন দলের বর্তমান নেতৃত্ব। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বি. চৌধুরীকে প্রধান অতিথি করা হলেও আগামী ৬ জুলাই বিকল্পধারার ইফতার পার্টিতে খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সে ইফতারে তিনি যাবেন কি না, সেটা দেখার অপেক্ষা করছেন বিএনপির অনেক নেতা।
এ বিষয়ে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, কোনো জোটে নয়, আগে আমাদের দলকে শক্তিশালী করা দরকার। দল শক্তিশালী হলে আমরা জনগণের দাবি নিয়ে রাজপথে নামতে পারব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ষড়ষন্ত্র চলছে। যতই ষড়ষন্ত্র হোক যারা জিয়াউর রহমানের আদর্শকে লালন করেন সেই বিএনপিকে কখনো ধ্বংস করা যাবে না, সম্ভবও নয়। তিনি বলেন, দলের মধ্যে থেকে যারা ষড়ষন্ত্র করছেন তাদের চিহ্নিত করতে হবে। আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরো বলেন, বিএনপির ভয়ের কিছু নেই। ফিনিক্স পাখির মতো বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবেই।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, সরকার স্বস্তিতে থাকার জন্যই বিএনপির মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করতে চায়। তিনি বলেন, সরকার স্বস্তিতে নেই। কারণ, তারা জানে তারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে। তাই ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধবংস করতে চায়। জনগণের বিএনপিকে ধবংস করতে চায়। আর এ জন্যই বিএনপিতে বিভ্রান্তি ও বিভেদ সৃষ্টি করতে নানা ধরনের কল্পকাহিনী তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যতই কল্পকাহিনী তৈরি করা হোক কোনো লাভ হবে না। বিএনপিকে ভাঙা যাবে না। কারণ, বিএনপি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে।